বিসমিল্লাহ বলে বয়ান শুরু করলাম! 

ধর্মীয় শব্দে এলার্জি স্যেকুলারদের স্বভাবে পরিনত হয়েছে। আল্লাহু আকবরে সবচেয়ে বড় ভীতি! আলহামদুলিল্লাহ!

রাজু আহমেদ। কলাম লেখক। |

শুকরিয়া জানাচ্ছি সেই রবের যিনি আমাকে আলহামদুলিল্লাহ বলার তাওফিক এনায়েত করেছেন! আপনার যদি এটা সহ্য না হয় তবে নাউজুবিল্লাহ বলা থেকে বিরত থাকতে পারছি না! যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান তবে দয়াময় রব আপনাকে ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ। এই পরামর্শ প্রদানের জন্য আপনি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমার জন্য জাযাকাল্লাহ বলতে পারেন। আমি আপনার সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য সর্বদাই ফি আমানিল্লাহ বলবো। আপনার কথা ও কাজে বারাকাতিল্লাহ নাজিল হোক! 

 

ধর্মীয় শব্দে এলার্জি স্যেকুলারদের স্বভাবে পরিনত হয়েছে। আল্লাহু আকবরে সবচেয়ে বড় ভীতি! আলহামদুলিল্লাহ! তারা ধর্মে বাতি যত আয়োজন করে নিভিয়ে দিতে চায় তার অধিক শক্তি নিয়ে ধর্মের কেতন পাখনা ছড়ায়! আলহামদুলিল্লাহ,  নাউজুবিল্লাহ এবং ফি আমানিল্লাহ'র ব্যাপারে আপত্তি ওঠার পরে কত কোটিবার শব্দগুলো উচ্চারিত হয়েছে তা আল্লাহ মালুম। ধর্মীয় শব্দ শুনলে কেন তাদের ভীতি বাড়ে, তারা কোন রীতিতে এগুতে চায় তা তারাই ভালো জানে!  

 

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে যে  'ইনশাআল্লাহ' শব্দ আছে সেই শব্দের বারাকাহ'র ওপর বাঙালি জাতির পিতা সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতেন। বাংলা ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের নাম আরবি শব্দে! কাজেই যারা লেখায় কিংবা বলায় আরবির ছায়া দেখেন, আলহামদুলিল্লাহ-ইনশাআল্লাহ'য় যাদের আপত্তি তাদের এজেন্ডা কী সেটা জাতির সামনে উন্মোচিত হওয়া উচিত। তার প্রকাশ্য না করলেও সঙ্গ সম্পর্কে জাতির সাবধান থাকা দরকার।  

 

বাংলা ভাষার মত সম্মৃদ্ধ ও উদার ভাষা পৃথিবীতে আর একটাও আছে কি-না আমার সন্দেহ আছে। কী চমৎকারভাবে বিভিন্ন ভাষার শব্দ বাংলার সাথে একাকার হয়ে গেছে তা আলাদা করাও কঠিন। ফারসি, ইংরেজি, ফরাসি, আরবি, হিন্দি কিংবা মারাঠি-কোন ভাষার শব্দ নাই আমার বাংলা ভাষায়? আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ কিংবা জাযাকাল্লাহ বাংলা ভাষায় একীভূত হয়ে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। শব্দভান্ডার ঋদ্ধ করেছে। ভাষার নিজস্ব কোন ধর্ম নাই। ভাষা উম্মুক্ত সম্পদ। 

 

'৫২ এর ভাষা আন্দোলন মূলত উর্দুকে চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে তীব্র জনবিস্ফোরণ! বর্বর পাকিস্তানীদের সাথে মাতৃভাষা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধেনি। তারা বাংলাকে বাদ দিয়ে কেবল উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার যে অপচেষ্টা করেছিল সেটা বাঙালি জাতি মেনে নিতে পারেনি। তখন প্রাণের ভাষা বাংলার জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা শেষমেশ স্বাধীনতা অর্জনের বাতিঘর হিসেবে প্রেরণা যুগিয়েছে। বাংলা ভাষায় বাংলার নিজস্ব যে শব্দভান্ডার তা ব্যবহৃত মোট শব্দসংখ্যার ২%। বাকি ৯৮% বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলার সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিশ্রিত হয়েছে। সেখানে আরবি শব্দ নিয়ে যে বাহাস ও আপত্তি তা নিশ্চয়ই চলমান শান্ত অবস্থাকে বিকল করার প্রয়াস।  

 

বিভিন্ন সময় একদল আবির্ভূত হয়ে মিমাংসিত ইস্যূগুলোকে উসকে দেয়। বাঙালি মুসলমান মানস থেকে 'আলহামদুলিল্লাহ' কখনোই বিচ্ছিন্ন করা যাবে?  অতীতে কখনো বিচ্ছিন্ন ছিল? ঐ একদল যারা বাংলা ভাষাপ্রীতি দেখাতে গিয়ে কেবল আরবিকে কোনঠাসা করতে চায় এটা কোনভাবেই ভালো উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। তারা কি মাত্র দুই মিনিট শুধু দেশি বাংলা শব্দে কথা বলতে পারবে? বিভিন্ন ভাষা থেকে আগত বাহারি শব্দভান্ডার বাংলা ভাষার সবচেয়ে সম্মৃদ্ধ বৈচিত্র্য! যারা এই বিষয়ে শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করতে চায় তাদের থেমে যাওয়া উচিত।  তারা স্বেচ্ছায় না থামতে চাইলে শান্তির পক্ষে রাষ্ট্রও দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে থামিয়ে দিতে পারে। 

 

বাংলা ভাষায় যত শব্দ আছে তার কত শতাংশ আমরা ব্যবহার করি? যার ইচ্ছা আলহামদুলিল্লাহ বলবে, যার ইচ্ছা ইনশাআল্লাহ বলবে না। জোড়াজুড়ির কোন প্রশ্নই নাই। কিন্তু যারা  আলহামদুলিল্লাহ,  ইনশাআল্লাহ বলে তাদেরকে থামিয়ে দেওয়ার, সমালোচনা করার, উগ্রতা ছড়ানোর যে অপচেষ্টা সেটা সাধু লক্ষন নয়। কারো সহানুভূতির দৃষ্টি পেতে ভাষায় ব্যবহৃত এমন শব্দমালার ওপরে আপত্তি আরোপ করা হয়েছে যা কেবল শব্দ নয় বরং সেন্টিমেন্ট! সুতরাং সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। বিবেচনাহীন বলার মধ্যে যে পান্ডিন্ত্য তার চেয়ে কখনো কখনো চুপ থাকার মধ্যে আরও বড় প্রজ্ঞা নিহিত থাকে।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন