সুন্দরের জন্য সংগ্রাম আমরণ!  

 স্ত্রী'র মনের চাওয়া, তার সুখ-দুঃখ বুঝতে হলে আপনার বোনদের আপনাদের প্রতি টানের দিকে খেয়াল করুন। যখন আপনার বোন বাবা-মায়ের জন্য কিছু করতে পারে, আপনাদের পাশে থাকতে পারে তখন তার মত সুখী আর কেউ হয় না।

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।  

আমরা সবকিছুতে বেশি বেশি তুলনা করে ফেলি! বাবা-মায়ের সাথে শ্বশুর-শাশুড়িকে তালগোল পাকিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করি! জামাই শ্বশুরপক্ষের জন্য কিছু করলেই সমাজে বহুকথা জড়ো হয়! অথচ ওদিকটাও অবহেলার নয়! সন্তান তার বাবা-মায়ের জন্য সবকিছু করবে, দায়িত্ব পালন করবে। সাথে সাথে স্ত্রী'র পক্ষের দিকটাও সাধ্যমত দেখতে হবে। যে মেয়েটা তার স্ত্রী, তাঁরও বাবা-মায়ের জন্য, ভাই-বোনদের জন্য অনেককিছু করতে ইচ্ছা করে, পাশে দাঁড়াতে মনে চায়। সুতরাং স্ত্রী যদি চাকুরি করে তবে তার আয়ের অর্থ খরচের স্বাধীনতা তার থাকা উচিত।  স্ত্রী'রও সেটা রাখা উচিত।  বাবা-মায়ের জন্য খরচের কৈফিয়ত, নিজের শখ পূরণের জবাবদিহি-এসব নিয়ে পুরুষত্ব কিংবা স্বামীগিরি ফলানো মোটেই কাম্য নয়। 

 

আবার যদি স্ত্রী শুধুমাত্র গৃহিণী হয় তবে স্বামীর দায়িত্ব শ্বশুর-শাশুড়িকে, শালা-শালীকে সাধ্যমত উপহার দেয়া। বিপদ-আপদে, সুখে-দুঃখে পাশে থাকা। এতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়। অন্তত প্রিয়তমা প্রিয় হয়ে ওঠার স্পেসটুকু পায়। এ নিয়ে পরিবারে  কিংবা বাইরে কিছু কিছু প্রশ্ন উঠতে পারে, কেউ কেউ বিদ্রুপাত্মক হতে পারে তবুও থেমে যাওয়া উচিত নয়। একজন সন্তান সুসন্তান তখনই হয় যখন সে পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান হয়। বাবা-মাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে। ভাই-বোনদের পাশে থাকার, ভরসা হওয়ার দায়িত্ব নেয়।  

 

 স্ত্রী'র মনের চাওয়া, তার সুখ-দুঃখ বুঝতে হলে আপনার বোনদের আপনাদের প্রতি টানের দিকে খেয়াল করুন। যখন আপনার বোন বাবা-মায়ের জন্য কিছু করতে পারে, আপনাদের পাশে থাকতে পারে তখন তার মত সুখী আর কেউ হয় না। আপনার স্ত্রী'ও তদ্রুপ। কাজেই আপনি উপযাচক হয়ে বলবেন-তাদের জন্য কি কি করতে চান। একজন সম্পূর্ণ মানুষ আপনার মতোই আবেগ-ইচ্ছা পোষণ করে। কাজেই দু'জনের  ইচ্ছা-তুষ্টি সমসূত্রে গাঁথা হলে তবেই শান্তির দেখা মিলবে। বাহির থেকে কে কী বললো, কে কী করলো সেই তুলনায় কখনোই যাবেন না। স্বার্থ এবং  দায়িত্বের সম্মিলন ঘটিয়ে দুকূলের জন্যই আপন হবেন। সুপুত্র হবেন, আদর্শ মেয়ে জামাই হবেন।

 

 

দমিয়ে, চাপিয়ে, শাসিয়ে কিংবা বঞ্চিত করে ভালোবাসা হাসিল করা যায় না। কারো মনের ইচ্ছা হত্যা করে কোনভাবেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব নয়। সবাই সম্পূর্ণ বুঝদার নয়। কারো কারো আব্দার বেশিও থাকতে পারে। কেউ কেউ কেবল একপেশে টান দেখাতেও পারে। যারা বুদ্ধিমান তারা ব্যালেন্স করতে জানে। একজন সন্তান হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে এবং একজন জামাই হিসেবে যা যা দায়িত্ব, যা তাদের হক তা আদায় করতে কুণ্ঠিত হবেন না। একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি, একরোখা স্বভাব-এসব সম্পর্ক নষ্ট করার টনিক। কোথাও লোভ না রেখে হক আদায় করলে সে আপনজন হয়ে ওঠে। 

 

পুরাতন ধ্যান-ধারণা বদলাতে হবে। যে বীজ বপন করে যাচ্ছি সেরূপ ফল আশা করতে পারি। ছেলে-মেয়েকে আলাদা চোখে দেখার সুযোগ এই আলোতে নাই। সময় এগুচ্ছে। আমাদের চিন্তা-চেতনাকেও যুগোপযোগী করতে হবে। আমাদের বাবা-মা ভালো থাকলে, পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকলে আমাদের সন্তানেরা সুন্দর পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। একটি মেয়ে যে সংসারে বেড়ে ওঠে, যেখান থেকে পড়ালেখার সুযোগ পায়, যাদের কল্যাণে চাকুরি পায়-বিয়ের মাধ্যমে তাঁর সেখানের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। পতিদের উচিত স্ত্রী'দের এইসব ব্যাপারের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করা। 

 

আবার পত্নীও যদি মনে করে বিয়ের মাধ্যমে পতিদেব পুরোপুরি তার হয়ে গেছে তবে বিপত্তি ঠেকাবে কে? বিশাল দায়িত্ব নিয়ে কিশোররা পুরুষ হয়ে ওঠে। পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে, বাবা-মা, ভাই-বোনের কাছে ঋণ থাকে, সামাজিক দায়িত্ব থাকে। সবকিছুই তাকে দক্ষহাতে সামলাতে হয়। স্ত্রীরা যদি সহমর্মি না হয়, বুঝের চেয়ে অবুঝ আচরণ বেশি করে তবে কলহের সূত্রপাত হয়। বিষিয়ে ওঠে জীবন। অথচ সুন্দর জীবনের জন্য আমাদের সংগ্রাম আমরণ!

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন