প্রবাস থেকে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছেন হাওরপাড়ের হাজারো নারী-পুরুষ

gbn

সুখের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন হাওর পাড়ের হাজারো নারী-পুরুষ। প্রবাস ফেরত এসব শ্রমিকের বেশিরভাগই নারী। ক্ষতিগ্রস্ত এসব শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে জীবিকার তাগিদে গিয়েছিলেন। সেখানে একশ্রেণির দালাল ও প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়ে নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা সর্বস্ব হারিয়ে রিক্ত হাতে দেশে এসে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

 

 

 

 


সুনামগঞ্জ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েলফেয়ার সেন্টারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ মাসে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার প্রায় ৮ হাজার নারী ও পুরুষ মধ্যপ্রাচ্য থেকে বঞ্চনার শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব শ্রমিকের ৮০ ভাগই সুনামগঞ্জ জেলার হাওর অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। যার বেশিরভাগই নারী শ্রমিক। তাদের অনেকে ছিলেন সৌদি আরব। আবার অনেকে গিয়েছিলেন কাতারে। 

 

 

 


এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই, ওমান থেকেও নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

 

 


সংস্থার এক মুখপাত্র জানান, পরিবারের সুখের আশায় জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া হাওরের নারীরা নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন দেশে। বিশেষ সুবিধা ও উচ্চ বেতনের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে সৌদি আরব, ওমান, কাতার ও দুবাই গিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন হাওরের এসব নিরক্ষর ও অল্পশিক্ষিত নারী শ্রমিক। তবে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের দক্ষ বানাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েলফেয়ার সেন্টারগুলো।

 

 

 


সুনামগঞ্জ পৌরসভার আরপিননগরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান সানি দালালের সাহায্যে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে ভ্রমণ ভিসায় গিয়েছিলেন আরব আমিরাত। কথা ছিল সেখানে স্থায়ী ভিসার ব্যবস্থা করবে দালাল। কিন্তু ১৪ মাসের মতো কর্মহীন থেকে কোনো কাজ না পেয়ে আউটপাস নিয়ে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন এই যুবক।

 

 

 


প্রতারিত যুবক মিজানুর রহমান জানান, দালালের খপ্পড়ে পড়ে আমি সব হারিয়েছি। দেশে এসেও বেকার রয়েছি।

 

 

 


তাহিরপুর উপজেলার সদরগর গ্রামের হালিমা খাতুন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে ছিলেন দুই বছর। সৌদিতে দুই বছর যে বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সেখানে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ওই নারী। দুই বছরে কোনো পারিশ্রমিক দেয়নি সৌদি মালিক। অনেক কষ্ট করে নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে আসলেও বেতনের একটা টাকাও পাননি এই নারী শ্রমিক। এখনও রাতে ঘুম ভেঙে যায় অত্যাচারের কথা মনে হলে । এখন আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। ওয়েলফেয়ার সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করে সংসারের হাল ধরেছেন বলে জানান হালিমা । 

 

 

 


এদিকে, প্রবাস ফেরত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনবার্সনে কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। সুনামগঞ্জ ওয়েলফেয়ার সেন্টার-এর সহকারী পরিচালক গাজী নাজমুল ইসলাম জানান, যারা প্রবাস ফেরত তাদেরকে আমরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করছি। তাদের এককালীন সাড়ে ১৩ হাজার টাকা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। যাতে করে তারা প্রাথমিকভাবে নিজেদের গোছাতে পারেন। অভিবাসন প্রত্যাশীদের দালালের খপ্পড়ে না পড়ে দক্ষতা অর্জন করে প্রবাসে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। এতে প্রতারিত হওয়ার শঙ্কা কম থাকবে বলে জানান তিনি।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন