মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় তিনজনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। গত সোমবার এই তিন পদেই অন্য সব প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিন প্রার্থী বিজয়ের পথে রয়েছেন।
শুধু শিবচরে নয়, আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে মোট ২৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ছয়জন চেয়ারম্যান, ৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ আহমেদ খান জানান, নির্বাচনের প্রথম ধাপে মোট ২৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। শিবচরে চেয়ারম্যান পদে মো. সেলিম মিয়া ও ফাহিমা আক্তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাঁদের মধ্যে ফাহিমা আক্তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বি এম আতাউর রহমান ও মো. মনিরুজ্জামান মনির মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও মো. মনিরুজ্জামান মনির প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
ফলে বি এম আতাউর রহমান একক প্রার্থী হওয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনি বিজয়ের পথে। একইভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আয়শা সিদ্দিকা ও শিফাতুন হক অহনা—দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও শিফাতুন হক অহনা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ফলে এই পদেও আয়শা সিদ্দিকা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে।
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার আহমেদ আলী বলেন, শেষ দিনে শিবচর উপজেলায় বেশ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
যে কারণে তিন পদে তিনজন প্রার্থী থাকায় ভোটগ্রহণ হবে না। তিনজনই বিজয়ের পথে। এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া না গেলেও তাঁরাই মূলত নির্বাচিত।
ইসি সূত্র বলছে, বাগেরহাট সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, মাদারীপুরের শিবচর এবং ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় তিনটি পদেই একক প্রার্থী থাকায় তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া গাইবান্ধার সাঘাটা, নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান পদেও একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা, কক্সবাজার সদর, রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা ও চুয়াড়াঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থী হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, দিনাজপুরের হাকিমপুর, পাবনার বেড়া, কুষ্টিয়া সদর, মৌলভীবাজারের বড়লেখা এবং চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার প্রার্থী।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই ধাপে গত সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। প্রথম ধাপের ভোটে বৈধ প্রার্থী এক হাজার ৭৮৬ জন। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান—এই তিন পদে প্রথম ধাপে মোট এক হাজার ৮৯০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
স্বজনরাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের তালিকায়
নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী হাতিয়ায় চেয়ারম্যান পদে, ভাইস চেয়ারম্যান কেফায়েত উল্যাহ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামছু নাহার একক প্রার্থী হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে আশিক আলীর মা আয়েশা ফেরদাউস এবং জাপা প্রার্থী মুশফিকুর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
ফেনীর পরশুরামে চেয়ারম্যান পদে ফিরোজ আহম্মদ মজুমদার, ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ সফিকুল হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সামছুন নাহার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। ফুলগাজীর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মঞ্জুরা আজিজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে মো. শওকত আলী দেওয়ান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ও মতলব উত্তর উপজেলায় লাভলী চৌধুরী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। লাভলী ওই আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ভাইপোর স্ত্রী। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হয়েছিলেন আনিছ উজ্জামান। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাজমুল হাসান সোহেল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসিনা গাজীও একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হচ্ছেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সিংড়ার অপহৃত দেলোয়ার
নানা ঘটনার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন অপহরণ ও মারধরের শিকার দেলোয়ার হোসেন। গতকাল দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আব্দুল লতিফ শেখ স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেলোয়ার হোসেনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
রিটার্নিং অফিসার আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, কোনো পদে একক প্রার্থী থাকলে আইন অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরদিন রিটার্নিং অফিসার তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে পারেন।
গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করে একটি মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সিংড়ার সাঐল গ্রামের নিজ বাড়ির সামনে থেকে তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, শিবচর (মাদারীপুর), সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি।)
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন