গ্রামের মানুষজনের নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়েছে তাঁকে। ছিল অনেক বাঁধা বিপত্তি, আর্থিক অনটনও। এরপরও থামেননি পঞ্চগড়ের ইয়ারজান বেগম। বাবার ইচ্ছায় এবং স্থানীয় কোচ আবু তালেবের অনুপ্রেরণায় নিজের স্বপ্ন পূরণে সিঁড়ি একে একে বেয়ে উঠছেন এই কিশোরী।
একদিন আগেও অচেনা ইয়ারজান বেগম এখন দেশের মানুষের কাছে পরিচিত নাম। নেপালে গতকাল অনূর্ধ্ব-১৬ নারীর সাফের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ নৈপুণ্য সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তাঁকে। টাইব্রেকারে তিনটি শট আটকে দিয়ে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন শিরোপা।
আর আট-দশটি মেয়ের মতো ইয়ারজানের শুরুর গল্প একই।
গ্রামের মেয়েরা ফুটবল খেলবে এটা যেন নেতিবাক হয়ে দাঁড়িয়েছে এ দেশের প্রেক্ষাপটে। ইয়ারজানের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। স্কুল ফুটবলের মাধ্যমে শুরুটা হয়েছিল তার। কিন্তু এক পর্যায়ে স্কুলেও আর ফুটবল খেলা হচ্ছিল না তাঁর।
বলতে গেলে ছেড়েই দিয়েছিলেন। সেসময়ই আগমন ঘটে পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমির কর্ণধার আবু তালেব টুকুর। ইয়ারজানকে খুঁজে বের করে তাঁর একাডেমিতে নিয়ে যেতে চান। স্থানীয় এই কোচের চাওয়াতেই আবারও ফুটবলে ফেরেন ইয়ারজান। যোগ দেন টুকু ফুটবল একাডেমিতে।
ফুটবলের শুরুর গল্প ইয়ারজান বলছিলেন এভাবে,'আমি স্কুল পর্যায়ে খেলতাম। আমার বাবা সব সময় সমর্থন করেছে। এক পর্যায়ে খেলাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর আমার কোচ আবু তালেব টুকু আমাকে খুঁজে বের করে উনার একাডেমিতে নিয়ে যান। তখন আব্বুর সাথে কথা বলে ওই একাডেমিতে যাই।'
কিন্তু বাড়ি থেকে একাডেমি দূরে হওয়ায় সেখানে যাওয়ার যাতায়াত খরচও থাকত না ইয়ারজানের। সেটাও তাঁর কোচই ব্যবস্থা করে দিতেন। ইয়ারজান বলছিলেন,'উনাকে তো স্যার বলি না, ভাই বলি। উনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার যাতায়াত ভাড়াও ছিল না। উনি আমাকে ব্যবস্থা করে দিতেন।'
পঞ্চগড় থেকে ঢাকার ফুটবল; এরপর আন্তর্জাতিক অঙ্গন। এর সবই হয়েছে আবু তালেবের কারণে। সেটাও অকপটে স্বীকার করলেন ইয়ারজান,'আমার কোচের কারণে এখানে আসতে পেরেছি। অনেক মানুষের কথা শুনেছেন উনি, তবু আমাকে নিয়ে হাল ছাড়েনি। বলছে, ''তোমাকে ঢাকায় নিয়ে খেলাব, জাতীয়তে খেলাব। গ্রামের মানুষ তো অনেক কিছুই বলবে।'' উনাকে বলতাম, মানুষ নানান কথা বলতেছে কিন্তু তিনি আমাকে বলতেন, ''এসবে কানে দিবে না। যখন ভালো কিছু করবে তখন সবাই বাহবা দিবে।'' সেই ইয়ারজান এখন সবার কাছ থেকে বাহবা পাচ্ছেন, পারফরম্যান্স করেই।
বয়সভিত্তিক দলে সাফল্য পাওয়ার পর আরো দূরে চোখ রাখছেন ইয়ারজান। ধাপে ধাপে নিজেকে এগিয়ে নিতে চান,'রূপনা আপুর (বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের গোলরক্ষক) মতো একজন ভালো গোলরক্ষক হতে চাই।'
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন