জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদে তার অপকর্মের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র্যাব। অনেকটা একই ধরনের তথ্য মিলেছে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের বিরুদ্ধেও। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মামুন প্রায় ৭ বছর ধরে মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত ছিল । কক্সাবাজারের টেকনাফ থেকে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭/৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করত।
বহিরাগত হয়েও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার জানিয়ে তিনি বলেন, মামুনের ইয়াবা বিক্রির হটজোন ছিল জাবি ক্যাম্পাস, বিশেষ করে ক্যাম্পাসের বটতলায়।
আলোচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে এবং ধর্ষণের অন্যতম সহায়তাকারী মো. মুরাদকে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তারের পর মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মামুন নিয়মিত কক্সবাজার থেকে মাদক আনতেন।
তার মাদক কারবারের হট জোন ছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে বটতলা এলাকা। ক্যাম্পাসে তিনি মাদক বিক্রি ছাড়াও প্রায়শই ক্যাম্পাসে নারীদের হেনস্তা, নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানিসহ ধর্ষণে ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তবে ভুক্তভোগী অনেক নারীকে ভয়-ভীতির কারণে বিষয়টি প্রকাশ করেননি।
তিনি বলেন, মাদক কারবারি মামুন ২০১৭ সাল থেকে জাবি ক্যাম্পাসের প্রভাবশালী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে মাদক কারবার করত।
হর-হামেশাই ক্যাম্পাসে নারী নিপীড়ন ধর্ষণসহ শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িত ছিল সে।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৪ জনকে আটক করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবন্ধব, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
এরই ধারাবাহিকতায়, বুধবার রাতে র্যাব-২, র্যাব-৪ এবং র্যাব-৫ এর অভিযানিক দল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অভিযান, চালিয়ে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের মূলপরিকল্পনাকারী মো. মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন এবং অন্য একটি দল নওগাঁ সদর এলাকায় অভিযান এ ঘটনার অন্যতম আসামি মো. মুরাদকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মামুন মাঝে-মধ্যে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রীযাপন করতেন এবং অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবন করতেন। মামুনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর স্বামীর একই এলাকায় বসবাসের কারণে ৩/৪ বছর আগে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মামুন মাঝে মধ্যে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদ মিয়া ওরফে রবিনের মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করাতেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার মামুনের থাকার জায়গার সমস্যা সৃষ্টি হলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাদের বাসায় অবস্থান করবে বলে জানায়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার মামুন ভুক্তভোগীর ভাড়া করা বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় ৩-৪ মাস অবস্থান করায় ভুক্তভোগী নারীর পরিবারে সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। ঘটনার আগে মোস্তাফিজুর মামুনের কাছে অনৈতিক কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায় মোস্তাফিজুর রহমান নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছে বিধায় সে এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবে। তাই গ্রেপ্তার মামুন ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদকে মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে। ভুক্তভোগীর স্বামী গ্রেপ্তার মামুনের কথামতো ওইদিন সন্ধ্যার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করে। পরবর্তীতে মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা আরে জানায়, মামুন কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন তার ব্যবহৃত কাপড় আনতে তার স্ত্রীকে (ভুক্তভোগী) ফোন দিতে বলে। পরে ভুক্তভোগীর স্বামী তাকে ফোন করে মামুনের ব্যবহৃত কাপড় একটি ব্যাগে করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে আসতে বলে। রাত ৯টার দিকে ভুক্তভোগী তার স্বামীর কথামতো মামুনের ব্যবহৃত কাপড় একটি ব্যাগে করে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসেন। ওই সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মামুন ও মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজ কৌশলে মুরাদকে ভুক্তভোগীর স্বামী ও মামুনের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগসহ হলের ৩১৭ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে বলে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে গ্রেপ্তার মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করে। এসময় মামুন ও মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজ ভুক্তভোগীকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে জোর করে পর্যায়ক্রমে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এরপর ভুক্তভোগীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে ভুক্তভোগীর স্বামীকেও বাসায় চলে যেতে বলে।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন