বেনজীরের দুর্নীতি: ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত হাতে পেলেই ব্যবস্থা’

বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত পেলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

তিনি বলেছেন, ‘সঠিক তথ্য-উপাত্ত হাতে এলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালের কণ্ঠে যেদিন নিউজ ছাপা হয়েছে, সেদিনই আমরা দেখেছি। এটা এখন পুরোপুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত।

 

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সংস্থাটির আইনজীবী বলেন, ‘কমিশন থেকে বলাই আছে, যেসব তথ্য আসবে সেগুলো যদি যৌক্তিক এবং বিশ্বাসযোগ্য হয়, তবে কমিশন ব্যবস্থা নেবে। এখানে (বেনজীরকে নিয়ে কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদন) অনেক যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় রয়েছে। এই ধরনের বিষয়গুলো অ্যানালিসিস (বিশ্লেষণ) করে তারপর এগোতে হবে।’

অন্য অনেক বিষয়ে কমিশনের তৎপরতা দেখা গেলেও বেনজীরের বিষয়ে ধীরগতিতে এগোচ্ছে কি না জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, ‘তথ্য-উপাত্ত যখন পত্র-পত্রিকায় আসে, তখন সে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে করতেও তো সময় লাগে।

 

আমাদের হাতে কোনো জিন-পরি নেই, আজকে এলো কালকে ফুঁক দিয়ে দিলাম। আমাদের ডাটা কালেকশন করতে হবে, দেখতে হবে বিশ্বাসযোগ্য কোনটা। এখানে ব্যক্তি মুখ্য নয়, মুখ্য হলো ডাটা। ডাটা অ্যানালিসিস করতে হবে আমাদের।

 

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি দুই পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ পায় গত ৩১ জানুয়ারি। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদের খোঁজ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার।

 

পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরো ১০ বিঘা জমি। উঠে এসেছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রামে বেনজীরের পরিবারের মালিকানায় গড়ে তোলা অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র সাভানা ইকো রিসোর্টের খোঁজও।

শুধু এই এক ইকো রিসোর্টই নয়, পুলিশের সাবেক এ প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের নামে অন্তত ছয়টি কম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে।

এ প্রতিবেদন প্রকাশের দুই দিনের মাথায় আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে গত ২ এপ্রিল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত ভাওয়াল রিসোর্ট। ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল প্রায় ১০৬ বিঘা জমির ওপর এটির যাত্রা শুরু। পরে এতে যোগ হয় আরো ৫৪ বিঘা জমি। ৬২টি ভিলার সঙ্গে হেলিপ্যাড, রেস্তোরাঁ, জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুল, স্পাসহ অনেক কিছু রয়েছে এর ভেতর।’

কালের কণ্ঠ বলছে, এই রিসোর্টের একটি বড় অংশই গড়ে তোলা হয়েছে বনের জমি জবরদখল করে। এতে নেপথ্যে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। বেনজীর আহমেদ এই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিক। আর বনের জমি দখল করে রিসোর্ট গড়ে তোলার সময় বেনজীর আহমেদ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার।

পর পর এই দুই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয় প্রতিবেদন দুটি। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন ছাপে। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ নিয়ে কথা বললেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন