তখন কবুল কবুলে আর বকুলের গন্ধ থাকে না! 

মান অভিমানের পরে একজনে আগ বাড়িয়ে সম্পর্ক পাতাতে এলে মনে করা হচ্ছে, সে হেরে গেছে! দোষ তার-ই ছিল বোধহয়! সময় কাটানোর বিকল্প সহজলভ্য হওয়ায় দাম্পত্যে পারস্পরিক টান কমছে!

রাজু আহমেদ।  প্রাবন্ধিক।  

স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্ক ক্রমশ জটিলতার দিকে যাচ্ছে! দু'জনের কেউ কাউকে ছাড় দিতেই চায় না! যেনো রোজকার সম্পর্কে নারাজি বেশি! অভিমান কেউ-ই ভাঙে না। ভেতরে কষ্টের পাহাড় জমে তবু ঝর্ণা ঝরায় না। নির্যাতনের হারও বোধহয় বাড়ছে! স্বামী-স্ত্রী' রেষারেষিতে অসুখী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। লাশের সংখ্যাও বাড়ছে! 

 

মান অভিমানের পরে একজনে আগ বাড়িয়ে সম্পর্ক পাতাতে এলে মনে করা হচ্ছে, সে হেরে গেছে! দোষ তার-ই ছিল বোধহয়! সময় কাটানোর বিকল্প সহজলভ্য হওয়ায় দাম্পত্যে পারস্পরিক টান কমছে!  অনুভবের অনুভূতি  আজকাল অনেকটাই ভোতা!  দু'জনের বাইরের কারো বুদ্ধি কুবুদ্ধির চাল চালছে। হররোজ দূরত্ব কেবল বাড়ছে। বিশ্বাস কমছে আর ঘর ভাঙছে। 

 

অথচ স্বামী-স্ত্রী'র মধ্যকার সম্পর্কে প্রতিযোগিতা, বড়ত্ব-আমিত্ব  কিংবা রেষারেষি না থাকলেই শোভিত হতো। সুন্দরের জন্য যে সন্ধির প্রয়োজন, ভালো থাকার জন্য যে ত্যাগের প্রয়োজন, ভালো রাখার জন্য যে বিশ্বাসের দরকার সেটা দাম্পত্যে থাকলে তবেই সময় উপভোগ্য হয়ে ওঠে! মধুর লাগে সব কিছু।  সম্পর্ক যদি হাতাহাতির হয় তবে মন-মনের সাথে গুতাগুতি করবে কখন! আরও তো কত কত গুতাগুতির আবহ পুষে রাখতে হয়! পূর্ণিমা আসে, পূর্ণিমা যায়! চাঁদ-তারায় দরখা নাহি পায়! 

 

সংসারে যে ভেজাল তা ক্ষোভে, লোভে এবং মোহে বাড়িয়েছে বেশি। ছাড় দেয়ার মানসিকতা না রাখলে, ক্ষমা করার উদারতা না দেখালে হরিহর আত্মাও জঙ্গমে বদলে যায়! তখন শয়তান শান্তিমত মস্তিষ্কে সঙ্গম করতে শুরু করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে থাকবে মধুরতা, পাশাপাশি আনবে শীতলতা, কাছাকাছি রাখবে ছায়া! সেখানে তিক্ততা ছড়ালে, অভিঘাত বাড়ালে তাতে তৃতীয়পক্ষের কুবুদ্ধিতে খেলাধুলার সুযোগ বাড়ে! শয়তান এসে নাটাই লাড়ে!  

 

দাম্পত্য তো সেই মধুরতা যা কথায় কথায় বাড়বে, ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় রাঙবে এবং ইশারায় ইশারায় আঙবে। সেখানে দোষ ধরে রাখলে, জনমের তরে বুঝিয়ে দেয়ার বাসনা দেখালে তবে আর সুসম্পর্ক টেকাবে কে? আমি বড় বলে বসে থাকলে, ভুল ধরে রাখলে, নিজের মত সব বুঝ বুঝলে সেই সম্পর্ক আর বাঁচাবে কে? নিজের বুদ্ধিতে ডোবাও ভালো কিন্তু পরের বুদ্ধি নিয়ে যদি স্বামী/স্ত্রী'কে দেখিয়ে দেওয়ার বাসনা জাগে, রাগে সম্পর্কের দেয়াল বাড়ে তবে শান্তি ঘর থেকে পালিয়ে যায়। তখন আর কবুল কবুলে বকুলের গন্ধ থাকে না! 

 

মিল-অমিল নিয়ে মিলেমিশে থাকাকেই দাম্পত্য বলে! এটা লাগবেই, ওটা করবেই-এমন আল্টিমেটামে সম্পর্কের শুদ্ধতা বাঁচে না। বরং দু'জন দু'জনার দিকে বোঝাবুঝি ভুল ভেঙে আগালে দু'টি মন কাছাকাছি হওয়ার ভরসা পায়। মধুর মধুর বঁধুর কথা সৃষ্টি হয়। তখন কেউ কাউকে আঘাত করতে পারে না। বরং একটা জীবন আরেকটা জীবনকে ভালো রাখতে একজীবনের সবচেষ্টা বিনিয়োগ করে। এভাবেই মিলেমিশে সুন্দরতম দাম্পত্যের বন্ধনে জীবন এগিয়ে যায়, দু'জন রাঙিয়ে যায়! বাহির থেকে দেখে যে সম্পর্ককে ঈর্ষা করা যায়, যা মুগ্ধতা ছড়ায় সেটাই মহোত্তম সৌন্দর্য! দু'জনের বন্ধনের মাধুর্য।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন