দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে গাজার প্রায় ৬ লাখ মানুষ: জাতিসংঘ

গাজায় সাহায্যের আশায় মরিয়া ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলা সংঘাতে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত ভূখণ্ডটির কমপক্ষে পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আরো ত্রাণ পাঠানো না গেলে ‘তীব্র দুর্ভিক্ষের’ কারণে কয়েক দিনের মধ্যেই গাজার ‘হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু’ হতে পারে। সংঘাত বন্ধে যে শান্তি উদ্যোগ চলছে তার অন্যতম প্রধান বিষয় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানো।

 

দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’

গত বছরের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজার লাখ লাখ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে। তবে ইসরায়েলি বাহিনী হামাসকে ধ্বংসের নামে সেখানেও বিমান হামলা চালাচ্ছে। এমনকি স্থল হামলারও হুমকি দিচ্ছে দেশটি।

 

নিজেদের ভিটেমাটি আঁকড়ে যারা বিধ্বস্ত উত্তর গাজায় রয়ে গেছে তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে বলে সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) উপনির্বাহী পরিচালক কার্ল স্কাউ গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘যদি কিছুই পরিবর্তন না হয়, তাহলে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন।’

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় বিষয়ক সংস্থার (ওসিএইচএ) রমেশ রাজাসিংহাম নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, গাজার এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসী, অর্থাৎ কমপক্ষে পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্রই এক ধাপ দূরে।

গাজার খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে এক বৈঠকে ওসিএইচএ কর্মকর্তা জানান, উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সী ছয়টির মধ্যে একটি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।

 

ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির ২৩ লাখ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ‘মর্মান্তিকভাবে অপর্যাপ্ত’ খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি কিছুই করা না হয়, তাহলে আমাদের আশঙ্কা, গাজায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ প্রায় অনিবার্য। আর এই সংঘাতের কারণে আরো অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

ডাব্লিউএফপি জানিয়েছে, এক মাসের বেশি সময় ধরে উত্তর গাজায় কোনো সহায়তা সংস্থা ত্রাণ সরবরাহ করতে পারেনি। ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।

হামাসকে দমনে ইসরায়েল প্রথমে উত্তর গাজায় অভিযান চালিয়ে সে অঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। তারপর মনোযোগ দেয় উপত্যকার মধ্য ও দক্ষিণে।

 

উত্তর গাজায় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে খাদ্যের অভাবে শিশুরা শূন্য পাত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দা মাহমুদ খোদর বলেন, ‘আমি দুই দিন ধরে খাইনি। খাওয়ার বা পান করার মতো কিছুই নেই।’

এদিকে উত্তর গাজায় খাদ্যের জন্য অপেক্ষারত মরিয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সূত্রে জানা গেছে। এতে অন্তত একজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছে। আলজাজিরার যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলি থেকে বাঁচতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি উপকূলীয় রাস্তায় গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। সেখানে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই এলাকায় প্রায় কোনো ত্রাণই পৌঁছাচ্ছে না বলে আলজাজিরা জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রত্যাশা কম

গাজার অধিবাসীদের অনাহার ও ইসরায়েলি হামলা থেকে সাময়িকভাবে হলেও রেহাই দেওয়ার জন্য নতুন করে শুরু হওয়া আলোচনার ওপর ভরসা করছিল অনেকে। কিছু অগ্রগতির আভাস দিয়ে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশাবাদ জানিয়েছিলেন, আগামী সোমবারের মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতি হবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়েছে ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই। তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা থেকে খুব বেশি প্রত্যাশা করছে না বলে জানিয়েছে।

হামাসের রাজনৈতিক শাখার এক জ্যেষ্ঠ সদস্য আলজাজিরাকে জানান, অস্ত্রবিরতি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাননি তাঁরা। ইসরায়েলের তরফ থেকেও এ ব্যাপারে তেমন ইতিবাচক কিছু জানা যায়নি।

এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, তাঁরা যুদ্ধবিরতি নিয়ে মতৈক্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। তবে এখনো এই কাজ শেষ হয়নি। আগামী সোমবারের মধ্যে তা হয়ে যাবে বলেই আমার প্রত্যাশা।’

চলমান আলোচনায় ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে মতৈক্য হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছিল। আগের কয়েক দিনের এক যুদ্ধবিরতির তুলনায় তা অনেকটাই দীর্ঘ।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন