গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরিবর্তনের প্রয়োজন উল্লেখ করে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ সোমবার তাঁর সরকারের পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর সরকার দখলকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ শাসন করে। রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নেতা প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের (৮৮) কাছে শতায়েহ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধের সমাপ্তির পর পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একটি সংস্কারকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ।
শতায়েহ ‘গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে উত্তেজনা বৃদ্ধির’ কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, প্রথমে তিনি আব্বাসকে গত মঙ্গলবার পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তবে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ‘লিখিত’ আকারে জমা দিয়েছেন। তবে আব্বাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা গ্রহণ করেননি।
৬৬ বছর বয়সী এ প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে বলেছেন, ‘পরবর্তী পর্যায় এবং এর চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য নতুন সরকারি ও রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রয়োজন, যা গাজা উপত্যকার নতুন বাস্তবতাকে বিবেচনা করবে।
’ তিনি আন্তঃফিলিস্তিনি ঐকমত্য এবং ‘পুরো ফিলিস্তিন ভূমিতে পিএর শাসন সম্প্রসারণের’ আহ্বানও জানান।
এদিকে ইসরায়েল গাজায় ইসলামপন্থী সশস্ত্র আন্দোলন হামাসের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকা নাকচ করে দিয়ে স্থানীয় ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা ভূমিকা রাখতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছে। ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আব্বাস ক্রমবর্ধমান ক্রোধের সম্মুখীন হয়েছেন, অনেকে সেখানে ইসরায়েলি আক্রমণের পাশাপাশি পশ্চিম তীরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার নিন্দা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তাঁর সমালোচনা করেছেন। ২০০৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব বিভক্ত হয়েছে পশ্চিম তীরে সীমিত ক্ষমতা প্রয়োগকারী আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং গাজা উপত্যকার শাসনকারী হামাসের মধ্যে।
৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে আক্রমণ করার পর গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ১৬০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, সেখানে প্রতিশোধমূলক ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ২৯ হাজার ৭৮২ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
‘নতুন রাজনৈতিক দৃশ্য’
গাজা যুদ্ধের প্রভাবে পশ্চিম তীরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। রামাল্লার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরে অন্তত ৪০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
এদিকে মাহমুদ আব্বাস অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন না কি নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ মুস্তফাকে নতুন মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে আব্বাস নিয়োগ দিতে পারেন, যিনি ক্ষমতাসীন ফাতাহ আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য। মুস্তফা এর আগে উপপ্রধানমন্ত্রী এবং আব্বাসের অর্থনৈতিক বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছনোর জন্য আলোচনা করছে, ইসরায়েলের শীর্ষ মিত্র ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা চলছে কিভাবে যুদ্ধোত্তর গাজাকে শাসন করা যেতে পারে।
ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক ঘাসান খতিব বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ছিল আব্বাসের দেখানো উপায়—তিনি নমনীয় ও টেকনোক্র্যাটদের সরকারের মাধ্যমে ‘যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত’।
তিনি আরো বলেন, ‘যদি আব্বাস ও হামাস একটি চুক্তিতে পৌঁছতে সক্ষম হয়, এটি হবে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দৃশ্যে একটি নতুন তাৎপর্যপূর্ণ পর্যায়।’ তবে তাদের মধ্যে আগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এ বিশ্লেষক।
শতায়েহের মন্ত্রিসভা ২০১৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। ইতিমধ্যে তিনি তাঁর রেকর্ড রক্ষা করে বলেছেন, তাঁর সরকার বড় চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কাজ করতে পেরেছে। তাঁর মতে, ‘সরকার জনগণের চাহিদা মেটানো ও অবকাঠামোর মতো পরিষেবা প্রদানের মধ্যে একটি ভারসাম্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা দখলদারিত্ব মোকাবেলায় থাকব...এবং ফিলিস্তিনের ভূমিতে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন