হৃদয়ভাঙা হার বাংলাদেশের

গ্যালারি জুড়ে সুনসান নীরবতা! ‘মৃত’ ম্যাচটা জয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসে যে ফিরছেন জাকের আলী অনিক। জয় থেকে তখন বাংলাদেশ ১০ রান দূরে। হাতে আরো তিন বল। উইকেটে দুই টেলএন্ডার ব্যাটার তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।

জাকের জানতেন ওই মুহূর্তে কাউকে যদি ম্যাচটা শেষ করতে হতো, সেটা তিনি। শরিফুল তাও মুখোমুখি প্রথম বলেই চার মারলেন।
পরের বলে বাই থেকে ১ রান। শেষ বলেও তাসকিন ১ রানের বেশি নিতে পারলেন না।

বাংলাদেশ ম্যাচ হারল ৩ রানে। তীরে এসে তরি ডোবার মতোই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি হারল বাংলাদেশ। অথচ ম্যাচটা এত দূর আসতে নাও পারত। শ্রীলঙ্কার ২০৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৬৮ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই শূন্য রানে আউট হন লিটন দাস। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে আউট হয়েছেন সৌম্য সরকার (১২), বিপিএলে দুরন্ত ফর্মে থাকা তাওহিদ হৃদয় (৮)। ব্যর্থ বিপিএল মিশন কাটানো নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটও কথা বলেনি। তিনি আউট হয়েছেন ম্যাচের পরিস্থিতিবিরুদ্ধ ২২ বলে ২০ রান করে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ জিততে পারত একমাত্র অসাধারণ কিছু হলে।

সে রকম কিছুর জন্য এমন দুজন দাঁড়িয়ে গেলেন, যাঁদের একজনের অভিষেক ম্যাচ, আরেকজন শেষ আন্তর্জাতিক দেড় বছর পর। হ্যাঁ, জাকের আর মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদের কথাই বলা হচ্ছিল। সেই পথে প্রথম যাত্রাটা শুরু করেন মাহমুদ।

 

২৭ বলে ফিফটি, ৩১ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদ। তাঁর ইনিংসে ৪ ছক্কার পিঠে চার দুটি। তখনো ম্যাচ সেভাবে জমে ওঠেনি। সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন শেষ মুহূর্তে আলিস আল ইসলামের জায়গায় দলে ঢোকা জাকের। সিলেটের ঘরের ছেলে তিনি। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের অভিষেকটা রাঙানোর জন্য জাকের বেছে নিলেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকেই। তাও কী অবিশ্বাস্যভাবে! ৩৪ বলে ৬ ছক্কা ও ৪ চারে ৬৮ রানের অনেক দিন মনে রাখার মতো এক ইনিংস। তবে যার শেষটা কি না বেদনাবিধুর।

ম্যাচের শুরুটা বাংলাদেশ অবশ্য করেছিল দারুণভাবে। আভিষ্কা ফার্নান্দোকে উইকেটকিপার লিটনের ক্যাচ বানিয়ে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন শরিফুল। সঙ্গে জুড়ে দেন বিশ্বকাপের চরম বিতর্কিত সেই ‘টাইমড আউটের’ দৃশ্যও। সাকিব আল হাসানকে আউটের পর হাতে অদৃশ্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ম্যাথুজ যে উদযাপন করেছিলেন তেমনই। পাওয়ার প্লেতে শরিফুলের পর কামিন্দুকে মেন্ডিসকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। দ্রুত উইকেট হারানোর চাপে প্রথম ছয় ওভারে ৪৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
তবে এক প্রান্তে বাংলাদেশের বিপক্ষে বরাবরের মতো অদম্য ছিল কুশল মেন্ডিসের ব্যাট। ৫৯ রানের ইনিংসে একবার জীবন পান। সেটা অবশ্য ৫৭ রানের সময়। সৌম্য সরকারের বলে তাঁর ক্যাচ ছাড়েন উইকেটকিপার লিটন। আর ২ রান যোগ করার পর লিটনকে ‘দায়মুক্ত’ করেন রিশাদ হোসেন। তাতে সাদিরা সামারাবিক্রমার সঙ্গে মেন্ডিসের ৯৬ রানের জুটিও ভাঙে। মেন্ডিসের ৩৬ বলে ইনিংসটি সাজানো ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। তবে ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া হতে থাকে চতুর্থ উইকেটে। সামারাবিক্রমা ও চারিথ আশালাঙ্কা দুই পাশ থেকেই রান তুলেছেন। সামারাবিক্রমা কিছুটা রয়েসয়ে খেললেও ঝড়ের বেগে রান করেছেন আশালাঙ্কা।  

শেষ চার ওভার থেকে দুজনে তুলেছেন ৬৪ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের শেষ ওভার থেকেই ২৪ রান। দুই ছক্কাসহ আশালাঙ্কা নেন ১৪ রান। ২১ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে ছয়টিই ছক্কা মেরেছেন আশালাঙ্কা। মুস্তাফিজের ওই ওভারে এক নো ও বাই রানসহ সামারাবিক্রমা নেন ১০ রান। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ৬১ রানে। তাঁর ৪৮ বলের ইনিংসটি সাজানো ৮ চার ও এক ছক্কায়। ইনিংসের শেষের মতো বাংলাদেশ ম্যাচের শেষটাও করেছে মন খারাপের অগণিত ছবিতে।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন