অনুপস্থিতিতে প্রশংসা দোয়ার নামান্তর!  

অবনত সৃষ্টিতে স্রষ্টাও খুশি হন। মস্তিষ্ক যত বিনীত হবে সম্মান তত উচ্চ হবে। একজন সরল মানুষ নিঃসন্দেহে ভালোমানুষ।

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।

বিশালতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া কিংবা পদ-পদবী পাওয়া এসব ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা আসলে ক্ষণিকের জন্যে চেয়ার পাহারা দেই। যে চেয়ারে আমার পূর্বেও কেউ বসেছিল এবং আমার পরেও কেউ বসবে। ক্ষমতা পেয়ে যেনো বোধ খেয়ে না ফেলি! কী হনুরে প্রবণতা যাতে অমানুষ করে না গড়ে! বড় বৃক্ষটির আরও বেশি নত হতে হয়। তবেই ছোট ছোট বৃক্ষের সাথে তার দেখা হয়! সাময়িক সম্পদ, ক্ষণিকের ক্ষমতা মানুষের রূপ বদলে দিলে সে মানুষ দলছুট হয়। ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানুষ, অহংকারী মানুষ কিংবা দাম্ভিক মানুষকে কেউ মোটেও ভালোবাসে না। মানুষের ঘৃণা নিয়ে, অপছন্দ হয়ে জীবনের ছন্দ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।  

 

যত বড় হন, যেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন আবার শিকড়ে ফিরে আসতে হবে। যখন কর্মের সক্ষমতা হারাবেন, চিন্তার সৃজনশীলতা হৃাস পাবে তখন জীবনের দৌড় থেকে ছিটকে যেতে হবে। যাদের সাথে কর্মজীবন কাটিয়েছেন, যাদের সাথে  করেছেন ব্যবসা, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সেই মানুষগুলোর সাথে আড্ডা দিবেন? তারা আপনার সাথে অবসরের গল্প বলবে?সে আশা ভুলে যান। পাত্তা পাবেন না। আবার ফিরতে হবে বেড়ে ওঠা ধুলোবালিতে। শৈশবের আশ্রয়স্থলে! সেখানের মানুষগুলোর সাথের আন্তরিকতা রাখুন। কখনোই কোন কারণে সম্পর্কে কালিমা লাগাবেন না। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ান। বিনিময়ে তাদের থেকে কিছুই পাবেন না; প্রশংসা ছাড়া। ভবিষ্যতের জন্য কতোখানি ভালোবাসা সঞ্চয় করুন। এখানেই ক্ষেত্র! নিরস অবসর জীবনে এসব পাথেয় হবে। অন্তত স্বস্তির মৃত্যুর দিকে ধাবিত করবে। 

 

মানুষের অহংকার বেশিদিন টিকে না! বিনয়ের বয়স পৃথিবীর সমান। মরে গেলেও থেকে যাবে সুনাম। ভাবধরে থাকলে মনের মানুষ পাবেন না। ভাব প্রকাশের বন্ধু হবে না। ভরসা-বিশ্বাসের আস্থাভাজন মিলবে না। বিনীত হলে পাছেও সুনাম পাবেন। এই সুনাম মানে দোয়া। কেউ অজ্ঞাতে আপনার প্রশংসা করলে, আপনার আচরণে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলে সেটা বিনিময় হিসেবে ফেরত পাবেন। বিপদ কেটে যাবে। সবচেয় বড় কথা কারো সুখের কারণ হওয়ার চেয়ে বড় সুখ আর কিছুতেই নাই। আপনি যোগ্য কি-না,  আপনি সৎ কি-না, আপনি মহৎ কি-না সেটা আপনার কথা, আপনার বিনয়ে প্রকাশ পাবে। অযোগ্যরা সবচেয়ে বেশি অহমিকা লালন করে। অহংকারের মধ্যে সৌন্দর্য নাই বরং কদর্যতায় ঠাসা! 

 

অবনত সৃষ্টিতে স্রষ্টাও খুশি হন। মস্তিষ্ক যত বিনীত হবে সম্মান তত উচ্চ হবে। একজন সরল মানুষ নিঃসন্দেহে ভালোমানুষ। সব পেশাকে যারা সম্মান করে, ছোট-বড়র যার ভেদ করে না, আপন-পর দেখে যারা খাতির করে না তারা সম্মানিত হয়। যদিও এতে কিছু মানুষের অসন্তোষ বাড়তে পারে তবে ভালোর স্রোতে সব মন্দগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নত হয়ে ঠকাও ভালো। এর উত্তম বিনিময় ফেরত আসবে। কিন্তু ঔদ্ধত্যপূর্ণ হয়ে, অহমিকায় পরিপুষ্ট হয়ে কাউকে কষ্ট দিলে, ঠকালে সেটা বিনিময়হীন যাবে না। দীর্ঘশ্বাসের সীমাহীন শক্তি আছে। সে দায়ীকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত বহমান থাকে। কারো দীর্ঘশ্বাসে, কারো অভিশাপে সুখী হওয়া যায় না বরং সেসব অসুখ হয়ে ফিরে আসে। প্রশান্তি কেড়ে নেয়। নির্ঘুম ব্যাধি, দুশ্চিন্তার সমাধিতে আটকে যায় জীবন। 

 

আমরা ক্ষুদ্র, আমাদের ক্ষমতা সসীম। সবাই ক্ষণস্থায়ী! এই ছোট্ট জীবনে একটু ক্ষমতা পেয়ে, সম্পদ পেয়ে, পদবি পেয়ে মনুষ্যত্ব যেনো হারিয়ে না ফেলি। বরং দায়িত্ব পেয়ে কিভাবে অপরের কল্যাণ আরো বেশি করতে পারি, বিপদগ্রস্তকে কী করে উদ্ধার করতে পারি, অসহায়কে কীভাবে সাহায্য করতে পারি,  মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি-সেই ব্রত হোক। ব্যক্তির স্বার্থের জন্য, নিজের দাম্ভিকতা-বড়ত্বের জন্য যেনো দল-সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। শেকড়ের সাথে বন্ধুত্বের শক্তি মজবুত হোক। বিনয় ভূষণ হলে মানুষের অন্তরে আশ্রয় মিলবে। হাজারো সুরম্য অট্টালিকার চেয়ে সেখানে আশ্রয় গৌরবের-সম্মানের। বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পাথর জীবিত থাকতে পারে কিন্তু মানুষকে থাকতে হয় মানুষের মনের কাছাকাছি; জীবদ্দশায় প্রাণবন্ত থাকতে হলে।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন