সিলেটে সংবর্ধিত বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক সুমনকুমার

লোকসাহিত্য ক্যাটাগরিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ পাওয়া প্রথম আলোর সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সুমনকুমার দাশ সংবর্ধনা পরিষদের আয়োজনে সিলেট নগরের রিকাবিবাজারে কবি নজরুল মিলনায়তনে গত শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে এ আয়োজন শুরু হয়।

 

 

 

নৃত্যশৈলীর শিল্পীদের উদ্বোধনী নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া আয়োজনে উদ্বোধক ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। উদ্বোধকের বক্তৃতায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সুমনকুমার দাশকে দেশের উদীয়মান তারকা হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁকে অত্যন্ত সাদামাটা ও নিরহংকারী মানুষ মন্তব্য করে বলেন, ‘সুমনকুমার দাশ আমাদের কৃষ্টি, কালচার, ঐতিহ্য সংস্কৃতির কথা তুলে জনসম্মুখে এনেছেন।’

 

উদ্বোধনের আগে সংবর্ধনা আয়োজনের স্মারক গ্রন্থ লোকায়ত সখা-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সুমনকুমার দাশের সৃষ্টি ও জীবন নিয়ে প্রকাশিত এ বই সম্পাদনা করেন প্রশান্ত মৃধা, জফির সেতু, মোস্তাক আহমাদ দীন ও মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা। অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা তুষার করের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সদস্যসচিব মু. আনোয়ার হোসেন। সাংস্কৃতিক সংগঠক সুকান্ত গুপ্ত ও রুহেনা সুলতানার যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন জনপ্রশাসন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সংসদ সদস্য এবং কবি ও গবেষক মোহাম্মদ সাদিক।

 

 

প্রধান অতিথি বক্তৃতায় বলেন, ‘সুমনকুমার দাশ বয়সের বাধা ডিঙিয়ে বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেছেন। যোগ্য একজন ব্যক্তি এ পুরস্কার পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির সমুদ্রে কাজ করছেন সুমনকুমার দাশ। ডুবুরির মতো তিনি কাজ করছেন। তুলে আনছেন মণি, মুক্তা। যারই স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলা একাডেমি।’

 

 

মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন কবি ও গবেষক মোস্তাক আহমাদ দীন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও ভারতের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার।

 

শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার বলেন, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একধরনের বুদ্ধিজীবী আছেন, যাঁরা জনসমাজের ধুলো, মাটি কাদা মেখে বুদ্ধি ও জ্ঞানচর্চায় আসেন। সুমনকুমার দাশ লোকসংস্কৃতির সহজাত একজন রসিক পিপাসু গবেষক। তিনি একই সঙ্গে জ্ঞান ও রসের পিপাসু।

 

 

ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, বাংলা একাডেমির পুরস্কার অবশ্যই বড় প্রাপ্তি। তবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ মানুষ উপস্থিত হয়েছেন, সেটা আরও বড় প্রাপ্তি। সুমনকুমার দাশ দুর্লভ মন লালন করেন। তিনি সাধারণ মানুষের নিকটবর্তী। তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন দেশের সাহিত্য সংস্কৃতিক সুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যকে খুঁজে বের করতে। এরাই সমাজের আদর্শ। পরে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য দেন সুমনকুমার দাশ। তিনি বলেন, পুরস্কারপ্রাপ্তিকে তিনি দ্রুতই ভুলে যেতে চান। ভুলে গিয়ে আবার কাজে মনযোগ দিতে চান। যত দ্রুত পুরস্কারপ্রাপ্তির বিষয়টি তিনি ভুলতে পারবেন তাঁর জন্য মঙ্গল হবে বলেও মন্তব্য করেন।

 

 

আয়োজনে সুমনকুমার দাশকে নিয়ে প্রদর্শন করা হয় তথ্যচিত্র। তথ্যচিত্রের সম্পাদনা করেছেন সেলিম মিয়া, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেছেন গোলজার আহমেদ, প্রচ্ছদ করেছেন অরূপ বাউল এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করেছেন আনিস মাহমুদ। এর আগে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সংবর্ধিত অতিথিকে মানপত্র দেওয়া হয়। মানপত্র পাঠ করেন নাজমা পারভীন এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল ও উত্তরীয় দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে প্রায় অর্ধশতাধিক সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে সংবর্ধিত অতিথিকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

 

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. আশরাফুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রমা বিজয় সরকার, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ আবু আনম মো. রিয়াজ, চিকিৎসক ও গীতিকার জহিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ক্রীড়াবিদ বিজিৎ চৌধুরী, গীতিকার ইশতিয়াক, কবি এ কে শেরাম, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা, ভ্রমণলেখক শাকুর মজিদ, কবি ও গবেষক জফির সেতু, সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, শাল্লা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান দীপু রঞ্জন দাশ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি শামসুল আলম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত।

 

 

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আয়োজনে সুমনকুমার দাশের লেখা গান পরিবেশন করেন ভারতের শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, বাউল সূর্যলাল দাস ও শিল্পী শামীম আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল। গান পরিবেশন করেন লন্ডনপ্রবাসী প্রখ্যাত শিল্পী কায়া। সুমনকুমার দাশকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন শাহ আবদুল করিমের অন্যতম প্রধান শিষ্য বাউল আবদুর রহমান। এ ছাড়া সিলেটের লোকগানও পরিবেশন করেন বিভিন্ন শিল্পী। দিবাগত রাত ১২টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

 

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মনিরুল ইসলাম, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল, সিলেট চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, বিশিষ্ট সাহিত্যিক নন্দলাল শর্মা আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, জামান মাহবুব ও মিহিরকান্তি চৌধুরী, উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবলী পুরকায়স্থ, সিলেট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশ, জেলা শিশুবিষয়ক সংগঠক সাইদুর রহমান ভূঁইয়া, মইনউদ্দিন মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ কৃষ্ণপদ সূত্রধর, আইনজীবী বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস প্রমুখ।

 

আয়োজনে বইয়ের বিপণিবিতান বাতিঘরের ব্যবস্থাপনায় সুমনকুমার দাশের লেখা বইয়ের একটি স্টল ছিল। সেখান থেকে অনেকে বই সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানস্থল সাজানো হয়েছে সুমনকুমার দাশের বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ ও নানা কর্মের চিত্র দিয়ে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন