যত প্রচেষ্টাই থাকুক না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে তা স্বীকার করা হয়নি। বরং মার্কিন প্রতিবেদনে অনেক বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।’
২০২৩ সালের মার্কিন মানবাধিকার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশ মুখপাত্র আরো বলেন, ‘আমাদের আকাঙ্ক্ষা যা-ই হোক না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। কারণ একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে।
বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আরো উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘সরকারের প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, বয়স্ক ব্যক্তিদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুযোগ, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সমাবেশ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
সরকারের এত অর্জন সত্ত্বেও দুঃখের বিষয় মার্কিন প্রতিবেদনে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন স্বীকার করা হয়নি। এ ছাড়া কিছু বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট, এটি পৃথক রিপোর্ট করা বা অভিযুক্ত ঘটনার রেফারেন্স দিয়ে পরিপূর্ণ নয়।’
তিনি বলেন, ‘এটিও স্পষ্ট যে প্রতিবেদনে বেশির ভাগ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি বেনামি সংস্থা থেকে অনুমাননির্ভর তথ্য নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সে কারণে প্রতিবেদনে সহজাত এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে।
’
মার্কিন প্রতিবেদনে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সে প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন। তিনি একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে।’
প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থারগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, ‘এসব অভিযোগ সঠিক নয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের তথ্য মার্কিন প্রতিবেদনে স্থান পায় না। অথচ সেই সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের জীবন ব্যাহত করে এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করে। এত কিছুর পরও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অত্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পেশাদারির সঙ্গে মোকাবেলা করেছে।’
মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘মার্কিন প্রতিবেদনটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং সংবিধিবদ্ধ কিছু সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের পূর্ণ মানবাধিকার উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থা, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতিতে আলোচনা করতে আগ্রহী।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন