তাপপ্রবাহে ৭৬ বছরের রেকর্ড, আরো দুজনের মৃত্যু

চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা ২৭ দিন ধরে বয়ে যাচ্ছে এই তাপপ্রবাহ। টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৭৬ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ সময়। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়-৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চলতি মৌসুমে এটাই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

 

গতকাল প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে কুমিল্লা ও লালমনিরহাটে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, তাপপ্রবাহ আজ শনিবারও অব্যাহত থাকতে পারে। চলতি মাসে এই অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরে ১৯৪৮ সাল থেকে তাপমাত্রার উপাত্ত রয়েছে। ২০২৩ সালে এপ্রিলের শেষ ১৮ দিন ও মে মাসের প্রথম পাঁচ দিন মিলিয়ে একটানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। চলতি বছর ৩১ মার্চ থেকে শুরু হয়ে এখনো (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত তা চলমান। সেই হিসাবে টানা ২৭ দিন ধরে চলা এই তাপপ্রবাহ বাংলাদেশের জন্য রেকর্ড।

 

১১ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত তাপপ্রবাহের বিস্তৃতি কম ছিল। তাপমাত্রা ছিল ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে। ১১ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি চলে আসে। তাপপ্রবাহের এলাকাও বেড়েছে। ১৬ এপ্রিল থেকে দেশের বেশির ভাগ অংশে তাপপ্রবাহ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

 

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ সময় তীব্র (৪০-৪১.৯ ডিগ্রি) থেকে অতি তীব্র (৪২ ডিগ্রি বা বেশি) হয়ে ওঠে। মূলত বৃষ্টির অভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ সময় পশ্চিমা বাতাসের সঙ্গে পূবালী বাতাসের সংমিশ্রণ হলে বৃষ্টি হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে এবার এই সংমিশ্রণ সেভাবে ঘটছে না। বেশির ভাগ সময় অল্প সময়ের জন্য এই সংমিশ্রণ ঘটছে সিলেট ও আশপাশে। ফলে সেখানে কিছু বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিস বলেছে, আজ সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে আগামীকাল রবিবার দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। পরদিন সোমবার দিনের তাপমাত্রা আবার কিছুটা কমতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর গরম অব্যাহত থাকতে পারে সারা দেশে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আগামী ২ বা ৩ মের দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, ২ মের দিকে সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে। 

চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন পর্যন্ত এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অঞ্চলভেদে সারা দেশে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৮ ডিগ্রি বেশি আছে।

এর আগে গত ২০ এপ্রিল চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই দিন ঢাকাতেও মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৪ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল দেশের তিন জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি) বয়ে গেছে।  তীব্র তাপপ্রবাহ অর্থাৎ ৪০ ডিগ্রি বা এর বেশি তাপমাত্রা ছিল অন্তত পাঁচ জেলায়। এ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ জেলার ওপর দিয়ে  মৃদু (৩৬-৩৭.৯ ডিগ্রি) থেকে মাঝারি (৩৮-৩৯.৯ ডিগ্রি) তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজ শনিবারও এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

গরমে রোগী বাড়ছে, দুজনের মৃত্যু

প্রচণ্ড গরমে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

কুমিল্লার দেবীদ্বারে গতকাল দুপুরে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে জালাল উদ্দিন (৬০) নামের এক কৃষক মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামে। দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বড়শালঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী জেসমিন আক্তার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিহতের নিকটাত্মীয় মো. শাহিন মিয়া জানান, জমিতে ধান কেটে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে জালাল উদ্দিনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দুপুর ১২টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

লালমনিরহাটে গতকাল সকালে ইজি বাইকচালক রাশিদুল ইসলাম (৫৩) সড়কে লুটিয়ে পড়ে মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, ‘হিট স্ট্রোকে’ রাশিদুলের মৃত্যু হতে পারে। তাঁর বাড়ি হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের খোর্দ্দ বিছনদই গ্রামে। 

চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হাসপাতালে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি রোগী রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও চিকিৎসক ও কর্মীসংখ্যা অনেক কম। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান বলেন, সামান্য এই জনবল নিয়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালের বারান্দা ও করিডরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সদর উপজেলার সুবদিয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, তাঁর শিশুপুত্র জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত। পাতলা পায়খানাও হচ্ছে। ছেলেকে হাসপাতালে এনে শয্যা না পেয়ে বারান্দায় মেঝেতে রেখেছেন। এখানেই চিকিৎসা চলছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন