ঈদের ছুটির আগে কর্মদিবস রয়েছে মাত্র এক দিন—আজ মঙ্গলবার। অথচ গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শিল্প-কারখানায় মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। এখনো বেতন-বোনাস না দেওয়ায় গতকাল সোমবারও ধামরাই, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। বাংলাদেশ শিল্প পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিল্প-কারখানায় (শিল্প পুলিশের আটটি ইউনিটের অধীনে) বেতন-বোনাস দেওয়া পরিস্থিতির একটি তালিকা প্রকাশ করে শিল্প পুলিশ। এতে দেখা যায়, শিল্প পুলিশের আট ইউনিটের অধীনে সব ধরনের মোট কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ৪৬৯টি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে চার হাজার ৬২০টিতে, বাকি রয়েছে চার হাজার ৮৪৯টি। সে অনুযায়ী বেতন পরিশোধের হার ৪৮.৭৯ শতাংশ এবং বেতন না দেওয়ার হার ৫১.২১ শতাংশ।
এ ছাড়া ঈদ বোনাস দিয়েছে সাত হাজার ৭০৩টি কারখানা, বোনাস বাকি রয়েছে এক হাজার ৭৬৬টি কারখানার। বোনাস দেওয়ার হার ৮১.৩৫ শতাংশ এবং না দেওয়ার হার ১৮.৬৫ শতাংশ।
শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে শিল্প মালিকদের সংগঠনভিত্তিক সদস্য কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া পরিস্থিতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে গতকাল পর্যন্ত। এতে দেখা যায়, শিল্প পুলিশের আটটি ইউনিটের অধীনে বিজিএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে এক হাজার ৫৬১টি।
এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে ৬৪১টি, বেতন বাকি ৯২০টির। বেতন না দেওয়ার হার ৫৮.৯৪ শতাংশ।
বিকেএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ৬২৬টি। এর মধ্যে মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে ১৯১টি, বাকি ৪৩৫টির। বোনাস দিয়েছে ৪৮২টি, বাকি ১৪৪টির।
আর বিটিএমইএর সদস্যভুক্ত ৩৪৭টি কারখানার মধ্যে মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে ১৭৭টি, বাকি ১৭০টির। বিটিএমইএর কারখানাগুলোর মধ্যে বোনাস দিয়েছে ৩২১টি, বাকি ২৬টির।
এদিকে বেপজার অধীনে থাকা ৪২৩টি কারখানার মধ্যে মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে ৩৪৭টি, বাকি রয়েছে ৭৬টির। বোনাস দিয়েছে ৪১৪টি, বাকি ৯টির। শিল্প পুলিশের আওতায় থাকা ৯২টি পাটকলের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে ৭৪টি, বাকি ১৮টির। বোনাস দিয়েছে ৮২টি, বাকি ১০টির।
ছুটি নিয়ে জটিলতা
শিল্প পুলিশের অধীনে থাকা ৯ হাজার ৪৬৯টি কারখানার মধ্যে গতকাল ছুটি দেওয়া হয়েছে দুই হাজার ৯৮৪টিতে এবং গতকাল পর্যন্ত ছুটি হওয়া কারখানার সংখ্যা তিন হাজার ৩৮১টি। ঈদেও ছুটি দেওয়া হবে না এমন কারখানা ১১৬টি। এ ছাড়া বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৬৩১ এবং আংশিক খোলা রাখা কারখানার সংখ্যা ৭১টি।
সার্বিক বিষয়ে শিল্প পুলিশের ইউনিট-২ গাজীপুর অঞ্চলের অঞ্চল প্রধান মোহাম্মদ সরোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম ৮ এপ্রিলের মধ্যেই বেশির ভাগ শিল্প-কারখানায় বেতন-বোনাসসহ ছুটি দেওয়া হয়ে যাবে; কিন্তু তা হয়নি। এখনো প্রায় অর্ধেক শিল্প-কারখানায় বেতন-বোনাস বাকি রয়েছে। ঈদের আগে কর্মদিবস রয়েছে শুধু আগামীকাল (মঙ্গলবার)। এর মধ্যে বেতন না হলে তো সংকট দেখা দেবে। সার্বিক পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
শতভাগ বেতন-বোনাস হয়েছে
অবশ্য বিজিএমইএ বলেছে, শতভাগ গার্মেন্টস কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া হয়ে গেছে এবং কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বিজিএমইএ ভবনের নুরুল কাদের মিলনায়তনে চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, শ্রমিকদের শতভাগ বেতন-বোনাস দিয়ে ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন বাড়ালেও পোশাকের দাম বাড়ছে না। নিয়মিত দরপতন হচ্ছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা খাতে অনেক খরচ করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে পোশাকশিল্প শ্রমিকদের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা সহায়তা ও শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষা সহায়তার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বিজিএমইএ। দুই লাখ টাকা করে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন ২০০ জন, ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন ৫০০ জন।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন