মানুষের ক্ষুধাসমূহের মধ্যে পেটের ক্ষুধা অর্থছাড়া মিটবে না, লোভের ক্ষুধা কিছুতেই মিটবে না! তবে মস্তিষ্কের ক্ষুধা আর মনের ক্ষুধা মেটাতে --------
রাজু আহমেদ। কলাম লেখক।
ক্ষমতা, সম্মান, শ্রদ্ধা, ভয়, কিংবা প্রভুত্ব সব নাকি টাকায় মেলে! সুখ টাকায় মেলে কি-না সেটা পয়সাওয়ালারা তালাশ করছে! তবে ভোগবাদীরা সব কিছুর মুলে অর্থকে অর্থবান করেছে! এই যে পড়াশুনা, হাঁটাচলা, বেড়ে ওঠা এর সবকিছুর গন্তব্য নাকি অর্থের পথে! টাকায় পদ-পদবী জুটে, টাকায় সম্মান প্রশংসা রটে, টাকা অন্যায়কে ন্যায় বানায় বটে! টাকায় কত কালো ধলো হলো কিন্তু সৌন্দর্য-মাধুর্য জোটে? অর্থহীন কবি নজরুল-জীবননান্দের দুঃখের অন্ত ছিল না কিন্তু প্রত্যেক শব্দ-অলংকারের সৃষ্টি-ব্যঞ্জনায় তারা সুখী হননি একথা কলিকালের দুষ্মতরাও বলতে পারবে না!
মানুষের ক্ষুধাসমূহের মধ্যে পেটের ক্ষুধা অর্থছাড়া মিটবে না, লোভের ক্ষুধা কিছুতেই মিটবে না! তবে মস্তিষ্কের ক্ষুধা আর মনের ক্ষুধা মেটাতে অর্থ নয় ভিন্নকিছু দরকার! যা মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়, অনন্ত আনন্দলোকের দিশা দেয় সেটা সৃষ্টিশীলতা। শুভকাজে জড়িয়ে থাকা। মনের রাজ্যে স্বাধীন হওয়ার ক্ষমতা, ইচ্ছাকে মুক্ত করা বাসনা সবার থাকে না, পূরণ করতেও পারে না।
ভোগের সুখ ক্ষণস্থায়ী। অপবিত্রতার পথ গলিয়েও সেটা উপস্থিত হতে পারে! তবে সৃষ্টিসুখের উল্লাস, অপরের মুখে হাসি ফোটানোর সোল্লাসে যারা মেতেছে, বাহির হয়েছে ঘরের বাইরে, দেখেছে শিশিরের শোভিত ভোর, শুনেছে পাখির ডাক, নেচেছে ভ্রমরেে তালে তারে অসুখী বানায় এমন সাধ্য কার এইখানে?
অর্থ দিয়ে প্রলোভনের ফাঁদ পাতা যায়, কাউকে মোহে ডোবানো যায়, কারো ইচ্ছা দখল করা যায় কিন্তু জয় করা যায় না! অর্থের আবেদন অনুৎসাহের নয় তবে যে অর্থ জীবনের অনর্থ তৈরি করে, যা ব্যক্তিত্ব বিকিয়ে অর্জন করতে হয়, যা দেহ হারিয়ে পক্ষে আনতে হয় তা ঘোরতর পাপ! যেখানে কারো অধিকার খর্ব হয়, কারো স্বাধীনতার কবর হয় সেই বর্বর পথে না হেঁটেও সুখী হওয়া যায়। যারা স্মরণীয় আছেন তাদের অর্থের চেয়েও সুন্দর চিন্তার পুরুত্ব বেশি ছিল! সেই সুগন্ধির রেশ এখনও বহমান আছে। আমরা পাচ্ছি।
অর্থে অর্জিত ক্ষমতার মসনদ মৃত্যুর পর টেকে? ক্ষমতাহীন হতেই সব দাপট কাটে। বনের ঘুঘুটিও ফিরে তাকায় না। পাখির যে চশমা লাগে না সেজন্য সে অসঙ্গতি ভালো দেখে। ক্ষমতাহীন হতেই সুসময়ের মাছিরাও পটি করে যায়! মহাকাল কত প্রভূধর মিটিয়ে দিয়েছে মাটির সনে।কে তাদের খোঁজ জানে? অথচ ভুখা রুমি, জীর্ণ গালিব, আশ্রমে বাস করা রাউলিং-কে ভুলতে পেরেছে এদের? সুখী হতে পেটের ক্ষুধার চেয়ে মস্তিষ্কের ক্ষুধা নিবারণ জরুরি। যারা বুঝেছে তারা উঠেছে আলোক শিখা হয়ে। গেয়েছে জীবনের জয়োগান।
অর্থ যাদের চূড়ান্ত পরিনতি, ন্যায়-অন্যায়ের ভেদরেখা ভুলে যাওয়া যাদের স্বভাব-বাহির থেকে তাদের চাকচিক্যময় মনে হতে পারে কিন্তু ভেতরে ভেতরে দাহ হচ্ছে দিবানিশি। বুকের ভেতরে তুষের আগুনের তেজ ও স্থায়িত্ব নাকি একটু বেশি? এদের না আছে সুখের ঘর আর না আছে বিশ্বস্ত পর! যে ভালোবাসা, যা সমীহ, যেটুকু সম্মান তা ঐ অর্থে বদৌলতে! প্রকৃত সম্মান যাদের জন্য থাকে তা প্রকাশিত নাও হতে পারে তবে সেসব ব্যক্তিদের নাম উচ্চারিত হলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়, সম্মানে মন বিগলিত হয়, ভাষা সুন্দ হয়ে ওঠে!
কাজেই শান্তির প্রশ্নে অর্থের চেয়ে আরও শক্তিশালী কিছু আছে! সেট কর্ম, অবশ্যই সৎকর্ম। যা মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, কর্তার মস্তিষ্ককে ঝাঁকি দেয় সে কখনো সময়কে ফাঁকি দিতে পারে না। একফোঁটা সুখের জন্য যত আয়োজন, যত উৎসব তা প্রকৃতি পৃথিবীতে, নদীর ঘাটে, সাগরের ঢেউয়ে থাকে। পাহাড়ের প্রকৃতি, নিভৃতের পথচারী-সুখের সংজ্ঞা তারা জানে! যাদের মস্তিষ্কে রিপু ধরেছে, চিন্তা হয়েছে বাসী-এই দুনিয়ার তামাম লোভে তারাই নিত্য জীবনে জড়ায় ফাঁসি!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন