অনলাইন জুয়ায় ফতুর বৌদ্ধ ভিক্ষু

অনলাইন জুয়ায় এবার ফতুর হয়েছেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে মাদক কারবারে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম। পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মশিউর রহমান এ তথ্য জানান।

ডিবি সূত্র জানায়, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল পার্বত্য অঞ্চলের একজন অবৈধ মালামাল নিয়ে রাজধানীর রমনা থানার মগবাজার এলাকায় আসবে।

ওই তথ্য যাচাই বাছাই করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হাতিরঝিল থানাধীন পেয়ারাবাগ, বড় মগবাজার এলাকায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় ১৬ হাজার পিস ইয়াবা এবং তিনটি মোবাইল ফোনসেট ও একটি ব্যাকপ্যাকসহ ডিপু চাকমা (৩০), আপেল রড়ুয়া (৩৩) ও  মোমিন হাওলাদার (৩৮)-কে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ডিপু চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার আদর্শ বৌদ্ধ বিহারের প্রধান পুরোহিত।

তার বাবা রূপায়ন চাকমা ছিলেন খাগড়াছড়ি সদরের এক কাঠুরিয়া। সংসারের ঘানি টানার ক্লান্তি আর লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ বছর বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ডিপু ২০১২ সালে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে দিঘীনালা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

 

২০১৫ সালে তিনি রাঙ্গামাটি রাজবিহার পালি কলেজে ৫ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়ে তা সম্পন্ন করেন পালি শাস্ত্রে।

সাথে দীক্ষা নেন পুরোহিত হওয়ার, পরেন কঠিন চীবর ও গেরুয়া বসন। বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে পুরোহিত দায়িত্ব পালন শেষে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানাধীন বৌদ্ধ বিহারের প্রধান হিসেবে এক বছর সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন খাগড়াছড়ি জেলা সদরে। সেখান থেকে বদলি হয়ে সর্বশেষ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি থানাধীন আদর্শ বৌদ্ববিহারের প্রধান হিসেবে গত দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। 

 

ইতিমধ্যে ২০১৬ সালে ভারতের মিজোরামের বৌদ্ধ ভক্তবৃন্দের আমন্ত্রণে রাঙ্গামাটির বরকল-হরিনা সীমান্ত হয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই বিএসএফের অনুমতি নিয়ে ভারতে যান এবং সেখানে ১০/১২ দিন অবস্থান করে একই পথে একইভাবে দেশে ফিরে আসেন।

২০১৯ সালে খাগড়াছড়ির পানছড়ির সীমান্ত দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেখানে ৭/৮ দিন অবস্থান করে একইপথে একই কায়দায় দেশে ফিরে আসেন।

 

ছোটবেলা থেকেই ধূমপানে আসক্ত ডিপু খাগড়াছড়ি জেলা সদরে থাকাকালীন মোবাইল ব্রাউজিং করতে করতে পরিচিত হন অনলাইন জুয়ার সাথে। সেখান থেকেই জুয়ায় আসক্ত হন। তিনি যেসব অনলাইন জুয়ার সাইটে নিয়মিত জুয়া খেলতেন তার কয়েকটি হলো ওয়ানএক্সবেট, ভি২৪বেট, এফএক্সবেট, ছিএক্স ক্রিকেক্স। জুয়ায় আসক্ত হয়ে এ বৌদ্ধ ভিক্ষু ইতিমধ্যে হারিয়েছেন প্রায় ১৫/২০ লক্ষ টাকা। এ টাকার মধ্যে ছিল নিজের বেতন, দান দক্ষিণা, মৃত বাবার ভিটামাটি বিক্রয়লব্ধ টাকা এবং মায়ের কর্য করে নেওয়া দেড় লক্ষ টাকা। অনলাইন জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন ইয়াবা পরিবহনের কাজে নিজেকে সঁপে দেওয়ার।

ডিপু চাকমার ধর্মগুরু আরেক বৌদ্ধ ভিক্ষুর শিষ্য আপেল বড়ুয়ার মাধ্যমে কাঁচা টাকার লোভে প্রবেশ করেন ইয়াবার জগতে। নিয়মিত-ই কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা থেকে ঢাকায় আসতেন হাজার হাজার পিস ইয়াবা বহন করে। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতে থাকা মোমিন হাওলাদারের কাছে নিরাপদে পৌঁছে দিতেন হাজার হাজার পিছ ইয়াবা। এখান থেকে সেই ইয়াবা যেত ঢাকাসহ গাজীপুর, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং থানা পর্যায়ে। এ অবৈধ কাজ করে পেয়েছেন সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করে। সঙ্গে পেতেন যাতায়াত ভাড়া এবং খাবারের খরচ।

মাথা ন্যাড়া, চোখে মোটা চশমা, পরনে গেরুয়া ত্রি-চীবর (চার খণ্ডের পরিধেয় বস্ত্র, যাতে রয়েছে দোয়াজিক, অন্তর্বাস, চীবর ও কটিবন্ধ) পায়ে চটি আর হাতে ব্রক্ষের মালা-  এ যেন এক সাক্ষাৎ ধর্ম দূত! একে কি আর সন্দেহ করা যায়? পৌরহিত্য আর পোশাকের বদৌলতে বার বার থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পার্বত্য অঞ্চলে সেনা - পুলিশের টহল; সীমান্ত জেলাগুলোর ঘাটে ঘাটে বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশের চেকপোস্ট কোনোকিছুই আটকাতে পারেনি এই পুরোহিতকে। এবারই প্রথম ধরা পড়লেন বেরসিক ডিবি লালবাগ বিভাগের পুলিশের কাছে।

ডিপুর সঙ্গে মিয়ানমারসহ বাংলাদেশের কোন কোন ইয়াবা কারবারির সম্পর্ক আছে তার বিস্তারিত জানার জন্য পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন