জিম্মিদশা থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের মুক্ত করতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে মালিকদের কথাবার্তা চলছিল। মালিকপক্ষ গতকাল শুক্রবার বলেছে, ২৩ নাবিককে মুক্ত করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে সমঝোতার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি।
জিম্মিদশা থেকে নাবিকদের মুক্তি আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই হতে পারে নাকি আরো সময় লাগবে তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে জলদস্যুদের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ চাওয়ার খবর শোনা গেলেও বিষয়টি কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
জাহাজ মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্যাপ্টেনসহ ২৩ নাবিককে জলদস্যুদের কাছ থেকে যত কম সময়ের মধ্যে মুক্ত করে আনা যায় আমরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। সমঝোতা প্রক্রিয়া দিন দিন উন্নতির দিকে বলা যায়। কিন্তু নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এ কারণে সব বিষয় জানানো সমীচীন হবে না।
’
ঈদের আগে মুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে এই মুহূর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’
নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দস্যুদের সঙ্গে মালিকপক্ষের যোগাযোগ হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তা ঠিক আছে। নাবিকরা কত দ্রুত মুক্তি পাচ্ছেন তা জলদস্যুদের ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে।
সরকার ও মালিকপক্ষ চেষ্টা করছে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে।’
জাহাজে দুম্বা ও ছাগল
এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার সময় জাহাজটিতে নাবিকদের জন্য ২৫ থেকে ৩০ দিনের খাবার ছিল। এর মধ্যে জলদস্যুরা সেই মজুদের খাবার খেয়েছে। তবে জাহাজে বতর্মানে খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। জলদস্যুরা জাহাজে দুম্বা ও ছাগল নিয়ে গেছে।
মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেছেন, নাবিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে বৃহস্পতিবার জলদস্যুরা জাহাজে দুম্বা ও ছাগল নিয়ে গেছে। তবে খাবারের সমস্যা আপাতত না থাকলেও পানির কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, জাহাজ পরিচালনার কাজের এবং নাবিকদের ব্যবহারের পানির কিছুটা অভাব সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশুদ্ধ খাবার পানির তেমন সমস্যা নেই।
আম্মু আমি দ্রুত আসব : মেয়েকে বাবা
সর্বশেষ গতকাল জাহাজ থেকে নাবিকদের কেউ কেউ তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এতে স্বজনরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও নাবিকরা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের উদ্বেগ যাচ্ছে না।
জিম্মি নাবিক মোহাম্মদ সামশুদ্দিন শিমুলের স্ত্রী ফারজানা সুলতানা রিমা গতকাল বিকেলে জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী এদিন দুপুরে ফোন করেন। প্রায় ১৫ মিনিট স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছেন উল্লেখ করে ফারজানা সুলতানা কালের কণ্ঠকে বলেন, “নাবিকরা সবাই ভালো আছেন। তাঁদের সঙ্গে এখনো দুর্ব্যবহার করা হয়নি। অনেকের কাছে শুনছি ঈদের পরে তাঁরা মুক্তি পেতে পারেন। আমার স্বামীও কিছুটা এ রকম ধারণা দিয়েছেন। আজকে আমার মেয়ের সঙ্গেও তাঁর বাবা কথা বলেছেন। এ সময় মেয়ের জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আম্মু আমি দ্রুত আসব’।”
প্রসঙ্গত, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী বেসরকারি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন