চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই। এবার উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে দেখা যাওয়া পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ নিয়েও বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয় উৎসাহের জোয়ার। বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে, গতকাল সোমবার চাঁদের প্রায় ৪ মিনিটের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চলে এসে সূর্যালোক আটকে দেওয়ার কথা। এতে উত্তর আমেরিকার কয়েক লাখ মানুষ দিনের বেলাতেই মিনিট চারেক সময় কাটাবেন অন্ধকারে।
কিছু গবেষকের জন্য মূল্যবান চারটি মিনিট হবে বিজ্ঞানের কিছু পরীক্ষার জন্য একটি অনন্য সুযোগ। এমন কিছু পরীক্ষা যা অন্য সময় অসম্ভব। একদল গবেষক সূর্যগ্রহণের পথে রকেট পাঠানো, চিড়িয়াখানায় গিয়ে বন্যপ্রাণীদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা, বিশ্বজুড়ে রেডিও সংকেত পাঠানো ও বিশাল ক্যামেরা দিয়ে মহাকাশে চোখ রাখার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নেবেন বলে কথা।
উপগ্রহ চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে এসে সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দিলে দিনের বেলাতেই চারপাশ কিছু সময়ের জন্য প্রায় রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যায়।
একে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বলে। অবস্থানের কারণে সূর্য আংশিক ঢাকা পড়লে তাকে বলা হয় আংশিক গ্রহণ। বিশ্বের অনেক জায়গা থেকে লোকজন উত্তর আমেরিকা যাচ্ছে এই বিরল অভিজ্ঞতার জন্য। নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যাডাম হার্টস্টোন-রোজ টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থ চিড়িয়াখানায় কাটাবেন।
তিনি গরিলা ও জিরাফ থেকে গ্যালাপাগোস কচ্ছপ পর্যন্ত নানা প্রাণীর সম্ভাব্য অদ্ভুত আচরণের ওপর নজর রাখবেন। পৃথিবীতে হঠাৎ অন্ধকার নেমে এলে অনেক প্রাণীর মধ্যে উদ্বিগ্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অ্যাডাম হার্টস্টোন-রোজ বলেন, এর আগেরবার ফ্লেমিঙ্গো পাখিরা অদ্ভুত কাজ করেছিল। গ্রহণ শুরু হওয়ার পর প্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা ছানাগুলোকে ঝাঁকের মাঝখানে জড়ো করতে থাকে। তারা এমনভাবে আকাশের দিকে তাকাচ্ছিল যেন ওপর থেকে কোনো শিকারি পাখি এসে হানা দেওয়া নিয়ে চিন্তিত।
গ্রহণ শুরু হওয়ার পর উত্তর আমেরিকার কিছু অংশে যখন অন্ধকার নেমে আসবে, তখন সূর্যের একটি অংশ চাঁদের প্রান্ত দিয়ে উঁকি দেবে। এটি হচ্ছে সূর্যের আবহমণ্ডল বা করোনা, যা নিয়ে মানুষ বহু শতাব্দী ধরে গবেষণা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সূর্যের এই রহস্যময় অংশটি চুম্বকায়িত প্লাজমা দিয়ে তৈরি। এর তাপমাত্রা ১০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। পূর্ণ সূর্যগ্রহণ সূর্যের এই করোনা নিয়ে গবেষণার বিরল সুযোগ দেয়। কারণ, সাধারণত সূর্যের প্রচণ্ড উজ্জ্বলতা এর করোনাকে দেখা অসম্ভব করে তোলে। তবে গতকাল সোমবার টেক্সাসের বিজ্ঞানীরা সূর্যের করোনার দিকে ক্যামেরা তাক করে ছবি তুলতে সক্ষম হবেন।
যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাসার বিজ্ঞানীরা সৌরঝড় বিষয়ে আরো জানতে পারার প্রত্যাশা করছেন। সৌরঝড় হচ্ছে সূর্যের জ্বলন্ত পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়া প্লাজমা। বিজ্ঞানীদের কাছে আরেকটি ধাঁধা হলো করোনা সূর্যের প্রান্তে থাকা সত্ত্বেও অগ্নিকুণ্ডের মতো কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠের চেয়েও তাকে অনেক বেশি গরম মনে হয় কেন। ‘করোনাল ম্যাস ইজেকশন’ নামে প্লাজমার যে বিশাল ঝাপটা সূর্য মহাকাশে ছুড়ে দেয় তাও ভালোভাবে দেখতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। এই প্লাজমার ঝাপটার কারণে পৃথিবী থেকে পাঠানো স্যাটেলাইটের কাজে অনেক সময় সমস্যা হয়।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন