জেলবন্দি ইমরান খান যেভাবে নির্বাচনে জেতার পরিকল্পনা করছেন : বিবিসি

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এখন কারাগারে—ইমরান খান এবং তাঁর দল এমন নাটকীয়ভাবে তাদের রাজনৈতিক জৌলুস হারিয়েছে। তবে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই বলেছে, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা বিভিন্ন মামলায় জেলে থাকলেও তারা আসছে সাধারণ নির্বাচনে জিততে পারবে। কঠিন এই পরিস্থিতিতেও পিটিআই তাদের বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হয়নি।

তবে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে সব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এভাবে একাধিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। কর্তৃপক্ষের দমনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পিটিআই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে।

 

নতুন প্রার্থী
দলটির মধ্যে নতুন প্রার্থী রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই একদমই নতুন। পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট শহরের রাস্তায় রেহেনা দার নির্বাচনী প্রচারণায় নামলে তাঁর পেছনে মানুষের ভিড় জমে যায়।

শহরটির অলিগলিতে, এমনকি প্রতিটি কোনা তাঁর ছবিযুক্ত পোস্টারে ছেয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাঁর সামনে ড্রাম বাজিয়ে পথ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে আর ওপর থেকে তাঁর দিকে অবিরত গোলাপের পাপড়ি ঝরছে।

 

 

সত্তরের কোটায় বয়সে রেহানা দারের অপ্রত্যাশিতভাবে একজন রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা বেশ অবাক করা হলেও বিষয়টি এক সেকেন্ডের জন্যও তাঁর চেহারায় ফুটে ওঠেনি। যে ভয়ে তাঁর অনেক সহকর্মী প্রার্থী গাঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ড বা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, রেহেনা দারের মধ্যে তাঁর ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘ভাবতেই ভালো লাগছে যে আমার শহর শিয়ালকোটের গর্বিত ছেলে-মেয়ে, ভাই ও মায়েরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।’ এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জোর গলায় তিনি কথাগুলো বলেছেন, যা দেখে মনে হয়েছে তিনি বছরের পর বছর ধরে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন।

 

তিনি আরো বলেন, ‘আমি ইমরান খানের সঙ্গে আছি এবং ইমরান খানের সঙ্গেই থাকব। যদি আমাকে জনসমক্ষে একা ছেড়ে দেওয়া হয়, তবু আমি ইমরান খানের পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামব।

 

চারপাশের এক ঝলকেই বলা যায়, তাঁর বলা কথাগুলো সত্য। রেহেনা দার তাঁর চারপাশে জড়ো হওয়া মানুষের ভিড়ের মধ্যে ইমরান খানের একটি ছবি উঁচু করে তুলে ধরেছেন। তাঁর মাথার ওপরে উড়ছে পিটিআইয়ের পতাকা, যদিও এখনো তিনি পিটিআই প্রার্থী নন।

নির্বাচনে বাধা
নির্বাচন কমিশন পিটিআইয়ের ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিনি অন্যান্য প্রার্থীর মতো মূলত একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। এটি আদতে বেশ ছোট সিদ্ধান্ত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যে দেশে নিরক্ষরতার হার ৫৮ শতাংশ, যেসব প্রার্থীদের ব্যালট পেপারে নিজেদের স্বীকৃত প্রতীক আছে তাঁদের জন্য বিষয়টি বেশ জটিল।

এখন প্রতিটি প্রার্থীর নিজস্ব বিকল্প প্রতীক রয়েছে। রেহেনা দারের প্রতীক হলো বেবি কট। অন্য প্রার্থীরা কেটলি থেকে স্যাক্সোফোন (বাদ্যযন্ত্র) পর্যন্ত বিভিন্ন আইটেম প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ পেয়েছেন।

এটি হচ্ছে অগণিত বাধাগুলোর মধ্যে একটি, যা পিটিআই ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের সামনে এসেছে। কিন্তু দলটি তাদের লড়াই চালিয়ে গেছে। যেমন রেহেনা দারের মতো প্রার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন।

প্রযুক্তির মাধ্যমেও তাদের এই লড়াই চলছে, যা একজন নেতাকে জেলের কয়েদখানা থেকে সমাবেশের সামনে নিয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো এটাই প্রমাণ করে, তারা এ লড়াইয়ে সব কিছু করতে ইচ্ছুক।

গত নির্বাচনের সময় রেহেনা দারের ছেলে উসমান শিয়ালকোটের মধ্য দিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি একজন জ্যেষ্ঠ পিটিআই নেতা ছিলেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অধীনে যুব বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু অক্টোবরের শুরুতে তাঁর পরিবারের মতে, তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ থাকার পর, তিনি টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে বলেছেন, ইমরান খান ‘৯ মে দাঙ্গার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন’।

এরপর দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যার মধ্যে কিছু বিক্ষোভ বেশ সহিংস হয়েছিল। গত বছর ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পর এমন সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। লাহোরের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার বাসভবনসহ সামরিক ভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খানের শত শত সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। ইমরান খানকে মুক্তি দেওয়া হলেও তাঁর দলের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত ছিল।

বিক্ষোভের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ এবং কয়েক মাসে পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন রাজনীতিক দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, আবার অনেকে রাজনীতি থেকেই সম্পূর্ণভাবে সরে দাঁড়ান। তাঁদের মধ্যে দলেন অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাও ছিলেন। কর্তৃপক্ষ যুক্তি দিয়েছে, তাঁদের পদত্যাগের ঘটনা এটাই ইঙ্গিত করে, ইমরান খানের পুরানো সমর্থকরা এমন সহিংসতার দায় নেওয়া দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না।

পিটিআই বলেছে, তাঁরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। বরং তাঁদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

তবে সত্য যা-ই হোক, রেহেনা দার কোনোটা নিয়েই খুশি ছিলেন না। তিনি বলেছেন, ‘যখন উসমান দার তার বিবৃতি দিয়েছিলেন, আমি তাতে রাজি হইনি। আমি তাকে বলেছিলাম, এর চেয়ে আমার ছেলে মারা গেলে ভালো হতো। তুমি মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছ।’

রেহেনা দার যেভাবে প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন, এমনটা করা পিটিআইয়ের সব প্রার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়। কয়েকজন প্রার্থী কারাগারে থাকার পরও প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। যদিও তাঁরা কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত না, তবে তাঁরা কারাগারের ভেতর থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন। অন্যরা পুলিশকে পুরোপুরি এড়িয়ে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁদের প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আত্মগোপনে থেকেও প্রচারণা
আতিফ খান পাকিস্তানের উত্তরে খাইবারপাখতুনখোয়ায় প্রাদেশিক মন্ত্রী ছিলেন। এখন নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি ভিডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে তিন মিটার পর্দায় সবার সামনে হাজির জন। তাঁর দল এই ভিডিও স্ক্রিন সারা শহর ঘুরিয়ে, শহরের চত্বরে এনে প্রদর্শন করে। সেখানে জড়ো হওয়া পিটিআই সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এই ভিডিও সম্প্রচার করা হয়। তিনি বলেন, ভোটারদের কাছে তাঁর বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এটাই একমাত্র উপায়। কারণ তিনি মে মাস থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, তিনি একজন ওয়ান্টেড ব্যক্তি, অর্থাৎ তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে আতিফ খান বিশ্বাস করেন, তিনি সুষ্ঠু বিচার পাবেন না। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা, ভিড়ের মধ্যে নয়, মঞ্চে নয়, মানুষের মধ্যে নয়, তবে আমরা দল পরিচালনার চেষ্টা করছি। পিটিআইয়েরর সবচেয়ে বড় সমর্থন হলো তরুণ ভোটাররা। তাঁরা ডিজিটাল মিডিয়া, মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন, তাই আমরা ভেবেছিলাম এর মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে আরো বেশি জড়িত হওয়া উচিত। এটাই একমাত্র কাজ, আমরা ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারি।’

এবারের নির্বাচনে পিটিআইয়ের প্রচারণার জন্য প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পার্টির অফিশিয়াল এক্স, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটক পেজগুলোর প্রতিটিতে কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। যা কিনা অন্য দুটি প্রধান দল—পাকিস্তান পিপলস পার্টি-পিপিপি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ, নওয়াজ-পিএমএল’এন-এর চেয়েও বেশি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
এই তিনটি দলের মধ্যে ইমরান খান একমাত্র নেতা, যার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওই তিনটি প্ল্যাটফরমে একটি করে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যার অর্থ তাঁর বার্তা সরাসরি মানুষের কাছে যাচ্ছে।

এ ছাড়া কোনো প্রার্থী পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী কিনা তা জানতে ভোটারদের সাহায্য করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। ক্রিকেট ব্যাটের প্রতীক ছাড়াই, পিটিআই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে, যেখানে ভোটাররা তাদের নির্বাচনী এলাকায় গেলে সংশ্লিষ্ট আসনের পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীর প্রতীক খুঁজে পাবে।

সমাবেশ আয়োজনের সময় আরেকটি সমস্যা দেখা দেয়। পাকিস্তানে রাজনীতি ব্যক্তিত্বের জৌলুসের সঙ্গে জুড়ে আছে। ক্রিকেটার-রাজনীতিবিদ ইমরান খান এমন একজন নেতা, যাঁর উপস্থিতি হাজার হাজার মানুষকে সমাবেশে আকর্ষণ করতে সক্ষম। কিন্তু গত আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে আছেন এবং এই সপ্তাহে আকাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত ও সাজা পাওয়ার পর সামনের ১৪ বছর ধরে তিনি কারাগারে থাকতে পারেন বলে মনে হচ্ছে।

পিটিআই আরো বলেছে, তারা সমাবেশ আয়োজনে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। জানুয়ারির শেষ দিকে করাচিতে শত শত পিটিআই সমর্থক সমাবেশ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পিটিআইয়ের এভাবে জনসমাবেশ করার কোনো সঠিক অনুমোদন ছিল না।

পিটিআই বলেছে, তাদের কিভাবে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রাখা হয়েছে এটি তার সর্বশেষ উদাহরণ।

বিবিসি যেসব প্রার্থীর প্রচারণাদলের সঙ্গে কথা বলেছে, তারা জানিয়েছে, তাদের সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছে। পিটিআই অভিযোগ করেছে, তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিতে তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি, অপহরণ, কারাগারে পাঠানো এবং সহিংসতা চালানো হচ্ছে।

তবে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক তথ্যমন্ত্রী মুর্তজা সোলাঙ্গি। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘হ্যাঁ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯ মের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এবং আরো কয়েকজনের গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্যান্য ফৌজদারি মামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে। তাদের (পিটিআই) অভিযোগ ভিত্তিহীন হলেও তারা তাদের ভিন্নমত এবং অভিযোগ প্রকাশ করতে স্বাধীন। গণমাধ্যম সেগুলো প্রচার করে। একই সঙ্গে তাদের কাছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ অন্যান্য আইনি বিকল্প রয়েছে।’

ভার্চুয়াল সমাবেশ
পিটিআইয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভাগের প্রধান জিবরান ইলিয়াস শিকাগোতে তাঁর দপ্তর থেকে ফোনে বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটি সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং দ্রুত কাজ করে। এর প্রভাব জনসমাবেশ থেকে কিছুটা কম হতে পারে, তবে আমরা আমাদের বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

ইলিয়াস বলেন, ‘ইমরানকে ছাড়া আমরা এর আগে কখনো কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ করিনি। তাঁকে ছাড়া কি কোনো কিছু কাজ করবে?’ তাঁরা এ নিয়ে এতটা নিশ্চিত ছিল না। সমস্যা হলো, তিনি বলেছেন, ‘মানুষ ইমরান খানের বার্তার জন্য অপেক্ষা করত’।

ডিসেম্বরে তাঁরা একটি অনলাইন সমাবেশের জন্য একটি বক্তৃতা তৈরি করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লক্সের মতে, পাকিস্তানজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফরমজুড়ে বিপর্যয় দেখা দেয়। মূলত পিটিআইয়ের সমাবেশের সময়েই এ ধরনের বিঘ্ন ঘটতে দেখা গেছে।

বিশ্লেষকদের মত
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টার থিংকট্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘পাকিস্তানের জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সক্রিয় ব্যবহারকারী৷ সুতরাং এতে এটাই স্পষ্ট হয়, পিটিআই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যত অনলাইন প্রচারণা চালাক না কেন, এর পরিসীমা সীমাবদ্ধ।’

এমনটা অবশ্য আগেও দেখা গেছে। বিশেষ করে, গত নির্বাচনের সময় যখন নওয়াজ শরিফ কারাগারে ছিলেন। কুলেগম্যান বলেছেন, ‘যদি এসব একই রকম শোনায়, তবে এর কারণ হলো, এখন কেবল খেলোয়াড়রা বদলে গেছে।’

অধিকাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতো তিনি ভাগ্যের এই পরিবর্তনের পেছনে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর হাত দেখেন, সেই একই সামরিক বাহিনী যাদেরকে অনেকেই ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার পেছনে প্রাথমিক টিকিট হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, ‘পিটিআই ২০১৮ সালে নির্বাচনী সমর্থন পেয়েছিল। এ জন্য সামরিক বাহিনী সরাসরি কলকাঠি না নাড়ালেও তারা পরিষ্কারভাবে সে সময় নির্বাচনী ব্যবস্থার সুবিধা পেয়েছিল। এখানে ব্যাপক মাত্রায় দমন-পীড়ন ও কারসাজি করা হয়েছিল। পিএমএল-এন দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় নওয়াজ শরিফের ১০ বছরের জেলের সাজা হয়।’

কুগেলম্যান মনে করেন, ওই ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ের থেকে আলাদা। ‘আমার মতে, ঘটনাপ্রবাহ একই, তবে এবারের তীব্রতা বেশি। সাম্প্রতিক নির্বাচনের তুলনায় এবারে গ্রেপ্তার ও জেলে যাওয়া নেতা ও সমর্থকদের সংখ্যা বেশি। এবার পরিবারের সদস্যরাও এতে জড়িয়ে পড়েছেন। এটি নজিরবিহীন নয়। তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনে আমরা যা দেখেছি, এবারে বিষয়টি একদমই আলাদা।’

ইমরান খানের ওপর দিয়ে যত ঘাত-প্রতিঘাত গেছে তার প্রতিটি পিটিআই তাদের নির্বাচনী প্রচারণার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তা কি কার্যকর হবে?

পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলো পিএমএল-এনের পক্ষে ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ বা পিপিপির পক্ষে বিলাওয়াল ভুট্টোর নির্বাচনী সমাবেশের খবরাখবরে ভরপুর। নির্বাচনের আগের সপ্তাহে পিটিআই যে কভারেজ পেয়েছে তা হলো তাদের প্রতিষ্ঠাতার কারাদণ্ডের বিষয়ে।

কুগেলম্যানের মতে, অনেক ভোটার মনে করতে পারে, ভোট দেওয়ার কোনো অর্থ নেই। কারণ তাঁরা মনে করে, পিটিআইয়ের জয়ের কোনো উপায় নেই।

তিনি বলেন, ‘পিটিআই নেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন হলো, ইমরান খানের সঙ্গে যা কিছু ঘটছে, তা সত্ত্বেও কিভাবে তাঁরা এত বড় একটি সমর্থন গোষ্ঠীকে বের করে আনতে পারছে এবং ভোট দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে?’

কুগেলম্যান বলছেন, পিটিআইয়ে এমন কিছু লোক আছেন যাঁরা মনে করেন, তাঁরা যদি নির্বাচন পর্যন্ত যেতে পারেন এবং ভোটারদের উপস্থিতি যদি যথেষ্ট বেশি হয় তবে তাঁরা দলের পক্ষে ভোট টেনে অলৌকিক বিজয় অর্জন করতে পারবেন।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন