সামরিক সহযোগিতা অনেকটা বাড়াতে রাজি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। চীনের প্রভাবের মোকাবেলায় এই সিদ্ধান্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা অনেকগুলো বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন। ইউক্রেনকে সাহায্য করা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, মহাকাশ নিয়ে একযোগে কাজ করা, এমনকি চাঁদে জাপানের মহাকাশচারীকে পাঠানো পর্যন্ত।
কিন্তু কিশিদার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল উত্তর-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের সহযোগিতা বাড়ানো। চীন এখানে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েই যাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া সমানে উন্নত ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা করছে। রাশিয়ার সঙ্গে কোরিয়ার সম্পর্কও উন্নত হচ্ছে।
বুধবার জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানান বাইডেন। তারপর দুজনেই জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক কখনো ভাঙবে না। বাইডেন বলেছেন, জাপান প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াচ্ছে এবং এই সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন। এর ফলে দুই দেশের জোট শক্তিশালী হবে।
সামরিক সহযোগিতার গুরুত্ব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ও গোটা বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুই দেশের জোট খুবই জরুরি। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী কিশিদাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ দুই নেতার আলোচনার পর ৭০টি ক্ষেত্রে দুই দেশের চুক্তি হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- দুই দেশের মধ্যে আরো শক্তিশালী সামরিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত। ১৯৫১ সালে মার্কিন-জাপান নিরাপত্তা চুক্তির পর দুই দেশের সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এত বড় সহযোগিতার সিদ্ধান্ত আর হয়নি।
টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক স্টিফেন নাগি বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে এখন অনেক ঘটনা ঘটছে। সবই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। একটা অংশের ঘটনার প্রভাব অন্যদিকে পড়ছে। ফলে গোটা বিশ্ব অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।’
ইউক্রেনের সংঘাত, উত্তর কোরিয়ার উন্নত অস্ত্র পরীক্ষা, তাইওয়ানের খাঁড়িতে বেইজিং ও তাইপের উত্তেজনা সবই নিরাপত্তার দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাউথ চায়না সি-তে চীন আরো দ্বীপ নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গাজায় সামরিক অভিযান চলছে। এই সব কিছুর প্রভাব বাণিজ্য, নিরাপত্তার ওপর পড়ছে।
স্টিফেন ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘জাপান কঠিন অবস্থার মধ্যে আছে। কারণ, তারা সমুদ্রপথে বাণিজ্যের ওপর বিপুলভাবে নির্ভর করে। তাই তারা ভূরাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। আর সমমনোভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা-সহযোগিতা বাড়িয়ে এটা করা সম্ভব।’
নতুন জোট চায় জাপান
নিরাপত্তা ও বাণিজ্য নিয়ে জাপান এতটাই চিন্তিত যে তারা কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ (কিউএসডি)-র ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। চার দেশের এই মঞ্চে জাপান ছাড়া বাকি তিন দেশ হলো- যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। এ ছাড়া ২০২৩ সালে ক্যাম্প ডেভিডে জাপান, আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। জুলাইয়ে ওয়াশিংটনে ন্যাটোর বৈঠকে জাপানও যোগ দিচ্ছে। জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা চুক্তি হয়েছিল ১৯৫১ সালে, ফলে তা আপডেট করা তাদের পক্ষে খুবই জরুরি।
কিশিদার এই সফর দুই দেশের সামনে এই সুযোগ এনে দিয়েছে। বাইডেন ও কিশিদার বৈঠকে তাই সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিকের পরিস্থিতি ও তা মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ। জাপান জানিয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে তারা ডিজিপি-এর দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করবে। তারা উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে, যা জাপানকে প্রত্যাঘাত করার ক্ষমতা দেবে। এ ছাড়া এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে এবং আমেরিকা ও ইতালির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বানাতে চায় জাপান।
জাপানের দক্ষিণের দ্বীপে নতুন ঘাঁটিও তৈরি করা হচ্ছে, তাইওয়ান থেকে যা কয়েক শ কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া জলপথের সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য তারা বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন