২৯ রোজা ধরে ঈদের ছুটি হলে এবার লম্বা ছুটি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সরকার ৩০ রোজা ধরে ঈদের ছুটি নির্ধারণ করায় নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঈদের ছুটি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একইভাবে বেসরকারি চাকরিজীবীরাও সংশয়ের মধ্যে আছেন।
কারণ, ২৯ রোজা শেষে যদি চাঁদ ওঠে, ঈদ হয়, তাহলে অফিস শেষে ঢাকা থেকে দূরের জেলার মানুষ বাড়ি ফিরে ঈদ করতে পারবেন না। আবার ৩০ রোজার পরে ঈদ হলে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। সুবিধামতো ছুটিও নিতে পারছেন না বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৩০ রোজা হিসাবে ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন ধরা হয়েছে।
২৯ রোজা হলে ঈদ হবে ১০ এপ্রিল। এতে ঈদের আগের দিন ৯ এপ্রিল অফিস করতে হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ফলে ৯ এপ্রিল অফিস শেষে পরদিন ঈদ করতে বাড়ি যেতে পারবে না অনেক জেলার মানুষ। অথচ ২৯ রোজা ধরে ছুটি হলে ওই সপ্তাহে ঈদের আগে অফিস করতে হবে মাত্র এক দিন (৮ এপ্রিল)।
এদিকে ২৯ রোজা ধরে রেল, নৌ, বিমান ও বাসের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। ৩০ রোজা হলে চাঁদ দেখার পর ১০ এপ্রিল রেল, নৌ, বিমান ও বাসের কিছু টিকিট পাওয়া যাবে। কিন্তু ঈদের আগে অগ্রিম টিকিট না পেলে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাওয়া অনেক কষ্টকর হবে।
ছুটি নেবে ২৯ না ৩০ রোজা ধরে?
গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, অর্থ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, সড়ক পরিবহন ও সেতু, স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটির দিন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। কারণ, এসব মন্ত্রণালয়-বিভাগের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঈদের মধ্যেও নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়।
তাঁরা ঈদের আগে এক দিন না দুই দিন অতিরিক্ত ছুটি নেবেন তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। ২৯ রোজা হলে এক দিন ছুটি নিতে হবে, আবার ৩০ রোজা হলে দুই দিন ছুটি নিতে হবে। আবার এক দিন বা দুই দিন ছুটি নিলে ১০ দিনের লম্বা ছুটি পাওয়া যাবে। কিন্তু বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়-বিভাগের কর্মকর্তারা এক বা দুই দিনের ছুটির মাধ্যমে ১০ দিনের লম্বা ছুটি দিতে নারাজ। কারণ সরকার এবার ছুটির বিষয়ে কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক দিনের ছুটি বাড়ানোর সুপারিশও মানেনি। তাই কর্মকর্তারা চাচ্ছেন লম্বা ছুটি দেওয়া হবে না।
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, এ বছরের রমজান ৩০ দিন ধরা হয়েছে। ৮ ও ৯ এপ্রিল অফিস খোলা থাকছে। তবে ওই দুই দিন নিয়মানুযায়ী সেই ছুটি নেওয়া যাবে। কেউ চাইলে ঐচ্ছিক ছুটি নিতে পারবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার দুই অফিস সহায়ক বলেন, এবারের ঈদে ১০ দিনের ছুটির সুযোগ ছিল। কিন্তু ৩০ রোজা হিসেবে ছুটি নির্ধারণ হওয়ায় সেটা হচ্ছে না। কারণ বেশির ভাগ কর্মকর্তা ঈদের আগে দুই দিনের ঐচ্ছিক ছুটি দিতে নারাজ। কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দিনের ছুটি নিলে ঈদের মোট ছুটি হবে ১০ দিন। এতে মন্ত্রণালয়ে কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এখনো কেউ ছুটির জন্য আবেদন করেনি। করবে কি না সেটা জানি না। এ ছাড়া ছুটি নিয়ে সরকারের যে সিদ্ধান্ত সেভাবেই হবে। কেউ বাড়তি ছুটি নিতে চাইলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিতে হবে।
একইভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি অনুবিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনো ছুটির আবেদন পড়েনি। কারণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্তের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদুল হাসান (প্রশাসন অনুবিভাগ) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার অনুবিভাগে এখনো কোনো কর্মকর্তা ছুটির আবেদন করেননি। তবে দু-একজন মৌখিকভাবে আলোচনা করেছেন। যাঁরা ছুটি নিতে চান, তাঁরা আজ বৃহস্পতিবার আবেদন করতে পারেন। তবে ঈদের পরেই বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ), বাজেট প্রস্তুতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ সেবামূলক কিছু জরুরি কাজ আছে। আর কাজ থাকলে বেশি দিন ছুটি নেওয়া যাবে না।
সরকার সাধারণত ২৯ রোজা ধরেই বর্ষপঞ্জি তৈরি করে। চাঁদের কারণে ২৯ রোজা শেষে ঈদ না হলে সরকার নির্বাহী আদেশে এক দিন ছুটি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এবার ৩০ রোজা ধরেই বর্ষপঞ্জি করা হয়েছে। এ কারণে বর্ষপঞ্জিতে ঈদের সম্ভাব্য তারিখ দেখানো হচ্ছে ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তাঁরা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অফিস ধরে ১০ এপ্রিলের টিকিট কাটতে চান। কিন্তু ২৯ রোজা হলে ১০ এপ্রিলেই ঈদ হবে। চাকরিজীবীদের রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়তে হবে। একই সংকট বেসরকারি চাকরিজীবীদেরও।
কয়েকজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, সরকারের সঙ্গে মিল করে এবার তাঁদের ঈদের ছুটি হবে। এ জন্য তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।
এ বিষয়ে অন্তত আটটি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বহু বছর ধরে চলে আসা রীতি অনুযায়ী ২৮ রমজান অফিস শেষে ঈদের ছুটি শুরু হয়। এবার আমাদের মৌলিক ছুটি বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ যানজট কমাতে বিভিন্ন মহল থেকে ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এখন বাড়তি ছুটি তো নেই-ই, মৌলিক ছুটিও বাদ দিচ্ছে সরকার।’
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন