সিলেটের বিভিন্ন স্থানে জাল টাকার কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহীনি তাদের নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হলেও সবাইকে আটক ও বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এই চক্র আগে কেবল নগরীতে সক্রিয় থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলা পর্যায়েও। গত কিছুদিনের মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার থেকে র্যাব ও পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন জাল টাকার ৪ কারবারি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এ বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়ে বিশেষ তৎপরতা চলছে। জাল টাকার কারবারিদের ঘিরে জাল গুটিয়ে আনা হচ্ছে। শীঘ্রই আরও অভিযান চালিয়ে এমন কারবারিদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার পরার্মশ দিয়েছেন তারা।
সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থেকে জাল টাকা তৈরীর সরঞ্জাম ও জাল নোটসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ।এসময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকার অবিকল নকল টাকা, প্রতি পাতায় ৪টি করে ১২০ পাতায় মোট ৪৮০টি এক হাজার টাকার নোট যার মূল্যমান চার লক্ষ আশি হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটের জালালাবাদ থানার শিবেরবাজার এলাকা হতে জাল টাকার নোটসহ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বড়কাপন গ্রামের মো. রুজেল মিয়াকে (২৭) আটক করেছে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে ১ হাজার করে ৫ টাকার জাল নোট জব্দ করা হয়।
জাল টাকার বিস্তার আগের চেয়ে বেশী বেড়েছে মন্তব্য করে নগরী ও জেলার একাধিক ব্যবসায়ী সিলেটভিউকে জানান, অনেকেই নতুন টাকা দিচ্ছেন। প্রতিটি নোট সাধারণভাবে দেখে নেওয়া হয়। কিন্তু জাল নোটগুলো এতোই নিখুঁত যা শনাক্ত করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া কয়েকটি আসল নোটের সঙ্গে একটি জাল নোট দিলে তাও দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ ওই টাকা ব্যাংকে জমা দিতে গেলেই ধরা পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাল টাকার নোট তৈরি ও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্য পেশাদার। তারা জাল টাকার নোট তৈরি করে, অন্যদিকে জাল টাকার ব্যবসাও করে। চক্রের অনেক সদস্য এ ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। স্বল্প বিনিয়োগে বেশি টাকা আয় করা যায় বলেই তারা অপরাধমুলক এ পেশা ছাড়ছেন না।
এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রুস্তমপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও ভারতীয় রুপিসহ একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯। গ্রেফতার যুগেন্দ্র মল্লিক (৪১) শ্রীমঙ্গল থানার রুস্তমপুর এলাকার বাসিন্দা। এ সময় উদ্ধার করা হয় ভারতীয় ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ রুপি ও বাংলাদেশি ৬৯ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ সর্বমোট ৮৪ লক্ষ ১৮ হাজার ৪০০ রুপি-টাকার জাল নোট।
র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার মো. মশিহুর রহমান সোহেল জানান, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন যাবত সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার লোভে দেশি-বিদেশি জাল নোট তৈরি ও প্রতারণামূলকভাবে বাজারজাত করে আসছে। এই চক্রের সদস্যরা জাল টাকা তৈরি করে আসল টাকার ভেতর জাল টাকা মিলিয়ে লেনদেন করে সহজ সরল মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। এ অপরাধ ঠেকাতে মাঠে কাজ করছে র্যাব-৯। সর্বশেষ এরই ধারাবাহিকতায় জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রের এক সদস্যকে শ্রীমঙ্গলের রুস্তমপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জাল টাকার বিস্তার রোধে পুলিশ সবসময় তৎপর হয়ে কাজ করছে। যেহেতু সামনে রোজা ও ঈদ তাই আমাদের বাড়তি নজরদারি রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই এই চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন