দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডাব্লিউসিকে)-এর সাত সাহায্যকর্মী ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হওয়ার পর তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গাজা উপত্যকার অনেক ফিলিস্তিনির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে, কিভাবে পরিবারের জন্য খাদ্য জোগাড় করবেন। অন্য একটি মার্কিন দাতব্য সংস্থা আনেরাও এমন ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ায় কাজ স্থগিত করে দিয়েছে। তারা দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডাব্লিউসিকে)-এর সঙ্গে কাজ করত।
সংস্থা দুটি একসঙ্গে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে সপ্তাহে দুই মিলিয়ন খাবার পরিবেশন করে আসছিল।
জাতিসংঘ আগেই সতর্ক করে বলেছিল, গাজার আনুমানিক ১.১ মিলিয়ন মানুষ (অর্ধেক জনসংখ্যা) খাদ্যসংকটে ভুগছে। গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা ও চলমান যুদ্ধের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ডাব্লিউসিকে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করায় সমুদ্রপথে সাইপ্রাস থেকে আসা খাদ্য সহায়তার সরবরাহের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে।
ডব্লিউসিকে গাজার উত্তরে সাহায্যের গতি বাড়াতে এবং দুর্ভিক্ষ এড়াতে গত মাসে থেকে খাদ্য সহায়তার সরবরাহে সাহায্য করছিল।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল সতর্ক করে বলেছে, ‘ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা পুরো সাহায্যব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।’ জাতিসংঘের প্রাক্তন মানবিক প্রধান জ্যান এগল্যান্ড বলেছেন, “গাজার জনগণের জন্য ডাব্লিউসিকে-এর কার্যক্রম স্থগিত করার অর্থ ‘আরো দুর্ভিক্ষ, আরো মৃত শিশু, আরো মহামারী রোগ’ কারণ মানুষ প্রচণ্ড অপুষ্টিতে ভুগছে।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অক্টোবর থেকে অপুষ্টির কারণে অন্তত ২৭ শিশু মারা গেছে।
ডাব্লিউসিকে-এর প্রতিষ্ঠাতা শেফ জোসে আন্দ্রেস বুধবার রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং চিন্তা করছি কিভাবে আমরা কাজ চালিয়ে যেতে পারি।’
হামলার আগে ডাব্লিউসিকে গাজায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। যেখানে ৪০০ ফিলিস্তিনি কর্মী এবং তিন হাজার মানুষ ৬৮টি কমিউনিটি রান্নাঘর পরিচালনা এবং সমগ্র অঞ্চলজুড়ে তা বিতরণ ব্যবস্থায় পরোক্ষভাবে কাজ করেছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজায় পৌঁছে যাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে এক লাখ ৯৩ হাজার টন সহায়তার ১২ শতাংশ ডাব্লিউসিকে প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।
মার্কিন দাতব্য সংস্থা ‘আনেরা’ ডাব্লিউসিকে-এর সহযোগিতায় দিনে এক লাখ ৫০ হাজার খাবার সরবরাহ করছিল।
তারা বলেছে, ‘কাজ বন্ধ করে দেওয়ার প্রভাব ফিলিস্তিনিদের ওপর গিয়ে পড়বে।’ সংস্থাটিরও লজিস্টিক কো-অর্ডিনেটর এবং তার ছেলে মার্চে দেইর আল-বালাহে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছিল। যদিও ইসরায়েলি বাহিনীকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেন ওই হামলা চালানো হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা চাইলেও ইসরায়েলিরা কোনো উত্তর দেয়নি।
গত সোমবার রাতে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডাব্লিউসিকে)-এর একটি গাড়িতে হামলা হয়। তখন ওই সাত সাহায্যকর্মী নিহত হন। ডাব্লিউসিকে বলছে, দাইর আল বালার একটি গুদাম থেকে চলে যাওয়ার সময় ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলায় কর্মীরা নিহত হয়েছেন। তারা সমুদ্রপথে গাজায় নেওয়া ১০০ টনের বেশি খাবার ওই গুদামে রেখে আসতে গিয়েছিলেন। নিহত কর্মীদের মধ্যে পোল্যান্ডের একজন, যুক্তরাজ্যর তিনজনসহ অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার এক দ্বৈত নাগরিকও ছিলেন।
ডাব্লিউসিকে দাতব্য সংস্থার লোগো থাকা সত্ত্বেও তাদের গাড়িতে হামলা করা হয়েছে। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, ‘গাড়িটিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী টার্গেট করেই আক্রমণ চালিয়েছে।’ তারা আরো বলেছে, ‘আমাদের গতিবিধি সম্পর্কে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই জানত।’ নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের সেক্রেটারি-জেনারেল এবং জাতিসংঘের প্রাক্তন মানবিক প্রধান জ্যান এগল্যান্ড বিবিসিকে বলেছেন, ‘কর্মীদের অবস্থান সম্পর্কে ইসরায়েলি বাহিনীকে তথ্য দিয়েছিল ডাব্লিউসিকে। সব সময় ইসরায়েলি বাহিনীকে সাহায্য করে এসেছে সংস্থাটি। এই হামলা পরিকল্পিত।’ তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি এই হামলাকে একটি ‘গুরুতর ভুল’ বলে বর্ণনা করেছে। তিনি সাহায্য কর্মীদের সুরক্ষার জন্য আরো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
কিন্তু সাহায্যকারী গোষ্ঠীগুলো বলছে, তারা নিশ্চিত নয় যে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি আদতে রাখা হবে কি না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯৬ জন ফিলিস্তিনি সাহায্যকর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন