ব্যাংকে কিংবা ব্যবসায় বিনিয়োগের চেয়ে সন্তানে বিনিয়োগ হোক। সন্তানকে মানুষ বানানোর একেকটা মেগা প্রকল্প থাকুক। মানেতার শিক্ষা অর্জন করুক।
রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক। |
বৃক্ষটি ফুল-ফল দেয় না বলে যত্ন ছেড়ে দিলাম! অথচ সেটার দেয়া অক্সিজেনের কথা একবারও ভাবলাম না! নগদ লাভের জন্য আমরা ভবিষ্যতের কতগুলো রাস্তা বন্ধ করি-সেটা নিজেরাও বুঝতে পারি না! সব পরীক্ষার ফল চলতি সপ্তাহে বা আগামী মাসেই প্রকাশ পায় না! কিছু কিছু পরীক্ষায় ফল লাভের আশা ছাড়াও অংশগ্রহণ করতে হয়! অনন্ত অপেক্ষা করবো বলে শ্বাস বন্ধ করতে চাই না।
ভক্ষণ মাত্রই শরীরের বল, মস্তিষ্কের তেজ বৃদ্ধি পায় ন! পড়ার শেষেই জ্ঞান কই, জ্ঞান কই?- বলে চিল্লাতে হয় না! সবকিছু নগদ নগদ হয় না। অপেক্ষায় পরিপক্বতা আসে। এটা করে কী লাভ এটা বলার আগে আরেকটু দূরে দৃষ্টি ফেলতে হবে! চোখ আর কতদূরে দেখতে পায়? বিবেকের দৃষ্টি আরও বিস্তৃত করতে হবে। মরণের ওপাশেও ফলাফল হবে! সব দেখতে পাই না, আন্দাজও করতে পারি না। কিছু না ঘটলে এতো মানুষ ভিন্ন ভাষায় চিল্লায় কেনো?
যা কামাই করি, যা জমা করি সব কিছু নিজে ভোগ করে যেতে পারবো? যাদের জন্য সম্পদের কাড়ি করি তারা ভোগ করতে পারবে-সেই নিশ্চয়তা আছে? তবে কেন বৈধ-অবৈধের ব্যবধান ভুলে যাই? কেন অন্যকে অধিকার বঞ্চিত করি? হাসতে হাসতে অন্যের চেখের পানির কারণ হই? ঠকাই। লোকে আমাকে ধনী-বিত্তবান কিংবা ক্ষমতাধর বলবে বলে? মানুষের অধঃপতন দেখেছেন? সবকিছু খোয়া যেতে দেখেছেন? তেজস্বীকে মরতে দেখেছেন? তবে কী করে বিপথগামী হন?
হায়াতে বড়জোর ১০০ বছর? যারা প্রথম ২৫ বছর অযোগ্যতার, শেষ ৩০ বছর দুর্বলতার! মধ্যের ৪৫ বছর উত্থান-পতনের! মহাকালের বয়সের তুলনায় এটা খুব বেশি সময়? ঘুম-খাওয়া এবং অবসর বাদ দিলে কতবছর কাজের সময়? এক পলক! এই সময়টুকু তো ভালোর জন্য হতে পারে। সুদ-ঘুষ কিংবা দুর্নীতি, মিথ্যা, মোহ কিংবা লোভে পতিত হলেও জীবন কেটে যাবে কিন্তু ব্যর্থ জীবনের পচন সয়ে যেতে হবে। পথ খোলা! অথচ মানবজীবন মহৎ জীবন হতে পারতো!
ব্যাংকে কিংবা ব্যবসায় বিনিয়োগের চেয়ে সন্তানে বিনিয়োগ হোক। সন্তানকে মানুষ বানানোর একেকটা মেগা প্রকল্প থাকুক। মানেতার শিক্ষা অর্জন করুক। বিপথে কামাই করে অমানুষদের জন্য সেই সম্পদ রেখে গেলে তাদের ধ্বংস হওয়া আরও সহজ হবে। অথচ যোগ্য করে গড়ে তুলে রিক্ত হাতে ছেড়ে গেলেও তাঁরা জীবনের মানে খুঁজে পাবে। তাঁরা শুধু ফুল-ফল নয় বরং অক্সিজেনের কথা মাথায় রেখে সম্পর্ককেও যত্ন করবে! স্বার্থ ছাড়াই ভালোবাসবে। হাসতে পারার সক্ষমতা থাকবে।
আবার একটা জীবন পেলে ভুলগুলো সব শুধরে নিতাম? কিন্তু সে সুযোগ আর থাকছে না, স্রষ্টা সে পথ রাখছে না। কাজেই এই আলোতেই নিজেকে আলোক-মালায় মাখামাখি করাতে হবে। লোভ-ঈর্ষা-দম্ভ ভুলে ভালোর সাথে ভাগাভাগিতে স্বপ্ন দেখতে হবে এবং কাজ করতে হবে। একটা জীবনে অনেকগুলো জীবনের হিস্যা থাকে। কখনোই অকৃতজ্ঞতার চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে স্বার্থপরের পৃথিবীতে যেনো একলা হয়ে না যাই-খেয়াল থাকুক। একাকীত্বের জীবনে সুখের মাত্রা ক্রম-হৃাসমান!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন