বিশেষ প্রতিনিধি : প্রচন্ড ক্ষমতাবান হয়ে বেশীভাগ আমলারাই ভুলে যান ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় ।আমলাতন্ত্র’ নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামূখী আলোচনা। পেশাজীবীরা বলছেন, আমলারাই এখন দেশ চালাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, আমলারা এখন জনপ্রতিনিধিদের পাত্তা দিচ্ছেন না। আমলা বনাম জনপ্রতিনিধি এবং পেশাজীবীদের এই বিরোধ ক্রমশ: দানা বাঁধছে। কোথাও কোথাও প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। তবে এর মধ্যে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন আপদমস্তক রাজনীতিবীদ। আর সেই কারণেই আমলারা দেশ নিয়ন্ত্রণ করছেন- এমন ধারণা সঠিক নয়। অনেক আমলাই এক সময় দুর্দান্ত প্রতাপশালী ছিলেন। কিন্তু চাকরী শেষ হবার পর তারা ছিটকে পরেছেন। তাদের আর ‘ক্ষমতাকেন্দ্রে’ দেখা যায় না। শেখ হাসিনা যেহেতু রাজনীতিবীদ, তাই রাজনৈতিক কর্তৃত্বেই দেশ চলছে। বেশী দিন আগের কথা নয়। গত জানুয়ারী মাসেও প্রচন্ড ক্ষমতাবান ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। তিন বছরের জন্য সমন্বয়কের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আগে, তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি যতোদিন ছিলেন, ততোদিন ‘প্রচন্ড ক্ষমতাবান’ ছিলেন এই আমলা। এমনকি কেউ কেউ তাকে সরকারের ‘দ্বিতীয় ক্ষমতাবান’ ব্যক্তিও মনে করতেন। কিন্তু তিন বছর শেষ হবার পর আবুল কালাম আজাদের চুক্তি নবায়ন করেননি প্রধানমন্ত্রী। ঐ পদে আনা হয়েছে জুয়েনা আজিজকে। এখন আবুল কালাম আজাদ কোথাও নেই। আর রিজেন্টের প্রতারক শাহেদ কেলেংকারীতে তার নাম আসার পর, তিনি যেন একেবারেই আড়ালে চলে গেছেন। অনেকেই এটাকে ‘নক্ষত্রের পতন’ বলে অভিহিত করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আরেক দাপুটে আমলা ছিলেন নজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব হবার আগে তিনি ছিলেন এনবিআরের চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব হয়ে তিনি সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেননি। মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর সচিব থেকে মুখ্য সচিব হয়েছিলেন। তাকে একবারে তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপর তিনি কোথাও নেই। এই তালিকা দীর্ঘ। প্রধানমন্ত্রী একক কোন আমলার উপর নির্ভর করেন না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একজন আমলাকে ব্যবহার করেন। তারপর সময় শেষ হলে, অন্য একজনকে বেছে নেন। কারণ শেখ হাসিনা ১৭ বছর প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন। আমলাদের নাড়ি-নক্ষত্র তিনি জানেন। তিনি কারও উপর নির্ভরশীল নন। বরং আমলারা ক্ষণিকের দায়িত্ব পেয়ে নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করেন। কিন্তু আসলে আমলারা চাঁদের মতো, তাদের নিজস্ব আলো নেই। প্রধানমন্ত্রী হলেন সূর্য। প্রধানমন্ত্রী তার আলোটুক সরিয়ে নিলে আমলারা অন্ধকার হয়ে যান।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন