মৌলভীবাজার প্রতিনিধি \ ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যরে অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠে। টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে যেন পা ফেলার ঠাই নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে আগত দর্শনার্থীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অবলোকন করছেন। সবাই ব্যাস্ত নিজের হাতে থাকা মোবাইলে এই ক্ষনের মুহুর্তের ছবি তুলে স্মৃতি হিসেবে জমা রাখতে। দিন বাড়ার সাথে সাথে আগত পর্যটকদের গাড়ির সারি ও লম্বা ছিল এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলো। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা যায়, ঈদের দিন বৃহস্পতিবার থেকে গত রোববার ৫টা পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। ঈদের লাউয়াছড়ায় কালের রেকর্ড পর্যটক ১১হাজার ২শত জন পর্যটকের আগমন ঘটে। অন্যদিকে ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য জেলার কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টীম ও টুরিস্ট পুলিশের একটা টিম মিলিয়ে মোট দুটি টিম মিলিয়ে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় টহল দিতে দেখা যায়। জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস- ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমশেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্ধসঢ়;মীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমশেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলীনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু নিচু পাহাড় বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মণিপুরি, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে এসব আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। মাধবপুর লেক ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মিলে দুর-দুরান্ত থেকে আগত পর্যটনপ্রেমী ভ্রমণ পিয়াসুদের। এদের মধ্যে স্বপরিবারে ও কাপলদের ঘুরতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার লোকজনের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন জীব বৈচিত্র্যের অপরূপ সমাহার ঘুরে দেখতে। ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়ায় ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী রাখিব হেসেন, কলেজ ছাত্রী জিবলি আক্তার জানান, লাউয়াছড়ার বন একটি সমৃদ্ধ বন। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য আর জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনটি যে কেউ দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে। তারা জানান, আমরা অকে বছর ধরে চেষ্টা করছি আসার জন্য, কিন্তু সময় হয়ে উঠেনা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টারের শাহিন জানান, এই প্রথম পর্যটকের উপচেপড়া ভির ছিল এমন। যা অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি। বলা যেতে পারে রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এত পর্যটক কখনো আগে আসেনি। ১১ হাজার ২শত পর্যটক আসে আজ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। সরকারের রাজস্য আদায় হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। আমরা পর্যটকদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।’ লাউয়াছড়া ইকো টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়াসহ সব পর্যটনকেন্দ্রে প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়। ঈদের দিন বৃষ্টি থাকলেও পর্যটকের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো ছিল। কিন্তু ঈদের পরের ৭ দিন পর্যন্ত পর্যটক বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।’ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, এ ঈদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম অধিক ঘটেছে। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। ঈদের দিন থেকে ১০দিন পর্যটকের আগমন বেশি লক্ষ্য করা যায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন