বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণ ক্রমে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চঝুঁকিতে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রথমে রয়েছে চীন এবং দ্বিতীয় ভারত। এমন পরিস্থিতিতে নতুন প্রজন্মের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সুচিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডাব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি আক্রান্ত রোগী ৩০ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ২৫ কোটি ৪০ লাখ হেপাটাইটিস বি ও পাঁচ কোটি হেপাটাইটিস সি ভাইরাস বহন করছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্তদের অর্ধেকের বয়স ৩০ থেকে ৫৪ বছর। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ পুরুষ এবং ১২ শতাংশ শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেপাটাইটিসের দুই-তৃতীয়াংশই বাংলাদেশ, চীন, ইথিওপিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, রাশিয়া ও ভিয়েতনামে। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে প্রায় ৮৩ লাখ মানুষ আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮৬.৭৪ শতাংশ হেপাটাইটিস বি ও ১৩.২৬ শতাংশ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত।
গত সপ্তাহে পর্তুগালে বিশ্ব হেপাটাইটিস সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত ডাব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুসারে ১৮৭টি দেশের নতুন তথ্যে দেখা গেছে, ভাইরাল হেপাটাইটিসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২০২২ সালে ১৩ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ১১ লাখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেপাটাইটিস সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন তিন হাজার ৫০০ জন মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস বি থেকে ৮৩ শতাংশ এবং হেপাটাইটিস সি থেকে ১৭ শতাংশ।
২০২২ সালের শেষ নাগাদ দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে এবং ৩ শতাংশ অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা পেয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ ডায়াগনসিস হয়েছে এবং ২০ শতাংশ ওষুধ পেয়েছে। ২০২২ সাল নাগাদ ৭০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি চিকিৎসা পেয়েছে ও এক কোটি ২৫ লাখ হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা পেয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক যে লক্ষ্যমাত্রা এর অনেক কম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে বিশালসংখ্যক মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। তারা কিন্তু তা জানে না। বেশির ভাগ জানতে পারে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর। এদের সবার কিন্তু লিভার ক্যান্সার হবে না, অনেকের হবে। প্রতিবছর এ রোগে মারা যায় প্রায় ২২ হাজার মানুষ। মহামারি করোনার মতো এটি প্রকট হয়েছে।
ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, ‘হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তদের ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগে লিভার সিরোসিস হতে। বি ভাইরাসে এত বেশি সময় লাগে না। আমাদের জনসংখ্যা যেহেতু অনেক বেশি, সুতরাং একটা পর্যায়ে গিয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে। এ জন্য প্রথমে প্রয়োজন সচেতনতা, দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসার আওতায় আনা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতিটা এখন থেকেই নেওয়া উচিত। না হলে রোগটি যে হারে ছড়াচ্ছে সামনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা অসম্ভব হতে পারে। কারণ আমাদের রোগীর অনুপাতে লিভার বিশেষজ্ঞ, হাসপাতাল—কোনোটিই নেই, সহজলভ্য ওষুধের ব্যবস্থা করা যায়নি।’ ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
এ ছাড়া গাইডলাইন তৈরি, ওষুধ তৈরির সক্ষমতা প্রয়োজন, বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া ও ইপিআইয়ের মাধ্যমে টিকার ব্যবস্থা করা দরকার। বিশেষজ্ঞ তৈরি করা, আর এর বিভাগ বৃদ্ধির পাশাপাশি পদ সৃজন করতে হবে। নতুন করে লোকবল তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক হেপাটোলজি বিষয় যুক্ত করতে হবে, যাতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে। একই সঙ্গে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থা করতে হবে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন