মনের দূরত্ব বাড়ানো কথাগুলো মুখের দূরত্বে থাক!  

আমাদের স্বভাব হয়েছে কারো দুর্বলতায় আঘাত করে কথা বলা! সেখান থেকে সুখ হাতানো! মতের অমিলে বিতর্ক শুরু করে আমরা ব্যক্তি আক্রমণে পৌঁছাই।

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক। 

আপনার সৌন্দর্য কী শরীরে? অল্প। বৃহৎ সৌন্দর্য আপনার মনে। যা লালন করে চরিত্র এবং প্রকাশিত হয় কথা ও আচরণে। আপনার পরিচয় দেয় বিনয়ে। যাদের সাথে আমাদের দূরত্ব বাড়ে তাদের কতজনের সাথে টাকার লেনদেন আছে? একজীবনে কতজনের সাথে কতবার মারামারি হয়? অথচ একজন থেকে আরেকজনের মন উঠে যায়। কেন? কথায়। আমরা কথায় কথায় আঘাত দিতে ভালোবাসি! স্বার্থ খানিকটা বিঘ্নিত হলেই আপনিটাকে তুই করে ফেলি। অথচ ভালোবেসেও আপনি থেকে তুমি এবং তুমি থেকে তুই হওয়া যায়! আমরা ভালোবাসার পথে না হেঁটে ঘৃণার পথে পা বাড়াই। পরিনামে পছন্দের ব্যাপ্তি কমে আসে। আমিও কম মানুষের তালাশের তালিকায় থাকি। 

 

আমাদের স্বভাব হয়েছে কারো দুর্বলতায় আঘাত করে কথা বলা! সেখান থেকে সুখ হাতানো! মতের অমিলে বিতর্ক শুরু করে আমরা ব্যক্তি আক্রমণে পৌঁছাই। আমাদের জিহ্বা অসংগত-অসংলগ্ন! কথার আঘাতে কাউকে জর্জরিত করে রাজ্যের সুখ পাই। কারো ভুল পেলে তাকে ধুয়ে ফেলি, কাউকে নরম পেলে তার ওপর চড়ে বসি! চড়া স্বর তখন কর্কশ হতে শুরু করে। যোগ্যতা দেখানোর বদলে জিহ্বার জোর দেখাই। আমিই সেরা-  কু-বিতর্কে সেটা প্রমাণ না করে স্বস্তি পাই না। মানুষের সামনে বলার চেয়ে পেছনে অধিক বলি! মনে মনে বলি আরও ঢের!  কথার আঘাতে মানুষকে কাঁদাতে আমাদের পাষাণ হৃদয়ের বাঁধে না। 

 

দু'জন আপন মানুষ, ঘরের মানুষ তবুও মতের একটু অমিল হলে, স্বার্থের খানিক ব্যত্যয় ঘটলে  কথা নিয়ে একজন আরেকজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। যারা অনেক বলে তারা কী বলে নিজেরাও জানে না। হাজার কথার মাঝে একটা কথা এমনভাবে লাগে যা দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়, মন উঠিয়ে দেয়, অন্তর কাঁপিয়ে দেয়। বলতে শেখার চেয়েও জরুরি কোথায় থামতে হবে সেটা জানা। যে কথা শত্রুতা বাড়ায়, অন্যের অপছন্দের জোগাড় দেয় সে কথা এড়িয়ে গেলে এই জীবনের এমন কোন ক্ষতি হয় না!  

 

আমরা বড়ত্ব দেখাতে যেয়ে, পান্ডিত্য বাজাতে গিয়ে, কর্তৃত্ব জাহির করতে চেয়ে এমন এমন কথা বলে ফেলি যা আমাদের ভাঁড় বানায়। স্বার্থের জন্য এমন অদ্ভুত প্রশংসা করি যা নিজের অবস্থানকে হাস্যকর করে। কাউকে নিন্দা করার নামে এমন সব মিথ্যাচার করি যা সার্বিক সত্যের অপলাপ। কথা বলতে বলতে শত্রু বাড়াই। ঔদ্ধত্য স্বভাবে কথা, ক্ষমতার চেয়ারের কথা, বিত্তের বড়াইয়ের কথা আমাকেই আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ  করে? এই যদি হয় কথার শ্রী তবে মানব জনমের অর্জন কি? 

 

ভালো কথা, আপন করার কথা, ঘৃণা এড়ানোর কথা যদি ভাঙা গলায় ফ্যাসফ্যাসিয়েও উচ্চারিত হয় তবুও সেগুলো শ্রেষ্ঠতম বুলি। যে কথা অন্যায়ভাবে-অহেতুক কাউকে আঘাত করে না, কারো দুর্বলতা-গোপনীয়তার ক্ষত দগদগে করে না, কারো অসামর্থ্য লোকসমাজে জানিয়ে দেয় না-সেই কথা উত্তম কথা। সেই কথা পৃথিবীরর উর্বরতম সৌন্দর্য ধারণ করে। কথায় কথায় ঘৃণা ছড়ানো, তাচ্ছিল্য করা-এসব ভালো লোকের স্বভাবজাত ধর্ম নয়। যে কথা মনের দূরত্ব বাড়ায় সে কথা মুখের দূরত্বে থাক!

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন