সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনা কখন হবে, এ নিয়ে মারামারির মামলায় নাহিদ সুলতানা যুথীসহ চার আইনজীবীকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেওযা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বুধবার পৃথক জামিন আবেদনে শুনানির পর বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন দেন।
জামিন পাওয়া বাকি তিন আইনজীবী হলেন- শাকিলা রৌশন, চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা) ও শেখ জাকির হোসেন মাসুদ।
আদালতে যুথিসহ আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এম কে রহমান, শেখ আওসাফুর রহমান বুলু। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।
আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে মনোনয়ন না পেলেও সমিতির নির্বাচনে নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক প্রার্থী হয়েছিলেন।
তিনি যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। গত সোমবার (১৮ মার্চ) বিচারপতি মো. সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের একজন বিচারপতি নাহিদ সুলতানা যুথীর জামিন আবেদন শুনতে বিব্রতবোধ করেন। এ অবস্থায় তার জামিন আবেদনটি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে গেলে তিনি হাইকোর্টের এই বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতায় যুথীর সঙ্গে অন্য তিন আইনজীবীর জামিন আবেদনে শুনানির পর তাদের জামিন দিলেন উচ্চ আদালত।
আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান বুলু বলেন, ‘নাহিদ সুলতানা যুথীসহ চার আইনজীবীকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।’
আট সপ্তাহ পর জামিনপ্রাপ্তদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে কি না, জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, ‘নির্দেশনা থাকলে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হতো। যেহেতু নির্দেশনা নাই, তাই আবেদন করে এই কোর্ট থেকেই জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।’
গত ৬ ও ৭ মার্চ ছিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। দুই দিন ভোট গ্রহণের পর ৭ মার্চ রাতে ভোট গণনার সময় নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।
বহিরাগতদের উপস্থিতি ও হুমকির কথা উল্লেখ করে রাতে ভোট গণনায় আপত্তি জানান আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মনোনীত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা। কিন্তু আরেক সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী রাতেই ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান। এ সময় তাকে সমর্থন জানান বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী প্যানেল সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থীরা।
এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। নাহিদ সুলতানা যুথীর অনুসারীদের চড়াও হতে দেখা যায়। এতে আহত হন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। এ ঘটনায় পরদিন হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় মামলা করেন এস আর সিদ্দিকী সাইফ। মামলায় নাহিদ সুলতানা যুথী ও রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জন আইনজীবীকে আসামি করা হয়।
পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদসহ পাঁচ আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্য চারজন হলেন- আইনজীবী ওসমান চৌধুরী, হাসানুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম ও এনামুল হক।
আর গত ৯ মার্চ বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডের চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কাজলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১০ মার্চ আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী তাকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এরপর গত ১৮ মার্চ ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোরশেদ আলম জামিন নামঞ্জুর করলে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন কাজল। তার আবেদনটি বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে বুধবারের কার্যতালিকার ১১৪ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন