বিবাহ বার্ষিকী 

রাজলক্ষ্মী মৌসুমী 

গল্পটা গল্পই থাকবে।আসুননা একটু পড়ে দেখি অনুভূতিটা কেমন হয়?
খুব অল্প কথায় গল্পের শেষটুকু বুঝতে পারবেন।

আজ প্রজ্ঞা  আর দীপনের শুভ বিবাহ বার্ষিকী। 
প্রজ্ঞা সবসময়ই শান্ত,ভদ্র, মেধাবী,কম কথা বলে।
দীপন ঠিক  তার উল্টো স্বভাবের।
প্রজ্ঞা  ও দীপন দুজনেই চাকুরীজীবি।
শ্বশুর / শ্বাশুড়ি / দেবর / ননদ  নিয়ে সুখের সংসার।
পরিবারের সবাই  সবার জন্য যত্নশীল।  প্রজ্ঞা তার  বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে।  সেখানেও সে খুব আদরে সোহাগেই বড় হয়েছে। 
কিন্তু  তার জীবনে একটি  বড় সমস্যা ছিলো। কাউকে  বলার মতোও কেউ ছিলো না  বাবা / মা দুজনেই হার্টের রোগী।   তাই  তার সমস্যার কথা শুনার পর  কোন অঘটন  ঘটে তাই আর বলা হয়নি।
প্রতিবেশী এক বখাটে ছেলের উৎপাতে স্কুল জীবনেও প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারেনি। অনুপস্থিত  থাকার কারণে  স্কুলেও  তার জবাবদিহি করতে হয়েছে। অতিষ্ঠ  হয়ে স্কুল প্রধানের কাছে লজ্জা ভেঙ্গে সব কথা বললো   পাড়ার ছেলে সুজনের কথা। সুজনও তার বাবার একমাত্র  সন্তান।  বিত্তবান  ঘরের ছেলে। পড়াশুনা নেই স্বাধীন ভাবে চলাফেরা। বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান।  এই সন্তানের জন্য বাবা মাকে  অনেক অপমানিত হতে হয়েছে। স্কুল থেকে সুজনের বাবাকে ডাকা হলো। 
স্কুল প্রধান উনার ছেলের সব কথা বললেন। সুজনের উৎপাতে কোন মেয়ে স্কুল কলেজে  ঠিক মতো যেতে পারে না ।  ছেলের সমস্ত কুকর্মের কথা উনি জানেন কিন্তু  কী বলবেন  ভেবে পাচ্ছেন না।  
অবশেষে বললেন আপনারাই ওর ব্যবস্থা নিন আমার কোন আপত্তি  নেই। 
তারপর  প্রজ্ঞার আরো বিপদ  হলো। স্কুল থেকে আসার পথে দুই বান্ধবীকে  তুলে নিয়ে গেলো পাশের গ্রামে। গ্রামবাসীর জন্য ওদের কোন ক্ষতি করতে পারেনি।নিরাপদেই রাতের মধ্যে ওদের পৌঁছে  দিলো গ্রামের লোকেরা।এর পর থেকে শান্তি  গ্রামের  লোকেরা পুলিশের  কাছে ধরিয়ে দিলো। 
অনেক দিন প্রজ্ঞা  ভালোই  ছিলো,চিন্তামুক্ত ছিলো।
প্রজ্ঞা পড়াশুনা শেষ করে চাকুরীতে যোগ দিয়ে 
সুস্থ জীবন যাপন করছিলো।
অনেকদিন সুজনের  দেখা নেই কী হলো কোথায় গেলো।ওর বাবা মাও নিশ্চিন্ত হয়ে আছেন।কিছুই  জানা গেলো না।
হঠাৎ  করেই প্রজ্ঞার  বিয়ে হয়ে গেলো। কোন সমস্যা নেই। প্রজ্ঞা ও দীপন দুজনেই একসাথে অফিসে যায়
একসাথে আসে। এভাবেই  এক বছর চলে গেলো। 
প্রজ্ঞা খুব ভালো গান জানে তাই  বাড়ীর সবার আবদার
সন্ধ্যার পর গান শুনাতেই হবে।। 
আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী  শ্বাশুড়ি  অফিসে যেতে দিলেন না দীপনকেও যেতে বারণ করলেন। বাড়ীতে সবাই ব্যস্ত।এর মধ্যেও শ্বশুরের আবদার গান শুনাতে হবে। কথা রক্ষা করলো প্রজ্ঞা। সারাবাড়ী বিয়ে বাড়ীর মতো সাজানো হচ্ছে। লোকজনকেও নিমন্ত্রণ  করা হয়েছে। 
ননদ তাকে পার্লারে নিয়ে গেলো ওর পছন্দ মতো সাজিয়ে আনলো। সন্ধ্যার পর থেকে লোক জন আসা শুরু করলো।খুব  আনন্দে সবকিছু  শেষ হলো।
রাত ১২ টা বাজতেই দীপনের একটা ফোন আসলো।  দীপন ইচ্ছে করেই ফোনটা ধরলো না।  অনেকক্ষণ ধরে যখন ফোন বাজছিলো দীপনের বাবা ধরলেন।ফোনের কথা শুনেই দীপনকে বললেন দীপন তোমার স্যার এক্সিডেন্ট করেছেন। হাসপাতালে নিয়ে গেছে খুব  খারাপ অবস্থা।
দীপন আর কোন কথা না বলে বেরিয়ে গেলো। হাসপাতালে যাবার আগে তা ২/১ জন কলিগকে ফোন করে আসতে বললো। দীপন হাসপাতালের কাছে যেতেই  তাকে কয়েজন  লোক এলোপাতাড়ি  মারতে শুরু করলো।  সাথে সাথে কলিগরাও আসলো এসেই দেখে এই অবস্থা দীপনের। তারাও দীপনকে বাঁচানোর জন্য ওদেরকে আক্রমণ  করলো।
বাড়ীতে প্রজ্ঞা  বাড়ীর সবাই ছটফট  করতেছিলো। বাইরে  থেকে চিৎকার শুনা গেলো আগুন আগুন। বাড়ীর সাজানো লাইট  সব নিভে গেলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার, কে কোথায় কেউ বুঝতে পারছে না।
বার বার ফোন করেও দীপনের  সাথে কথা বলতে পারছে না কেউ। ফোন বন্ধ অনেকক্ষণ।
প্রজ্ঞা তার ঘরেই ছিলো। হঠাৎ দরজা বন্ধ করার  শব্দ হলো।
দীপন দেখো বিদ্যুৎ নেই।চিৎকার শুনলাম আগুন লেগেছে কিন্তু  আগুন  আসলে কোথাও লাগেনি। বলো তোমার স্যার কেমন আছেন?  অন্ধকারে হাতমুখ ধোবে কীভাবে?  আই,পি, এস এ কী হলো কাজ করছে না।
প্রজ্ঞা এক দমে কথাগুলো বললো শুধু হুম কথাটা  শুনলো।
প্রজ্ঞা  একটু থমকে গেলো। আবার বললো দীপন তুমি কথা বলছো না কেনো? আমার খুব ভয় লাগছে।টর্চলাইটটা কোথায় রেখেছো Please আনো তাড়াতাড়ি। 
ওমনি তাকে জাপটে ধরলো । প্রজ্ঞা এবার বুঝতে পারলো তার ঘরে অন্য কেউ ঢুকেছে।চিৎকার করে সবাইকে ডাকার চেষ্টা করেও পারছে না মুখে চাপ দিয়ে ধরে আছে। প্রজ্ঞা  বুঝতে পেরেছে বিয়ের আগে থেকে সুজন আমাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
সুজন বললো  এখন তোকে কে রক্ষা করবে। তোর দীপনও আর কোনদিন আসবে না। এই কথা শুনেই প্রজ্ঞা  পাগলের মতো বললো কী বললি শয়তান,।তখনি সে সুজনের চোখে  দুই হাতের নখ দিয়ে খোঁচা দিলো।চোখে আঘাত লাগতেই প্রজ্ঞা  ছাড়া পেয়ে টেবিল ল্যাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করলো সাথে সাথে সুজন অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো।দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হয়ে রান্নাঘর থেকে বটি হাতে  নিয়ে চিৎকার  করে বলতে লাগলো তোমরা জানো আসো সবাই, তোমরা দেখে যাও এই শয়তানটা দীপনকে মেরে ফেলেছে।  আমি ওকে ছাড়বো না।দৌড়ে গিয়ে বটি দিয়ে কোপ দিলো সুজনের পেটে।প্রজ্ঞার কোন হুঁশ  ছিলোনা। বাড়ীর সবাই চিৎকার করে বললো  এমন কিছু কাজ   করোনা যাতে সারা জীবন এই কঠিন সত্যকে মেনে নিতে হয়।
কোন কথাই শুনলো না প্রজ্ঞা। 
বিদ্যুৎ আসলো। হাসপাতাল থেকে ফোনও আসলো দীপন মারাত্মক ভাবে আহত। হাসপাতালে ভর্তি  হয়েছে কলিগরাও।
সব কিছুর মূলেই ছিলো সুজন। সুজনের বন্ধুরা পুলিশের  হাতে ধরা পরেছে।
অবশেষে একজন অসুর, লম্পট, ধর্ষককে  বধ করলো  একজন নারী।  এভাবেই চলুক না  দূর্গা মায়ের অসুর  বধের মতো ধর্ষক বধ।  
প্রজ্ঞা কী কারণে এমন কাজ করলো এগুলো  তো পরে।  আগে তার জেল হলো।দীপন একা হয়ে গেলো।
ভালোবাসা কী জোর করে পাওয়া যায়?  ধর্ষক সুজন তার  একমাত্র প্রমাণ।

এমন বিবাহ বার্ষিকী  যেনো কারো জীবনে আর না আসে।।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন