২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে শীর্ষ ধনীর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি তাঁদের সম্পদও কমেছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে ধনীদের সম্পদ বেড়েছে। বেড়েছে ধনীর সংখ্যাও। যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো বাধাও তাঁদের সম্পদ বৃদ্ধি আটকে রাখতে পারেনি।
ফলে বিশ্বে এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নেয়ার রয়েছেন। এ বছর বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৭৮১। গত বছরের চেয়ে এ সংখ্যা ১৪১ জন বেশি। তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪.২ ট্রিলিয়ন ডলার।
২০২৩ সালের চেয়ে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বেড়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০২৪ সালের ধনীদের নতুন তালিকায় এ তথ্য জানিয়েছে। ধনীদের তালিকায় এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো সবার ওপরে বার্নার্ড আর্নল্ট ও তাঁর পরিবার। ফোর্বস ম্যাগাজিনের রিচেস্ট ইন ২০২৪ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পরিবার নিজেদের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বার্নার্ড আর্নল্ট ইলন মাস্ককে হটিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর আসন লাভ করেন। এলভিএমএইচ চেয়ারম্যান ও সিইও বার্নার্ড আর্নল্ট ও তাঁর পরিবারের সম্পদমূল্য বেড়ে হয়েছে ২৩৩ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪ সালের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। ৫২ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তার সম্পদ বেড়ে হয়েছে ১৯৫ বিলিয়ন ডলার। অ্যামাজনের সহপ্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস এবারের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছেন।
তাঁর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ১৯৪ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ স্থানে আছেন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তাঁর সম্পদ ১৭৭ বিলিয়ন ডলার। পঞ্চম স্থানে আছেন ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। তাঁর সম্পদমূল্য ১৪১ বিলিয়ন ডলার।
শতকোটিপতিদের তালিকায় স্থান পাওয়া দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের সম্পদমূল্য গত বছরের তুলনায় বেড়েছে, মাত্র এক-চতুর্থাংশ ধনীর সম্পদমূল্য কমেছে। শীর্ষ ২০ জন ধনীর সম্পদমূল্য সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তাঁদের সম্পদমূল্য বেড়েছে সামগ্রিকভাবে ৭০ হাজার কোটি ডলার। জাতীয়তার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে মার্কিন ধনীদের।
ফোর্বসের ধনীদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছেন দানবীর, ওরাকল অব ওমাহা ও বিনিয়োগ গুরু হিসেবে খ্যাত ওয়ারেন বাফেট। তাঁর সম্পদ ১৩৩ বিলিয়ন ডলার। সপ্তম স্থানে আছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, তাঁর সম্পদমূল্য ১২৮ বিলিয়ন ডলার। অষ্টম স্থানে আছেন লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্সের স্বত্বাধিকারী স্টিভ বালমার। তাঁর সম্পদমূল্য ১২১ বিলিয়ন ডলার। নবম স্থানে আছেন ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। তাঁর সম্পদমূল্য ১১৬ বিলিয়ন ডলার। দশম স্থানে আছেন অ্যালফাবেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। তাঁর সম্পদমূল্য ১১৪ বিলিয়ন ডলার।
সবচেয়ে বেশি বিলিয়নেয়ার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এই দেশটির বিলিয়নেয়ার রেকর্ড ৮১৩ জন। তাঁদের মোট সম্পদ ৫.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন। দেশটির বিলিয়নেয়ার ৪৭৩ জন। তাঁদের সম্পদ ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। যদিও দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। আবাসন খাতসহ বিভিন্ন খাতে যে সংকট চলছে, তার জেরে সামগ্রিকভাবে চীনা ধনীদের সম্পদমূল্য কমেছে ৩০ হাজার কোটি ডলার। দেশ হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে রয়েছেন ২০০ বিলিয়নেয়ার। এর আগে আর কখনো এতসংখ্যক ভারতীয় বিলিয়নেয়ার ছিলেন না। ২০২৩ সালে ভারতীয় বিলিয়নেয়ার ছিলেন ১৬৯ জন। আলোচিত ভারতীয় শীর্ষ ধনী ও একসময় এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির সম্পদমূল্য ৮৪ বিলিয়ন ডলার। তাঁর অবস্থান এখন ১৭তম।
২০২৪ সালের শীর্ষ এই শতকোটিপতিদের তালিকা তৈরিতে ফোর্বস গত ৮ মার্চ থেকে স্টকমূল্য ও মুদ্রার বিনিময় মূল্য ব্যবহার করছে। যদিও এ তালিকা করার পর বেশির ভাগ ধনীর সম্পদমূল্য কমেছে। যা ফোর্বস ম্যাগাজিনের রিয়াল টাইম ধনীর তালিকায় দেখা যায়।
আজিজ খানের সম্পদ এক বছরে বাড়ল ১১০০ কোটি টাকা
বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় এ বছর ২৫৪৫তম হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুহাম্মদ আজিজ খান। তিনি সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান। ফোর্বস ম্যাগাজিনের রিয়াল টাইম হিসাব অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী এ ধনীর সম্পদমূল্য বেড়ে হয়েছে ১১০ কোটি ডলার। এক বছরে সম্পদ বেড়েছে ১০ কোটি ডলার (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১০০ কোটি টাকা)। ২০২৩ সালে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি ডলার।
৬৯ বছর বয়সী এ উদ্যোক্তা ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরের ৪১তম শীর্ষ ধনী হয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ১৯৭৩ সালে তাঁর ব্যবসা শুরু করেন। বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিকস ও অবকাঠামো খাতের ব্যবসা পরিচালনা করছে সামিট গ্রুপ।
ফোর্বসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে জাপানি প্রতিষ্ঠান জেরার কাছে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হয়। ফলে সে বছর কম্পানির মূল্য দাঁড়ায় ১৫০ কোটি ডলার। আজিজ খানের তিন সন্তান। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁর মেয়ে আয়েশা।
বিশ্বের ধনীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান সিঙ্গাপুর। বাণিজ্যিক সুবিধা যার অন্যতম কারণ। তুলনামূলক কম শুল্ক গ্রহণের কারণে বিশ্বে সিঙ্গাপুরের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। দেশটিতে অনেক খাতেই কর ছাড় রয়েছে। নানা ক্ষেত্রে বাধাহীন লেনদেনের কারণে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন