ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ

“...কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি :/ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।”

কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় এ এক ‘অমর কবিতা’। অমর কবিতার কবি বিশ্বখ্যাত একজন রাজনীতিবিদ, একজন মহান নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন।

 তাঁর এ উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের।

 

সেদিন মুক্তিকামী লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

 

বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের এই ভাষণ ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তাঁর যুগান্তকারী ভাষণের স্মারক হিসেবে ৭ মার্চ দিনটি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে বাঙালির হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের মর্মবাণীতে আজও জেগে ওঠে বাংলার মানুষ।

আজ ঐতিহাসিক সেই ৭ মার্চ।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক টগবগে উন্মাদনার অনন্য ও অবিস্মরণীয় দিন। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধুর ভরাট কণ্ঠের আওয়াজে মুখর হবে দেশ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। এই ভাষণ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাসংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে ওঠে।

 

২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থাটি ঐতিহাসিক এই ভাষণকে ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারের মেমোরিতে অন্তর্ভুক্ত করে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠেছিলেন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে রেসকোর্স ময়দান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। পুরো ময়দানে লাখো বাঙালির কণ্ঠে ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। মঞ্চে উঠেই তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। দরাজ গলার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি...।’

মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে পাকিস্তানে বাঙালিদের ২৩ বছরের বঞ্চনা ও নির্যাতনের পুরো ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ প্রকৃতপক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। সেই ভাষণে পাওয়া উদ্দীপনা ও দিকনির্দেশনার ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ৭ মার্চের ভাষণকে বীজমন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি ও অবাঙালিরা। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে এ দেশের মানুষ। বিশ্বমানচিত্রে জায়গা করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বাংলার চিরকালীন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সেদিনের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি-অবাঙালিসহ সব ধর্মের মানুষদের এক সুতায় গাঁথেন। তিনি তাঁর ভাষণে জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘...শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মর্কলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান বাঙালি অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।’

এই ভাষণের অসাম্প্রদায়িক চেতনা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই ভাষণের সর্বশ্রেষ্ঠ দিক নিঃসন্দেহে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান। কিন্তু এই ভাষণের তো আরো অনেক বিষয় আছে। আমাকে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার কথা বলছে, গণতান্ত্রিক চেতনার কথা, সব পক্ষের কথা শোনার কথা বলছে। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আদর্শিক দিক তো এটাই যে আমরা একটা জাতীয়তাবাদকে ধারণ করি। একই সঙ্গে কাউকে ছোট না করি, সবাইকে গ্রহণ করি। সেটা অসাধারণভাবে এই ভাষণে উঠে এসেছে মাত্র কয়েকটা লাইনে।’

কর্মসূচি

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানিয়েছে, দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া বিকেল ৪টায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে (তেজগাঁও) আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন