ভারতে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৯ এপ্রিল থেকে পর্যায়ক্রমে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। সাতটি ধাপে এ নির্বাচন ১ জুন পর্চন্ত চলবে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে আগামী ৪ জুন। দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার শনিবার এ ঘোষণা দিয়েছেন।
এটি বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন, যেখানে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ভোট দেওয়ার যোগ্য।
সিকিম, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ এবং অন্ধ্র প্রদেশ—চারটি রাজ্যে লোকসভা ও বিধানসভার জন্য একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সাল থেকে রাষ্ট্রপতি শাসনের অধীনে থাকা জম্মু ও কাশ্মীর এ তালিকায় ছিল না। এ ছাড়া বিহার, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিলনাড়ুসহ একাধিক রাজ্যের ২৬টি বিধানসভা আসনের জন্যও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই নির্বাচনে দুই মেয়াদি শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর আঞ্চলিক মিত্ররা দুই ডজন বিরোধী দলের বিরোধপূর্ণ জোটের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। জরিপগুলো মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য সহজ জয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ৭৩ বছর বয়সী মোদি এবার বিজয়ী হলে ভারতের স্বাধীনতার নায়ক ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর পর তিনি দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসবেন।
ভোটের তারিখ ঘোষণার আগে থেকে মোদি ও তাঁর দল কয়েক মাস ধরে প্রচারণা চালাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রায় প্রতিদিনই সারা দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নতুন নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন, ঘোষণা দিচ্ছেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন এবং সরকারি-বেসরকারি সভায় ভাষণ দিচ্ছেন। বক্তৃতায় মোদি তাঁর দুই মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তুলে ধরেছেন, যার ফলে ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে এবং অবকাঠামোর পাশাপাশি দরিদ্রদের জন্য কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করেছে। হিন্দু ধর্মের সংস্কারের কারণে তাঁর দলের এজেন্ডা একটি প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল, যার মধ্যে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের জায়গায় একটি বিশাল রামমন্দিরের উদ্বোধনও রয়েছে।
মোদি বিজেপির জন্য ৩৭০টি আসন এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) জন্য চার শতাধিক আসনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, যা সংসদের ৫৪৩ সদস্যের নিম্নকক্ষে রয়েছে। ২০১৯ সালে বিজেপি ৩০৩টি এবং এনডিএ ৩৫০টিরও বেশি আসন জিতেছে।
১৯৮০ সালে গঠিত দলটির জন্য ২০১৯ সালের পারফরম্যান্স ছিল সর্বকালের সেরা।
অন্যদিকে মোদিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রায় দুই ডজন বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’ চ্যালেঞ্জ করবে। গত বছর গঠিত জোটটি অবশ্য বিজেপির বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে সক্ষম হওয়ার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে আসন ভাগ করে নেওয়ার জন্য লড়াই করছে। ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ৭৬ বছরের মধ্যে ৫৪ বছর কংগ্রেস ভারত শাসন করেছে। মোদি ক্ষমতায় আসার পর দলটি রেকর্ড নিম্নে নেমে গেছে এবং সমর্থন পুনরুজ্জীবিত করার জন্য লড়াই করছে।
কংগ্রেস বেকারত্ব, গ্রামীণ দুর্দশার কথা তুলে ধরছে। তাদের মতে, তথাকথিত অনগ্রসর জাতিগুলোর জন্য আরো ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রয়োজন এবং মোদিকে পরাজিত করার জন্য ধর্মীয় মেরুকরণ ও ঘৃণার অবসানের প্রয়োজন।
ভারতে এবার প্রায় ৯৭ কোটি মানুষ ১০ লাখেরও বেশি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। বিশাল নির্বাচনী মহড়ায় দুই হাজার ৪০০টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ৮৫ বছরের বেশি বয়সী ভোটার ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বাড়ি থেকে ভোট দিতে পারবেন। প্রায় ৮২ লাখ ভোটারের বয়স ৮৫ বছরের বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন