আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে জান্তার হামলা জোরদার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ নাগরিককে ফিরিয়ে নেওয়ার পর রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে জান্তা বাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান রাখাইনের আকাশে চক্কর দিতে থাকে। আকাশ থেকে একের পর এক বোমা ফেলা হয়েছে রাখাইনে।

সীমান্তের কাছাকাছি ফেলা বোমার শব্দে সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে।

গতকাল ভোরে সীমান্তের মানুষের ঘুম ভেঙেছে বোমার বিকট শব্দে। এ সময় সীমান্তবর্তী জনপদের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতুয়ে থেকে গতকাল বিকেলে পাওয়া খবরে জানা গেছে, সিতুয়েতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সামর্থ্যবান নাগরিকরা গাড়ি, নৌযান ও ফ্লাইটে করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

 

নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের রাখাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন মিয়ানমারের সরকারি কর্মচারীরা আতঙ্কে আছেন। যেকোনো সময় যুদ্ধের আশঙ্কায় বন্দরে যুদ্ধজাহাজগুলো প্রস্তুত আছে। লোকজনের শঙ্কা, যে গতিতে আরাকান আর্মি সিতুয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ওই শহর জান্তার হাতছাড়া হতে পারে।

 

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সীমান্তে আমরা বিজিবির (বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী) শক্তি বাড়িয়েছি। কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশ সেখানে সজাগ রয়েছে। কাজেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে কেউ আসবে এমনটি হবে না।’স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির কিছু সদস্য পরিত্যক্ত অস্ত্রসহ এখানে এসে থাকতে পারে। তবে সবাই ধরা  পড়েছে।

বিজিবি সবাইকে আটক করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সারা মিয়ানমারে শুধু আরাকান আর্মি নয়, অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত আছে। কিছু গোলাগুলির শব্দ আমাদের এখানে আসছে, এটি সত্য।’

 

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু, ঘুমধুম, উখিয়ার রহমতের বিল ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমার রাখাইনের মংডু টাউনশিপের উত্তর এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষ আপাতত থেমেছে। সেখানকার পাঁচ-ছয়টি সীমান্ত ঘাঁটি ও এলাকা আরাকান আর্মি দখলে নেয়। তবে গত দুই দিন ধরে মংডুর কাছাকাছি পূর্ব এলাকা ও দক্ষিণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘাত হচ্ছে। রাখাইন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, দুই দিন ধরে রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনী আগের চেয়ে শক্তি বৃদ্ধি করেছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার সারা দিন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন, সাবরাং ও জেলেপাড়ার মানুষের দিন কেটেছে আতঙ্কে। দিনভর ওপারের বোমা, মর্টার ও গুলির শব্দ শুনে কাটিয়েছে সীমান্তের মানুষ। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ওই সীমান্তের ওপার থেকে মর্টার ও গুলির শব্দ শোনা যায়।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘ভোর ৬টার দিকে বোমার বিকট শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। এ সময় পুরো ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে। কয়েক মিনিট পর এ ধরনের আরেকটি বিকট শব্দ শুনেছি। আমার নিজেরও ভয় হচ্ছে।’ আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদের এলাকার নাফ নদের পরেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। কিছুটা দূরত্ব থাকার পরও ওপারের গোলাগুলির এত বিকট শব্দ এপারে চলে আসছে।’

শাহপরীর দ্বীপ জেলেপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর পর মিয়ানমারের বোমার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। কিছু কিছু শব্দ এত বিকট হয় যে আমরা হকচকিয়ে উঠি। শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি কয়েক শ বার বিস্ফোরণ শুনেছি।’ শাহপরীর দ্বীপের আরেক জেলে নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘গতকাল বিকট শব্দে জেটি পর্যন্ত কেঁপেছে। পরে আকাশে হেলিকপ্টার ও বিমানের আওয়াজ শুনেছি।’ তিনি বলেন, ‘কুয়াশায় অস্পষ্টভাবে রাখাইনের আকাশে হেলিকপ্টার ঘুরতে দেখেছি। পরে দেখছি, হেলিকপ্টার থেকে বোমা বা গুলি ছোড়া হচ্ছে।’

শাহপরীর দ্বীপের অদূরে দেশের সর্বশেষ জনপদ সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও গতকাল মিয়ানমারের সংঘাতের প্রভাব পড়েছে। দ্বীপের বাসিন্দারা ভোরে দুটি বিকট শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। বিকেলের দিকে ২০টিরও বেশি বিকট শব্দ শোনা যায়।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমারের  অভ্যন্তরে সংঘর্ষ হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে টেকনাফ ও দক্ষিণে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত এলাকায় মিয়ানমারের গুলি বা মর্টারের শব্দ শোনা গেছে। তবে কোনো মর্টার শেল বা গুলি এপারে এসে পড়েছে এমন তথ্য নেই। এ ছাড়া হোয়াইক্যং সীমান্তে চার দিন ধরে মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে না বলে জেনেছি।’

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন