গত ৫ মাসে সিলেটে দুইটি সরকারি ও একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নামে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতারকদের এসব ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবু সিলেটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই প্রতারকদের ধরতে ‘ব্যর্থ’। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, প্রথম ভুয়া বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারটি এখনো সচল রয়েছে। তবু প্রতারককে আটক করতে পারছে না পুলিশ কিংবা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সর্বশেষ সিলেট সিটি কর্পোরেশনে (সিসিক) চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে প্রতারকরা।
শনিবার (১৬ মার্চ) সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান- সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও একটি জাতীয় পত্রিকার লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিজ্ঞপ্তিটি দেখিয়ে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে অনেকের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বিজ্ঞপ্তিটিতে ফাহিমা ইয়াসমিন নামের যে সচিবের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তিনি বর্তমানে সিসিকে কর্মরত নন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে গেছেন। ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ইতোমধ্যে পুলিশকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতারকরা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরির ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মামুনুর রশিদ। কিন্তু এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।
এর আগে গত বছরেও এ হাসপাতাল এবং ডা. শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করা হয়েছিল। আগের দুই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও ধরা পড়েনি কেউ। ফলে আরও প্রতারণার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতারক চক্র।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, অধ্যক্ষের কার্যালয়, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন ভার্চুয়াল বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রথম আলো পত্রিকার লগো ব্যবহার করা হয়। এ বিজ্ঞপ্তিতে ৬টি পদের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন শর্ত ও নিয়মাবলী দিযে ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন করার জন্য বলা হয়। বিজ্ঞপ্তির নিচে ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার শিশির রঞ্জন চক্রবর্তীর নাম উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ওসমানী হাসপাতালের আরেকটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে হাসপাতালের বেশ কয়েকটি পদের নাম উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রাক্তন একজন পরিচালকের নামও উল্লেখ করা হয়, তবে সেখানে তার স্বাক্ষর ছিল না।
ওই ঘটনায়ও কর্তৃপক্ষ কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। ছড়িয়ে পড়া ওই বিজ্ঞপ্তিতেও প্রথম আলো পত্রিকার লোগোওযুক্ত করে দিয়েছিলো প্রতারকরা।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে সিলেটের করোনা ডেডিকেটেড হসপিটাল শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে (পুরাতন সিলেট সদর হাসপাতাল) চাকরির ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করে প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ১৫ নভেম্বর সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন।
জিডি সূত্রে জানা যায়, ‘সিলেট জবস’ নামক একটি সাইটে (ফেসবুক পেইজ) ‘সিলেট সদর হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারে দুজন নারী নিয়োগ দেওয়া হবে। বেতন ১৭ হাজার টাকা’ এমন একটি বিজ্ঞাপন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে একটি মোবাইল ফোন নাম্বারও দেওয়া হয় এবং বেলাল খান রাজ নামের একজন এ পোস্ট করেন। কিন্তু এ বিজ্ঞাপনের সঙ্গে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এ বিষয়ে শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সেসময় সিলেটভিউ-কে বলেন- এমন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ-ই হয় না। এ হাসপাতালে নিয়োগের প্রয়োজন হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারি নীতিমালা মেনে নিয়োগ দেওয়া হবে। এমন বিজ্ঞাপন নিশ্চয় কোনো প্রতারক চক্র প্রকাশ করেছে। এ চক্রের সদস্যদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে এবং হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।
এদিকে, অনলাইনে প্রকাশ করা শামসুদ্দিন হাসপাতালের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে দেওয়া প্রতারকের মোবাইল ফোন নাম্বারটি রবিবার (১৭ মার্চ) সচল রয়েছে। কিন্তু তারপরও তাকে বা তাদের কাউকে আটক করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিলেটভিউ-কে বলেন- তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য জানতে হবে- এসব ঘটনার কতদূর কী করা হলো।
এ প্রসঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি মো. মশিউর রহমান সোহেল সিলেটভিউ-কে বলেন- বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি আমরা। অনেক সময় দেখা যায়- যে ফোন নাম্বার তারা ব্যবহার করে সেগুলো ভিন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত। তারপরও এ প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র্যাব-৯।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন