নিজের পক্ষে ভোটে কারচুপির কথা বলে আসন ছাড়লেন জয়ী প্রার্থী

গত সপ্তাহে পাকিস্তানের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে একটি আসন জেতা একজন রাজনীতিবিদ তাঁর আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ভোটগ্রহণের সময় তাঁর জয়ের পক্ষে কারচুপি হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী দলের হয়ে হাফিজ নাঈম উর রহমান করাচি শহরের প্রাদেশিক বিধানসভা আসন পিএস-১২৯-এ বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এই সপ্তাহে তিনি দাবি করেছেন, ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন এবং এ জন্য তাঁদের ভোটের সংখ্যা পড়ে গেছে।

ফলে তিনি আসনটি ছেড়ে দেবেন।

 

দলের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সোমবার হাফিজ বলেন, ‘যদি কেউ আমাদের অবৈধ উপায়ে জয়ী করতে চায়, আমরা তা মেনে নেব না। জনগণের মতামতকে সম্মান করা উচিত, বিজয়ীকে জিততে দিন, পরাজিতকে হারতে দিন, কেউ যেন অতিরিক্ত কিছু না পায়।’

এই রাজনীতিবিদ আরো জানান, তিনি ২৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন।

অন্যদিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফ বারি ভোট পেয়েছিলেন ৩১ হাজারের মতো। কিন্তু এই সংখ্যা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। দাবি করা হয় সাইফ বারি ১১ হাজারের মতো ভোট পেয়েছেন।

 

এদিকে পাকিস্তানের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পিএস-১২৯ আসনটি কে নেবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।

 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের নির্বাচনকে ঘিরে যত সংকট দেখা দিয়েছে, আসন ছেড়ে দেওয়ার এ ঘটনাটি তার সর্বশেষ সংযোজন মাত্র। এর মাধ্যমে নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি এবং অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগটি আবারও সামনে এসেছে। নির্বাচনের এমন অনিয়মের মাধ্যমে ইমরান খানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রধান ইমরান গত আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন এবং তাঁর দলকে ব্যালট থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।

এ কারণে পিটিআই প্রার্থীদের দলীয় ব্যানারের পরিবর্তে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে। কিন্তু বাধা সত্ত্বেও সারা দেশের ভোটাররা অপ্রতিরোধ্যভাবে ইমরান খানের পক্ষে ভোট দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন।

 

নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন। পাকিস্তানের সংসদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ২৬৬টি আসনের মধ্যে ৯৩টি আসনে জয়লাভ করেছেন তাঁরা। যা নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি। তবে পিটিআইয়ের দাবি, তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের আরো বেশি ভোট এবং আরো বেশি আসন জেতা উচিত ছিল।

দলটি ভোট কারচুপির অসংখ্য অভিযোগ তুলেছে এবং এই সপ্তাহে করাচির ওই আসন থেকে ইসলামপন্থী দলের প্রার্থীর আসন ত্যাগ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

পপুলার ভোটে পিটিআই সফলতা অর্জন করলেও ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বী দল নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সপ্তাহের শুরুতে বলেছিল, তারা সরকার গঠনের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। গত সপ্তাহের ভোটে পিএমএল-এন ৭৫টি আসন জিতে দ্বিতীয় স্থানে, পিপিপি ৫৪টি আসন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তারা মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) মতো কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে জোট গঠনের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।

এ ছাড়া নারী ও অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ৭০টি আসন থেকেও দলগুলোকে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। সাধারণত যে দল যত বেশি আসন পায় তারা তত বেশি সংরক্ষিত আসন নিজেদের করতে পারে। এতে তারা সহজেই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৬৯টি আসন অর্জন করতে পারবে। তবে দেশটির নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, এই সংরক্ষিত আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পাওয়ার নিয়ম নেই।

 

পিএমএল-এন এবং পিপিপি পূর্বে একটি জোটে ছিল, যার নাম ছিল পিডিএম। ওই জোট ২০২২ সালে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। নওয়াজ শরিফের ভাই শেহবাজ শরিফ সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এ বারও তাঁকে আবার সামনে আনা হয়েছে পাকিস্তানের সম্ভাব্য পরবর্তী নেতা হিসেবে।

ইমরান খানকে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করার পর তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে তাঁকে তিনটি মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বর্তমানে বেশ কয়েকটি মামলায় কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

৭১ বছর বয়সী ইমরান খানের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা দায়ের হয়েছে, সেগুলো বানোয়াট এবং তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। যদিও পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সূত্র : বিবিসি

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন