সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত দিয়ে সরকারের কোটিকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অবৈধ ভাবে গরু, ঘোড়া, মহিষ, ছাগল, পাথর, কয়লা, পেয়াজ, সুপারী, কসমেটিকস, নাসির উদ্দিন বিড়ি ও চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পাচাঁরের পর বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে লাখলাখ টাকা চাঁদা উত্তোলনের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এব্যাপারে আইনগত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সীমান্ত এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারী ও চাঁদাবাজরা। আর এই চোরাচালান করতে গিয়ে গত ৩ মাসে প্রায় ২৫জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তাই এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন। খোঁজ জানা গেছে- আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ভোর রাতে উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ি, এলাকা দিয়ে চোরাচালান মামলার আসামী আইনাল মিয়া, রফ মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া, লেংড়া জামালগং ২শ টন কয়লা, ৫শ বস্তা চিনি ও পেয়াজসহ বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য পাচাঁর করেছে। একই সময় এই সীমান্তের কলাগাঁও, চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে চোরাচালান মামলার আসামী বাবুল মিয়া, সোহেল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, দীপক মিয়া ও নজির মিয়াগং গত ২দিনে প্রায় ৫শ টন কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত একাধিক ডিপুসহ বাড়িঘরের ভিতরে মজুত করেছে। এজন্য ১ বস্তা (৫০কেজি) অবৈধ কয়লা থেকে বিজিবির নামে ১শ টাকা ও অন্যান্য মালামাল থেকে বিভিন্ন হারে চাঁদা উত্তোলন করেছে সোর্স পরিচয়ধারী আইনাল মিয়া, সোহেল মিয়া ও বাবুল মিয়া। অন্যদিকে টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী আক্কল আলী ১বস্তা চোরাই কয়লা থেকে বিজিবির নামে ৫০টাকা, থানা ও সাংবাদিকদের নামে ১টন অবৈধ কয়লা থেকে ২হাজার টাকাসহ ১ ঠেলাগাড়ি চুনাপাথর (৫০ ফুট) থেকে বিজিবির নামে ১শ টাকা চাঁদা নিয়ে প্রায় ২শ মেঃটন কয়লা ও ৩শ মেঃ টন চুনাপাথর পাচাঁর করে বড়ছড়া-জয়বাংলা বাজার সংলগ্ন কাঠের ব্রিজ ও আশেপাশের একাধিক ডিপুতে মজুত করেছে। একই সময়ে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারো ছড়া, রাজাই, কড়ইগড়া ও বারেকটিলা এলাকা দিয়ে চোরাচালান মামলার আসামী শাহিবুর রহমান, কাজল মিয়া, জয়ধর মিয়া, শফিকুল, নিজাম মিয়া, নজরুল, জামাল মিয়া, হারুন, জম্মত আলীগং ৩শ মেঃ টন কয়লা, ২০টি গরু, ২শ বস্তা চিনি, ৩৫০বস্তা পেয়াজ পাচাঁর করেছে। একই ভাবে এউপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্তে দুধের আউটা, লালঘাট, লাকমা এলাকা দিয়ে গডফাদার তোতলা আজাদের নেতৃত্বে সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, হোসেন আলী, ইয়াবা কালাম ও লাউড়গড় সীমান্তে যাদুকাটা নদী, সাহিদাবাদ, দশঘর, পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারী বায়েজিদ মিয়া, জসিম মিয়া, রফিকুল, নুরু মিয়া, জজ মিয়া, মোস্তফা মেম্বারগং কয়লা, পাথর, চিনি, পেয়াজ, গরু, মদ, গাঁজা, ইয়াবা পর করে চাঁদাবাজি করলেও দেখার কেউ নাই। এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্মার কফিল উদ্দিন বলেন- সীমান্ত দিয়ে পাচাঁরকৃত প্রতি গরু থেকে ১হাজার টাকা, ১ বস্তা চিনি থেকে ১শ টাকা ও ১ বস্তা পেয়াজ থেকে ১শ টাকা ও ১ বস্তা কয়লা থেকে ৫০টাকা করে চাঁনপুর বিজিবি ক্যাম্পের নামে চাঁদা নেওয়া হয়। একারণে সীমান্ত চোরাচালান দিনদিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ধান কাটার সময় কিন্তু চোরাচালানের কারণে শ্রমিক পাওয়া যায়না। বড়ছড়া কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি কারক সমিতির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন- সীমান্ত চোরাচালান দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই চোরাচালানের কারণ আমরা প্রায় ৩হাজার বৈধ ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছি। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এব্যাপারে বারবার জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না। এব্যাপারে সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া বলেন- সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজির বিষয়ে জানাতে চারাগাঁও ক্যাম্প কমান্ডার সিদ্দিক এর সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬১৩১২৬), চাঁনপুর ক্যাম্প কমান্ডার ঈশ^র চন্দ্র পন্ডিত এর সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬১৩১২৯) সহ বালিয়াঘাট ক্যাম্পের মোবাইল (০১৭৬৯-৬১৩১২৭) ও টেকেরঘাট ক্যাম্পের মোবাইল (০১৭৬৯-৬১৩১২৮) নাম্বারে বারবার কল করার পর ফোন রিসিভ না করে তারা আমার মোবাইল নাম্বার (০১৭১৫-৬৪৩৮৮৭) বøক করে দেয়। তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন- সীমান্ত চোরাচালান বন্ধের দায়িত্ব বিজিবির। আপনারা বিজিবির সাথে কথা বলুন। এব্যাপারে জানতে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমানের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯- ৬০৩১৩০) নাম্বারে বারবার কল করলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন