পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করলেন পুতিন

ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ ধরনের সিদ্ধান্তের পরিণতি ‘দুঃখজনক’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। পশ্চিমারা রাশিয়াকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় টেনে আনার চেষ্টা করছে বলেও বৃহস্পতিবার বার্ষিক রাষ্ট্রীয় ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন অভিযোগ করেছেন। একই সময়ে তিনি বলেছেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেওয়ায় রাশিয়াকে এখন পশ্চিম সীমান্তে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।

 

প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনের সংঘাতকে ‘উসকানি’ দিয়েছে এবং ‘কোনো রকম বিব্রত হওয়া ছাড়াই মিথ্যা বলে চলেছে এই বলে যে রাশিয়া কথিতভাবে ইউরোপে আক্রমণ করতে চায়’।

এই সপ্তাহের শুরুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ মন্তব্য করেছিলেন, ইউক্রেনে ন্যাটোর স্থল সেনা পাঠানোর চিন্তা ‘বাদ দেওয়া যাবে না’। সম্ভবত সেই মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ‘সম্ভাব্য হস্তক্ষেপকারীদের পরিণতি হবে... দুঃখজনক।’

 

রুশ নেতা বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন অস্ত্রও রয়েছে, যা তাদের ভূখণ্ডে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।

এসব সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং সভ্যতা ধ্বংসের সংঘর্ষের হুমকি দেয়। তারা কি তা বুঝতে পারে না?’

 

যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটোর বেশ কয়েকটি দেশ ইউক্রেনে স্থল সেনা মোতায়েনের কথা অস্বীকার করেছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার অত্যাধুনিক অস্ত্র, যেমন হাইপারসনিক বিমান এবং মনুষ্যবিহীন ডুবোযান সম্পর্কে গর্ব করে বলেছেন, রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক বাহিনী ‘পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায়’ রয়েছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, বারবার জোর দিয়ে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণকে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করা উচিত বলা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পুতিন স্পষ্টভাবে ইউক্রেনের দুই বছরের লড়াইকে একটি ‘যুদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ’ রুশ ইউক্রেনে আক্রমণ করার বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিল এবং রাশিয়ার জনগণ এখন দেশটিকে দুর্বল করার পশ্চিমাচেষ্টার বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে।

 

এ ছাড়া রাশিয়া মহাকাশে স্যাটেলাইটের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগেরও তীব্র নিন্দা করেন পুতিন।

 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে এই ভাষণটি এলো, যেখানে প্রেসিডেন্ট পুতিন পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় আসবেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, এই ভাষণকে ‘বড় পরিমাণে (পুতিনের) নির্বাচনী কর্মসূচি হিসেবে দেখা যেতে পারে’।

প্রকৃতপক্ষে পুতিনের অধিকাংশ ভাষণে রাশিয়ার ক্রমহ্রাসমান জন্মহারকে বাড়ানোর লক্ষ্যে কর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ থেকে পেনশন ও প্রণোদনা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়।

তিনি জাতির স্বাস্থ্যের উন্নতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও কথা বলেছেন, রাশিয়ার আয়ু বাড়ানোর লক্ষ্যে কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন, যা বর্তমানে ইউরোপের সর্বনিম্ন সত্তরের মধ্যে একটি। মানুষকে শারীরিক ক্রিয়াকলাপে মনোনিবেশ করতে এবং অ্যালকোহল সেবন কমানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি রসিকতা করে বলেছেন, ‘মদ্যপান বন্ধ করুন এবং স্কি করা শুরু করুন!’

 

ভাষণটি রেকর্ড দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল এবং এতে উপস্থিত ছিলেন সব জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, তেল ও গ্যাস সংস্থা রোসনেফ্ট এবং গ্যাজপ্রমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং সেই সঙ্গে সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা। এটি মস্কো জুড়ে বিশাল স্ক্রিনে সম্প্রচার করা হয়েছে এবং রুশ শহরের বেশ কয়েকটি সিনেমা হল এটি বিনা মূল্যে প্রদর্শন করেছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে প্রত্যাশিত হিসেবে আলেক্সাই নাভালনির মৃত্যুর কোনো উল্লেখ ছিল না ভাষণে। এই বিরোধী নেতা দুই সপ্তাহ আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি সাইবেরিয়ার একটি পেনাল কলোনিতে মারা গিয়েছিলেন। তাঁকে অনেকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছিলেন। নাভালনিকে শুক্রবার মস্কোতে সমাহিত করা হবে। তাঁর মৃত্যুর কারণ এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী ইউলিয়া জোর দিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন নাভালনির মৃত্যুর জন্য দায়ী।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন