জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করুন, অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সামনে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তহবিলকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্পদের সংস্থান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানবতার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে, তখন সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষার পথ অনুসরণ করলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

 

গতকাল শুক্রবার জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ২০২৪-এ ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবিত পরামর্শে এই মন্তব্য করেন।

ছয়টি পরামর্শ তুলে ধরার সময় প্রথম পরামর্শ উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সঠিক পথে রাখতে জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ ছাড় করার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’ তিনি আবারও বলেন, উন্নত দেশগুলোকে পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বছরের শেষ নাগাদ আমাদের সকলকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে, বিশেষ করে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপর ২০২৫ সাল পরবর্তী একটি নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একমত হতে হবে।

 

দ্বিতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারি এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে, যা গাজা ও অন্যত্র বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে।’ তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সংঘাতের অনুভূতির বোধ থেকেও অনেক দূরে অনুভূত হয়।

তৃতীয় পরামর্শে তিনি বলেন, জলাযায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের তীব্র ভারসাম্যহীনতা দূর করতে অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান পর্যায় অন্তত দ্বিগুণ করা প্রয়োজন।

এ লক্ষ্যে অভিযোজনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁকে ধন্যবাদ জানান।

 

চতুর্থ পরামর্শে তিনি বলেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থ প্রাপ্তি সুগম করার জন্য দীর্ঘকালের অমীমাংসিত সমস্যাটি তাদের সক্ষমতায় বিনিয়োগ করার সুযোগসহ সমাধান করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য আমাদের শুধু দুটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং আরো দুটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

পঞ্চম পরামর্শে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অর্থায়নের ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঋণের বোঝা দূর করতে তাদের জন্য অনুদান ও সুবিধাজনক ঋণ লাভের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থপূর্ণ ফলাফল দেখাতে হবে।’

সর্বশেষ ও ষষ্ঠ পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু কর্মসূচির জন্য বেসরকারি পুঁজি প্রবাহে সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা, নীতি ও ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকল্পগুলোর জন্য বেসরকারি পুঁজি আকৃষ্ট করার জন্য উদ্ভাবনী ও মিশ্র অর্থায়নের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

 

তিনি বলেন, ‘এটি সুস্পষ্ট যে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কার্যকর সমাধান করা যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু অভিযোজনের একটি পরীক্ষাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রায় ৮০০ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সবই নিজস্ব সম্পদ থেকে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান নগণ্য (বৈশ্বিক নির্গমনের ০.৪৭%-এর কম) হলেও তাঁর দেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটা অনুমান করা হয় যে এখন থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের বার্ষিক জিডিপি ক্ষতি হবে ২%, এবং এই হারে ২১০০ সালের মধ্যে ক্ষতি ৯% পর্যন্ত হবে। আরো অনুমান করা হয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন এবং সহিষ্ণুতার জন্য বার্ষিক বাজেটের প্রায় ৪.৬ শতাংশ এবং জিডিপির ০.৭৪ শতাংশ ব্যয় করে, যার ৭৫ শতাংশ আসে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে।

বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের পাশাপাশি ডেনমার্ক ও কাতারের  প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন বিশ্ব নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।

মিউনিখের হোটেল বেইরিশার  হফ-এ সম্মেলনস্থলে শেখ হাসিনা ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল রহমান আল-থানির সঙ্গে  বৈঠক করেন। 

কনফারেন্স ভেন্যুতে, তিনি মেটা গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের উপপ্রধানমন্ত্রী স্যার নিক ক্লেগ এবং বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড পার্টনারশিপের  সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর  অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ,  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক  টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাসের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

এর আগে সকালে উইমেন পলিটিক্যাল লিডারসের (ডাব্লিউপিএল) সভাপতি সিলভানা কোচ-মেহরিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে তাঁরা পারস্পরিক ও বৈশ্বিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খবর বাসস’র।

হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে (এমএসসি) যোগ দিতে রয়েছেন জার্মানিতে। তিনি গতকাল হোটেল বেয়েরিশার হফে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল রহমান আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন