একের পর এক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষকরা!

উন্নত জীবন যাপনের উদ্দেশে বিদেশে- বিশেষ করে স্বপ্নের ইউরোপে পাড়ি দেন সিলেটের মানুষ বেশি। গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং সহজ করায় দেশ ছাড়ার হিড়ি পড়েছে সিলেটিদের মধ্যে। সে সুযোগ হাতছাড়া করছে না  সিলেটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। এতে খানিকটা শিক্ষক সংকটে পড়েছে সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষা।  

 

 

 


জানা গেছে, গত এক বছরে কানাডা ও ব্রিটেনে সিলেটের শতাধিক প্রাথমিক শিক্ষক ভুল তথ্যে ছুটি নিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ইতোমধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ৪৫টি বিভাগীয় মামলা ৪০ জনকে বরখাস্ত করেছে। পাশাপাশি আরো ২১টি বিভাগীয় মামলা চলমান। যার অধিকাংশই ভুল তথ্যে ছুটি নিয়ে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা।

 

 

 

এদিকে, শুধু ৬৬টি মামলাই নয়, দেশ ছেড়ে যারা বিদেশে থিতু হয়েছেন, সকলকে বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

 

 

 

সম্প্রতি এক কর্মশালায় তথ্য উঠেছে- প্রাথমিক শিক্ষার মানে সিলেট সারাদেশের মধ্যে পিছিয়ে। 

 

 

 


জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা অনুমোদিত সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৬২। এর মধ্যে বর্তমানে অফিসিয়ালি কর্মরত রয়েছেন ৭ হাজার ১৯৫ জন শিক্ষক। এছাড়া ১৪৭৭টি প্রধান শিক্ষক পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ১০৯ জন।

 

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এক হাজার শিক্ষক সংকট রয়েছে সিলেট জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর এদের মধ্যে মিথ্যা তথ্য অর্থাৎ প্রবাসী স্বজন কিংবা মা বাবার অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে দেশ ছেড়েছেন শতাধিক শিক্ষক। তারা অনেকে অফিসিয়াল পাসপোর্টও গ্রহণ করেননি। নিজের পেশা গোপন করে পাসপোর্ট নিয়ে অননুমোদিত ভাবে বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। এদের অধিকাংশই আইইএলটিস করে কিংবা কেয়ার ভিসায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে কানাডা ও ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তে মিথ্যা তথ্যে দেশ ছাড়ার বিষয়টি ওঠে আসে।

 

 

 

সম্প্রতি প্রাথমিকের শিক্ষকদের অফিসিয়াল পাসপোর্ট করার হার বেড়েছে। শুধুমাত্র গত জানুয়ারি মাসেই ৬২ জনকে পাসপোর্টের অনাপত্তি দিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। শুধু পাসপোর্ট নয়, ব্রিটেন, কানাডায় স্থায়ী হতে নতুন করে কৌশল নিচ্ছেন সিলেটের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সহকারী শিক্ষকরা। তারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে অক্ষম দাবি করে চাকরি থেকে সরে যাওয়ার আবেদন করছেন। সাথে ডাক্তারি সনদ সংযুক্ত করে দিচ্ছেন যাতে চাকরিবিহীনকালে সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

 

 

 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হঠাৎ করে প্রবাসে স্থায়ী হওয়ার প্রবণতার প্রভাব পড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এমনিতেই সিলেট জেলায় প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট রয়েছে, তার ওপর অননুমোদিত ছুটি নিয়ে বিদেশে স্থায়ী হওয়ার প্রবণতার প্রভাবে শিক্ষক সংকট আরো বাড়ছে। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠছেন অভিভাবকরা। গুটিকয়েক শিক্ষকের এ ধরণের মিথ্যাচারের কারণে অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতিও সম্মান হারাচ্ছেন তারা।

 

 

 

সিলেট মহানগরের খাসদবীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মৌমিতা দাস কানাডায় স্থায়ী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া কল্লগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মরিয়ম বেগম, রামকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কাজী শারমিন আক্তার, নবীনচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তুলি রানী দেবীসহ বেশ কয়েকজন সহকারী শিক্ষিকা দীর্ঘ অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তদন্ত করছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

 

 

 

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাখাওয়ার এরশেদ এ বিষয়ে বলেন- তীর্থস্থান ভ্রমণ, প্রবাসে স্বজনদের সাথে দেখা করার অনুমতি নিয়ে দেশ ছেড়ে সেখানে স্থায়ী হওয়ায় ৪০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরো ২১টি বিভাগীয় মামলা চলমান। যারা অনুমতি ছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছুটির নামে দেশ ছেড়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে।

 

 

 

তিনি আর বলেন, সিলেটে ৯৫০টি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। নতুন নিয়োগ এলে, তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন