তাপপ্রবাহ ও গরম এপ্রিলের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। তবে এবার তাপপ্রবাহের এলাকা ও ব্যাপ্তিকালে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাপপ্রবাহ ছড়িয়েছে দেশের তিন-চতুর্থাংশ এলাকায়।
তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১৯৪৮ সাল থেকে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, এর আগে এবারের মতো একটানা এত লম্বা সময় ধরে তাপপ্রবাহ ছিল না। দেশের তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চলে এবার তাপপ্রবাহ ছড়িয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কালবৈশাখী ও বৃষ্টির পরিমাণ কম।
ফলে গরম ও তাপপ্রবাহ বেড়েছে।’
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার এপ্রিলের প্রথম দিন থেকেই তাপপ্রবাহ থাকলেও ১১ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত গরমের তীব্রতা ও তাপপ্রবাহের বিস্তৃতি কম ছিল। ১১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহের এলাকা বাড়তে শুরু করে। ১১ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি চলে আসে।
১৬ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বেশির ভাগ অংশে।
গতকাল কিছুটা কমেছে তাপপ্রবাহের এলাকা
আগের দিনের তুলনায় গতকাল তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘তাপপ্রবাহের এলাকা কিছুটা কমেছে আজ (গতকাল)। তাপমাত্রাও কমেছে কিছুটা। কোনো কোনো অঞ্চলে ১ ডিগ্রিও কমেছে।
আগামী কিছুদিনও তাপমাত্রা এ রকমই থাকতে পারে। ২ মে থেকে দেশের অনেক জায়গায় কালবৈশাখী ও বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে তাপমাত্রাও কমতে পারে।’
এদিকে গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিনও এই জেলাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। দেশে এখন পর্যন্ত এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে রাজধানীতে আগের দিনের তুলনায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ০.৮ ডিগ্রি। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৪ ডিগ্রি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগের দিন দেশের তিন জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ থাকলেও গতকাল তা এক জেলায় নেমে এসেছে। তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল পাঁচ জেলায়। চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র এবং রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাকি জেলাগুলোতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। সেই সঙ্গে ঢাকা, বরিশাল বিভাগসহ চট্টগ্রাম বিভাগের চারটি ও রংপুর বিভগের একটি জেলায়ও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল।
আজ রবিবারও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা থাকতে পারে প্রায় অপরিবর্তিত। আগামীকাল সোমবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা উভয়ই প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় অস্বস্তিকর গরম অব্যাহত থাকতে পারে সারা দেশেই।
শুধু সিলেটে ভারি বৃষ্টি
দেশের কোথাও বৃষ্টির দেখা না মিললেও গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে এটি ভারি বৃষ্টিপাত। এ ছাড়া পাশের জেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলেও তিন মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সারা দেশে কোথাও বৃষ্টি না হলেও সিলেটে প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমা বাতাস বা লু হাওয়া আরব সাগর, পাকিস্তান, ভারত পার হয়ে রাজশাহী-খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসতে আসতে এ হাওয়া জলীয় বাষ্প হারাতে থাকে। ফলে তা গরম ও শুষ্ক হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি হওয়ার জন্য জলীয় বাষ্পসমৃদ্ধ বাতাসের প্রয়োজন। এটা থাকে মূলত দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসে।
শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘এই বাতাস বঙ্গোপসাগর থেকে এসে চট্টগ্রাম পার হয়ে সিলেটের কাছাকাছি গিয়ে আশপাশের এলাকায় পুবালি রূপ ধারণ করে। এটা পুবালি হয়ে পশ্চিমা বাতাসের সঙ্গে মেশে। যেখানেই এই দুই বাতাসের সংমিশ্রণ ঘটে, তার আশপাশেই বৃষ্টি হয়। কিন্তু দেশের পশ্চিমাঞ্চলে এবার এই সংমিশ্রণ সেভাবে ঘটছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অল্প সময়ের জন্য এই সংমিশ্রণ ঘটছে সিলেট ও আশপাশে। ফলে সেখানে প্রতিদিনই কিছু না কিছু পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২ মে তারিখের দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, ২ মের দিকে সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে।
গরমে আরো ২ জনের মৃত্যু
নাটোরের গুরুদাসপুরে চড়ক মেলা দেখতে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে সঞ্জয় কুমার সনজিৎ (৪২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি শিধুলী ঘোষপাড়া গ্রামের সুদর্শন ঘোষের ছেলে।
সনজিৎ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের শিধুলী স্কুল মাঠের মেলায় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুজাউদদৌলা বলেন, কী কারণে সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বলা মুশকিল। তবে প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের মতোই মনে হয়েছে।
গরমে অসুস্থ হয়ে নওগাঁর নিয়ামতপুরে বালাতৈড় দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক শাহাদাত হোসেনের (৪২) মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর দরগাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃতের পরিবার জানায়, জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে শাহাদাত হোসেনকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব উল আলম বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় শাহাদাত হোসেনের মধ্যে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ছিল।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন