পবিত্র রমজান : দেশে দেশে বাহারি ইফতারি

মানুষের খাদ্যাভ্যাস মূলত নির্ভর করে ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু ও পরিবেশের ওপর। সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতিও তাতে বড় ভূমিকা রাখে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের এক সুতোয় গেঁথেছে ইসলাম। এর পরও দেশে দেশে খাদ্যাভ্যাসের ভিন্নতা দেখা যায় ইফতারে।

বিশ্বের উষ্ণ অঞ্চলে সারা দিন অভুক্ত থাকার পর রোজাদাররা ইফতারে প্রাধান্য দেন পানীয়কে। সারা দিনের তৃষ্ণা দূর করতে তাঁরা বেছে নেন নানা রকম শরবত। ‘জাল্লাব’ নামের মিষ্টি শরবতে চুমুক দিয়ে রোজা ভাঙেন ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান অঞ্চলের রোজাদাররা। গোলাপজল, খেজুর ও আঙুরের গুড় দিয়ে তৈরি এই শরবতে থাকে পাইন বাদাম আর কিশমিশ।

 

গ্লাসে ছেড়ে দেওয়া হয় কয়েক টুকরা বরফও। অন্যদিকে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ঘরে তৈরি লেবুর শরবতের পাশাপাশি চল রয়েছে প্রায় ঐতিহ্যে পরিণত পানীয় রুহ আফজা পানের। রমজানে বিভিন্ন ফলের রস ও পাউডার থেকে তৈরি পানীয়ের চাহিদাও বেশ বেড়ে যায়। আর চিকিৎসকরা যতই সতর্ক করুন, উপমহাদেশের মানুষ ইফতারে কমবেশি ভাজাপোড়া পদ আর ঝাল-মিষ্টি খাবেই।

এ তালিকায় রয়েছে পিঁয়াজু, বেগুনি, হরেক পদের কাবাব, হালিম ইত্যাদি।

 

তুরস্কের প্রাচীন অটোমান অর্থাৎ ওসমানিয়া শাসকদের যুগের সংস্কৃতিতে শরবতের মর্যাদা ছিল ব্যাপক। সেই ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে তুর্কিরা। যেকোনো খাবারের সঙ্গে এক গ্লাস শরবত না হলে তাদের যেন চলে না। তেঁতুলকে ৪১ রকমের মসলার সঙ্গে মিশিয়ে প্রায় আট ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে একটি পানীয় তৈরি করা হয় তুরস্কে।

 

এর নাম ‘ডেমিরহিন্দি’। তুর্কিদের ইফতারে এই শরবতের উপস্থিতি অপরিহার্য। ‘বাকলাভা’ নামের এক ধরনের মিষ্টান্নও ইফতারে তাদের বিশেষ পছন্দ। রমজানের ইফতারে এবং যেকোনো উৎসবের দিনে এই মিষ্টান্ন খেতে পছন্দ করে তুরস্কের মানুষ। ইসলামের যেখানে শুরু সেই আরবে গোড়ার দিকে ইফতারির প্রধান পদ ছিল উন্নতমানের খেজুর আর উটের দুধ। পরবর্তীকালে জনপ্রিয় পানীয় কফিও যোগ হয় ইফতারির টেবিলে। ইফতারে বিরিয়ানিজাতীয় লেবন হালিব ও মিষ্টিজাতীয় খাবার হারিসা কোনাফা খেয়ে থাকেন সৌদিরা। মাংস ও সবজি দিয়ে তৈরি সালুনা নামের একটি খাবার থাকে সৌদির পূর্বাঞ্চলের ইফতারে। সবখানেই যে উন্নত খেজুর আর জমজমের পানি থাকবে তা বলা বাহুল্য।

মিসরীয়রা ইফতারের সময় বাদাম দিয়ে ভরা সুস্বাদু একটি খাবার গ্রহণ করে। ‘কাতায়েফ’ নামের এই মিষ্টিজাতীয় খাবার দেখতে অনেকটা বাংলার পুলি পিঠার মতো। আফগান ইফতারে খেজুর ছাড়া সাধারণত থাকে শোরওয়া (স্যুপ), কাবাব, মাংসের দোপেঁয়াজা, পাস্তায় মোড়ানো মাংসের কিমাজাতীয় পদ ‘মান্টো’, সরু চালে ভেড়ার মাংস, মসুর ডাল, গাজর ও কিশমিশ সহকারে তৈরি কাবুলি পোলাও। বোলানি নামের সবজির পুর ভরা পরোটাজাতীয় রুটিও তারা খেয়ে থাকে ইফতারে। আফগানদের মিষ্টি পদেরও রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য।

ইন্দোনেশিয়ার রোজাদাররা খেজুরের সঙ্গে ওন্দে ওন্দে নামের এক ধরনের বড়ি দিয়ে ইফতার করেন। এটি সেখানকার রমজানের বিশেষ খাবার। পান্ডন পাতা (যা কেওড়াপাতার মতো) পিষে খেজুরের রসের সঙ্গে মিশিয়ে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করে তাতে তাজা নারকেল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ায় ইফতারির টেবিলে থাকে আখের রস, সয়াবিন, লিম্বুক (নারকেলের দুধে রান্না করা মাংসের পদ), মোরগ পোলাও ও বাবুলা মার্ক (চালের তৈরি ঐতিহ্যবাহী খাবার)। ইফতারিকে মালয়েশিয়ানরা বলে ‘বারবুকা পুয়াসা’।

মালদ্বীপের মুসলমানদের জনপ্রিয় খাবার কুলহি বোয়াকিবা। ঝাল ঝাল মাছের পিঠাজাতীয় খাবার এটি। ইফতারে তাঁরা গারুধিয়া নামের একটি খাবার খেয়ে থাকেন। এটিও মাছের পদ। পরিবেশন করা হয় ভাত, লেবু, মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে। চাল ও গরু বা খাসির মাংস দিয়ে বানানো আরেকটি খাবার তাঁরা ইফতারে গ্রহণ করেন। এর নাম থারিদ। শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা ইফতারে খান আদিক নামের একটি রুটি। তাঁদের অন্যান্য পদে থাকে নারকেলের দুধের আধিক্য।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন