অভিযান পরিচালনা নয়, বরং শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও জিম্মি ২৩ নাবিককে জলদস্যুর হাত থেকে মুক্ত করার পক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সোমালি আঞ্চলিক পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে—এমন খবরের মধ্যে নাবিকদের স্বজন, জাহাজ মালিক ও মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন জিম্মিকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য কোনো উপায়ে নাবিকদের উদ্ধার করার পক্ষে মত দিয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা কয়েক দিন আগেই অভিযান চালিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ছিনতাই হওয়া মাল্টার জাহাজ এমভি রুয়েনের ১৭ ক্রু সদস্যকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। গত শনিবার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর এমভি আবদুল্লাহর ব্যাপারে সোমালি পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী এ ধরনের অভিযানের পরিকল্পনা করে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বরাতে জানা যায়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার এখনো এ ধরনের অভিযান চালনার পক্ষে নয়। অভিযান চালিয়ে নাবিকদের মুক্ত করতে গিয়ে জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। সে কারণে আমাদের মতামত হলো, দস্যুরা যোগাযোগ করলে তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে নাবিকদের মুক্ত করাই একমাত্র উপায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘জলদস্যুরা জাহাজটি তাদের নিরাপদ আস্তানায় নিয়ে রেখেছে।
সোমালিয়ার সরকার দস্যুদের বিরুদ্ধে এত দিন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। এখন যদি অভিযান চালাতে যায় তাহলে নাবিকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। নিরাপত্তাগত ঝুঁকি নিয়ে অভিযান না চালানোই ভালো।’
জাহাজের মালিক কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলামও কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নাবিকদের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারি না।
অভিযানের পক্ষে আমাদের সমর্থন নেই। আমরা তাঁদের শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে চাই। এ ক্ষেত্রে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। নাবিক ও জাহাজ উদ্ধার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।’
মিজানুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় জানান, তখন পর্যন্ত দস্যুদের দিক থেকে তাঁদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।
তবে তাঁরা নানা মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে নিরাপদে নাবিকদের ফিরিয়ে আনার সব প্রচেষ্টা চলছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে বলা সম্ভব নয়।
পরিবারের উদ্বেগের প্রহর
বাংলাদেশি ২৩ নাবিক জিম্মি হওয়ার পর থেকে দেশে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন রয়েছে। মাঝেমধ্যে জিম্মি নাবিকদের কেউ কেউ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ফোন করার সুযোগ পেলেও বেশির ভাগ নাবিকের স্বজনরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। এ কারণে উত্কণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে পরিবারের। তারাও অভিযান চালিয়ে নাবিকদের মুক্ত করার পক্ষে নয়।
এর মধ্যে স্বজনদের কেউ কেউ বলছে, সর্বশেষ দুই দিন ধরে নাবিকদের কোনো ফোন আসেনি। তবে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের (মালিকপক্ষ) সঙ্গে নাবিকদের যোগাযোগ হচ্ছে।’
জিম্মি থাকা জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের ছোট ভাই আবদুল্লাহ খান আসিফ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, তিন দিন আগে গত শনিবার ইফতারের আগে তাঁর ভাই ফোন করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, জিম্মি করার পর দস্যুদের এক পক্ষ তাঁদের আরেক পক্ষের কাছে তুলে দিয়েছে। এখন যারা (দস্যু) আছে, তাদের হাতে অনেক ভারী অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে।
আসিফ বলেন, এতে তিনি ধারণা করছেন এই দস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালানো হলে অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে। তাই তাঁরা অভিযানের পক্ষে নন।
ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রশংসা
সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি রুয়েন জাহাজের বুলগেরীয় নাগরিকদের উদ্ধারের ঘটনায় ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন ইউরোপীয় দেশটির প্রেসিডেন্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তাঁর পোস্টের জবাবে গতকাল নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌচলাচলের স্বাধীনতা রক্ষা, জলদস্যুতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আবদুল্লাহর দুই দস্যু আটক
বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের সঙ্গে অভিযুক্ত দুজন জলদস্যুকে আটকের কথা জানিয়েছে সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের পুলিশ। গতকাল পুলিশ জানায়, রবিবার তাদের আটক করা হয়।
প্রসঙ্গত, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী বেসরকারি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন