গাজার বাসিন্দা ফিলিস্তিনি নারী হানা আল-মাসনি তাঁর স্বামী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে তাঁদের ‘নতুন বাড়িতে’ পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে এবারের রমজানে নেই কোনো সাজসজ্জা, ভালো খাবারের ব্যবস্থা কিংবা লেবু ও কমলাগাছের নিচে বসে কোরআন পাঠের আয়োজন। এমনকি সাহরি কিংবা ইফতারের জন্য সামান্য খাবারেরও নিশ্চয়তা নেই।
গতকাল সোমবার থেকে গাজায় শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস।
পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি প্রতিশোধমূলক হামলায় জনপদটির বিশাল অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘটেছে ৩০ হাজারের বেশি প্রাণহানি। পুরো গাজাতেই খাদ্যসংকট থাকলেও উত্তরে রীতিমতো দুর্ভিক্ষ চলছে। সেখানে অনাহারে বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে।
অনাহারের শঙ্কা নিয়েই মাসব্যাপী রোজা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। সাধারণত মুসলিমপ্রধান ফিলিস্তিনে উৎসবমুখর পরিবেশে রমজান শুরু হয়। কিন্তু এবার অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা, যুদ্ধবিরতির আলোচনায় স্থবিরতা ও ইসরায়েলি পুলিশের কড়া পাহারার মধ্যে শুরু হচ্ছে মুসলিমদের পবিত্র মাসটি।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের সাজানো সংসার ফেলে স্বামী-সন্তান নিয়ে রাফাহ শহরের একটি জরাজীর্ণ তাঁবুতে নতুন সংসার পেতেছেন হানা আল-মাসনি।
৩৭ বছরের এই নারী বলেন, ‘আমার মেয়েরা প্রতিবছর রমজানে বাড়ি সাজানোর জন্য পয়সা জমাত। আমিও প্রতিবছর রমজানে নতুন লণ্ঠন কিনতাম। তবে এবার এসবের কিছুই নেই। ব্যাপারটা ভীষণ হতাশা ও কষ্টের।’
খান ইউনিসের কাছে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছেন হোসেন আল-আওদা।
তাঁর অবস্থাও রীতিমতো বেহাল। একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর প্রগ্রাম অফিসার হলেও ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে তাঁর পাতে মাংস পড়েনি বললেই চলে। এখন টিনজাত মটরশুটি খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করছেন হোসেন। রমজানেও এই নিয়মের হেরফের হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে বাদাম আর শুকনা ফল পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত এসব দিয়েই আমরা ইফতার করি। কিন্তু এবার এসব পণ্যের দাম বড্ড চড়া। তাই ইফতারেও মটরশুটিই খেতে হবে।’
এদিকে রমজান মাসে স্থানীয় মুসলিমরা প্রতিদিন ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচিত আল আকসা মসজিদে নামাজ পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে ইসরায়েল। পুরনো জেরুজালেম শহরের সরু গলিগুলোসহ এলাকাজুড়ে হাজার হাজার পুলিশ বাড়তি মোতায়েন করা হয়েছে। ইসরায়েলের কট্টরপন্থী নেতাদের কেউ কেউ আল আকসায় যাওয়ার ওপর বিধি-নিষেধের কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র তা না করার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত রবিবার রমজান উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা, যুদ্ধবিরতি এবং মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার অঙ্গীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় প্রথম থেকেই সমর্থন দিয়ে এলেও বিপুলসংখ্যক বেসামরিক লোকের মৃত্যুতে সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে।
এদিকে গাজায় ‘নৃশংস অপরাধ’ বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। গত রবিবার রমজান উপলক্ষে দেওয়া এক বিশেষ বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন