তীব্র তাপপ্রবাহের পরিধি আরো বেড়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৫ মৃত্যু

রাজধানীসহ সারা দেশে গতকাল বুধবার তাপমাত্রা ও গরমের অনুভূতি বেড়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়ায় তীব্র তাপপ্রবাহের আওতাধীন এলাকার সংখ্যাও বেড়েছে। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের বেশির ভাগ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ বৃহস্পতিবারও তীব্র গরম ও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ (গতকাল) তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আগামীকালও (আজ) পরিস্থিতি প্রায় একই রকম থাকতে পারে। চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও আবহাওয়ার খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

তবে মাসের শেষ দিকে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

 

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, আগের দিনের তুলনায় গতকাল স্থানভেদে তাপমাত্রা বেড়েছে ১-২ ডিগ্রি। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল বাগেরহাটের মোংলায়, ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজধানীতে এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৮ ডিগ্রি। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯.২ ডিগ্রি। স্বাভাবিকের চেয়ে অঞ্চলভেদে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৭ ডিগ্রি বেশি ছিল।

 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল দেশের পাঁচ বিভাগ ও আরো ১৩ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর মধ্যে এক বিভাগ ও ছয় জেলায় ছিল তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০-৪১.৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা)।

খুলনা বিভাগ এবং দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।

 

এ ছাড়া ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের বাকি অংশ এবং বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু (৩৬-৩৭.৯ ডিগ্রি) থেকে মাঝারি (৩৮-৩৯.৯ ডিগ্রি) তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ ও আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে শনিবার দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর গরম অব্যাহত থাকতে পারে সারা দেশেই।

বৃষ্টি নিয়ে সুখবর নেই

এদিকে বৃষ্টি নিয়ে এখনো তেমন কোনো সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গা ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। এ সময় দেশে সাধারণত যে কালবৈশাখী ও বৃষ্টি হয় তা কার্যত অনুপস্থিত।

গরমে আরো পাঁচ মৃত্যু

তীব্র গরমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরো পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে গরমে অসুস্থ হয়ে নূর ইসলাম নামের এক শিক্ষকের (৭৫) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালের দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে তিনি মারা যান। নূর ইসলামের বাড়ি গোয়ালন্দ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। পরিবারের ধারণা, তিনি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

পরিবার জানিয়েছে, নূর ইসলাম সকাল ১০টার দিকে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে নিজ বাড়ির আঙিনায় লুটিয়ে পড়েন। গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. রোকনুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ভোলার চরফ্যাশনে গরমে অসুস্থ হয়ে মিরাজ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে উপজেলার আবু বক্করপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে। মৃতের পরিবার জানিয়েছে, গরমে অস্থির হয়ে মিরাজ সকাল পৌনে ১১টায় তাঁর টিনের ছাউনির ঘরে প্রবেশ করেন। মিরাজের অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত চরফ্যাশন হাসপাতাল নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, হিট স্ট্রোক শনাক্ত করতে হলে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন। তবে পরিবারের ধারণা, অতিরিক্ত গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নজির হোসেন (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালের দিকে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের রমনা ব্যাপারীপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য রোকনুজ্জামান সরকার জানান, তীব্র গরমের কারণে নজির হোসেন বারবার পানি খাচ্ছিলেন। একসময় অচেতন হয়ে পড়ে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান।

বরগুনার তালতলীতে পুকুর খননের সময় মো. নয়া মিয়া ফকির (৫০) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের খোট্টার চর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃতের ভাই সোবাহান ফকির বলেন, গরমে অসুস্থ হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার আগেই নয়া মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হিট স্ট্রোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য মারা যান। হিট স্ট্রোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে পরিবার। তূর্য শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে।

গণমাধ্যমকে তূর্যের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক আসিফ বিন আলী। তিনি বলেন, তূর্য মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নীলফামারীতে তীব্র গরমে নাকাল জনজীবন

নীলফামারীর সৈয়দপুরে গত কয়েক দিনের তীব্র গরমে মানুষের দুর্ভোগ চরমে। গতকাল সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অসহনীয় গরমের কারণে গতকাল শহরের রাস্তায় মানুষের চলাচল ছিল একেবারেই কম। কষ্ট বেড়েছে দিনমজুর ও শ্রমজীবীদের। যাত্রী কম থাকায় রিকশা ও ভ্যানচালকদের আয় কমে গেছে। স্থানীয় ১০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিনই গরমজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে। সেবা দিতে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন