তাইওয়ানে পঁচিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত অন্তত ৯ জনের মৃত্যু এবং আহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েয়ে। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে দ্বীপের পূর্ব দিক ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। শক্তিশালী কম্পনটি যখন আঘাত হানে তখন মানুষ কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
দেশটির হুয়ালিয়েন প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে দ্রুত ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলটিতে বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে। এ ছাড়া সেতু এবং টানেল ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভূমিধসের কারণে রাস্তাগুলোর ক্ষতি হয়েছে। তাইওয়ানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেই বুধবার হুয়ালিয়েন পরিদর্শনে যাবেন বলে তার দপ্তর জানিয়েছে। আগামী মাসে তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের কথা রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সর্বশেষ আপডেটে ‘ন্যাশনাল ফায়ার এজেন্সি’ জানিয়েছে, ভূমিকেম্পে এক হাজার ৩৮ জন আহত হয়েছে এবং এখনো ৫২ জন নিখোঁজ রয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা ৯।
সব মৃতদেহই হুয়ালিয়েন প্রদেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তারকো ন্যাশনাল পার্কে সকালে হাইকিং করতে গিয়ে তিনজন ব্যক্তি ভূমিকম্পে নিহত হয়েছেন। ফায়ার এজেন্সি বলেছে, উদ্ধারকারীরা ড্রোন এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে পার্কে আটকে পড়া মানুষের সন্ধান করছে। এ ছাড়া পার্কের একটি হোটেলে যাওয়ার পথে প্রায় ৩৮ জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়। তাদের কয়েকজন সহকর্মীকে অবশ্য নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি প্রতিবেশী চীন, ফিলিপাইন এবং জাপানেও অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল তাইওয়ানের হুয়ালিয়েন শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠের ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে ছিল।
কিছু ছবিতে দেখা গেছে, কয়েকটি ভবন বিপজ্জনকভাবে হেলে পড়েছে। উদ্ধারকারীরা হেলে পড়া ভবনগুলোর জানালায় মই লাগিয়ে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধার করছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর ফুটেজে আরো দেখা গেছে, ধসে পড়া আবাসিক ভবন, বাড়ি ও স্কুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাইওয়ানের বিদ্যুৎ পরিচালনা কম্পানি তাইপাওয়ার জানিয়েছে, ভূমিকম্পের সময় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলেও সরবরাহ আবার স্বাভাবিক হয়েছে। তাইওয়ানের দুইটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভূমিকম্পের কোনো প্রভাব পড়েনি।
এদিকে প্রতিবেশী জাপানের কর্তৃপক্ষ প্রথমে সতর্ক করে বলেছিল, ৩ মিটার পর্যন্ত সুনামির ঢেউয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বিশাল এলাকায় আঘাত হানতে পারে। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা পরে এই সতর্কতা তুলে নেয় এবং বাসিন্দাদের প্রায় এক সপ্তাহ পরবর্তী আফটারশকের জন্য সতর্ক থাকতে বলে।
ফিলিপাইনের সিসমোলজি এজেন্সিও ভূমিকম্পের পরপরই সুনামির সতর্কতা জারি করেছিল। বাসিন্দাদের উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র ভূমিকম্পের প্রায় দুই ঘণ্টা পর জানায়, সুনামির হুমকি এখন কেটে গেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের দক্ষিণ-পূর্ব ফুজিয়ান প্রদেশের কিছু অংশে কম্পন অনুভূত হয়েছে। তাইপেইয়ের সিসমোলজি সেন্টারের পরিচালক উ চিয়েন ফু বলেছেন, ‘সমগ্র তাইওয়ান এবং উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়... যা ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল।’
গতকাল ভূমিকম্পের পর কমপক্ষে ৯টি ৪ বা তার বেশি মাত্রার আফটারশক দেশটিতে আঘাত হানে। এর আগে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাইওয়ানে ৭.৬-মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ লোক মারা যায় এবং পাঁচ হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে যায়।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন