হাজি সেবার নামে সরকারি খরচে হজে যাওয়া বন্ধ

হজযাত্রীদের সেবা দেওয়ার নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি খরচে প্রতিবছর হজ পালন করেন। এতে প্রতিবছর সরকারের ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু হজযাত্রীদের কোনো লাভ হয় না। ফলে হাজি সেবার নামে সরকারি খরচে হজে যাওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৩ জন সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।

 

হজ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটির সভাপতি হলেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল তাঁর নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এ বৈঠক আয়োজন করেন। বৈঠকে হাজি সেবার নামে সরকারি খরচে হজে যাওয়া বন্ধসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ধর্ম সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বৈঠক শেষে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হজ সহায়তাকারী হিসেবে সৌদি আরবে যাওয়া বন্ধ করা হয়েছে।

 কারণ, তাঁদের দিয়ে হজযাত্রীদের কোনো লাভ হয় না। কিন্তু প্রতিবছর সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এ বছর থেকে শুধু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঠানো হবে। কারণ, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হজসংক্রান্ত কাজ করছেন। সৌদি আরবের রাস্তাঘাট তাঁরা চেনেন।

 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে হজ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটির বৈঠকে গতকাল এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রতিবছর ব্যয় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা : ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের হজের জন্য নানা কাজে বাংলাদেশ থেকে সরকারি খরচে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ২৭৯ জন। এর মধ্যে চিকিৎসক দলে ছিলেন ১৩৮ জন, প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে ৯৯ জন এবং দুটি কারিগরি সহায়তাকারী দলে ৪২ জন, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য গড়ে সাত লাখ টাকা করে খরচ হয়। এতে ২০২২ সালে ২০ কোটি টাকার মতো খরচ হয় সরকারের এই খাতে। করোনাকালে হজযাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ায় সহায়তাকারীর সংখ্যা কম ছিল। করোনার আগে এ সংখ্যা আরো বেশি ছিল। এতে গত ১৫ থেকে ২০ বছরে এ খাতে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মতিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, অন্তত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে হজ সহায়তাকারী হিসেবে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৌদি আরবে পাঠানো হয়। এবার তা বন্ধ করা হচ্ছে।

যে কারণে বন্ধ হচ্ছে সরকারি খরচে হজে যাওয়া : অনুমতি না নিয়ে তায়েফ ভ্রমণ করায় হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলের সাত সদস্যকে গত বছর কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় সৌদি আরবের বাংলাদেশ হজ অফিস। নোটিশে বলা হয়, হজযাত্রীদের সেবার জন্য ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে হজ প্রশাসনিক দল, প্রশাসনিক সহায়তাকারী দল এবং কারিগরি দল গঠন করে দলের সদস্যদের হজের প্রশাসনিক সেবায় সরকারি ব্যয়ে সৌদি আরবে পাঠিয়েছে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী হাজিদের সেবা না করে নিজেদের মতো করে বাইরে যাচ্ছেন। ফলে হজের সার্বিক শৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এমন কয়েকটি ঘটনার কারণে কয়েক বছর ধরে সরকারি খরচে হজে যাওয়ার বিষয়ে সমালোচনা হচ্ছিল। এবার তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে যাঁরা হজের কাজে অভিজ্ঞ তাঁদের সহায়তা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সৌদি আরবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সহায়তা নেওয়া হতে পারে।

সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা

বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বৈঠকে হজ কার্যক্রমের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এরপর হজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাসময়ে হজের কাজ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হজ ফ্লাইট নিয়ে কোনো বিপর্যয় যেন না ঘটে সে বিষয়ে বিমানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। হজযাত্রীদের বিভিন্ন পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। এয়ারপোর্ট থেকে হজ অফিস আশকোনা পর্যন্ত যাতায়াতের রাস্তা সচল ও বাধাহীন রাখতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একইভাবে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে এবার হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ১৮৫ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ২৫০ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন যাবেন।

সরকারিভাবে হজে যেতে এবার সাধারণ প্যাকেজে পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে প্রথম প্যাকেজের খরচ পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং দ্বিতীয় প্যাকেজের খরচ আট লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা ধরা হয়েছে।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন