এবার বলেন, কেমন সুখে আছেন? কাদের জন্য মানুষকে ঠকালেন? কোন আশায় রাস্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ তবুও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন?
রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।
পৃথিবীর সব আইন-আদালত ক্ষণকালের জন্য ভুলে যান! সুদ-ঘুষ খাচ্ছেন, দুর্নীতি করছেন-এতে আপনি তো বরং লাভবানই হচ্ছেন। যে মানুষ শুধু বৈধ আয়ে চলে তার চেয়ে নানান উৎস থেকে আপনার বহু রকমের আয়! হরেকরকমের শখ পূরণ করছেন, স্ত্রী'র চাহিদা মেটাচ্ছেন, সন্তানদেরকে কোন রকমের অভাব বুঝতে দিচ্ছেন না। বাইরে আপনার ব্যাপক ঠাটবাট! ভেতরেও তো সম্পদের মহাসমুদ্র! সুযোগ পেলেই দেশ-বিদেশে ঘুরছেন। যা ইচ্ছা খাচ্ছেন, মন খুলে মনের ইচ্ছা মেটাচ্ছেন! আপনি অভিজাত নগরের বাসিন্দা! আপাতত দুঃখ কী, অভাব কী-সেসবের সাথে আপনার পরিচয় নাই! মস্ত রকমের সুখেই আছেন!
দিনে দিনে বয়স বাড়ছে! ধর্মকর্ম মনে কিছুটা চাপছে! ধর্ম পালন করছেন কিংবা করছেন না এবং ঘুষ নিচ্ছেন, দুর্নীতি করছেন! সম্পদের পাহাড়ে চড়েছেন! দিন গড়াতে গড়াতে টের পেলেন স্ত্রী'র জন্য এতোকিছু করার পরেও, তার সব চাওয়া মেটানোর পরেও সে কথা শোনে না, আপনাকে মানে না! সম্মান দেয় না! তার কাছে আপনি যাচ্ছেতাই রকমের একজন! এই যে পরিবারের যাদের জন্য এতোকিছু করলেন, মানুষকে দেদারসে ঠকালেন কিংবা দিনরাত একাকার করে খাটলেন সেই খাটাখাটি বৃথাই গেলো! ঘরে আসলে সুখ নাই! বাইরে টাকায় কিছু সুখ কেনা যায় তবে তা বড্ড ক্ষণিকের! সেখানেও যা খুশি তা করতে পারেন না-সমাজের যে আপনি বিগ ফিশ! বয়সের দিকে চেয়ে দেখলেন আপনি মধ্যবয়সী এক বুড়ো! দীর্ঘশ্বাস ফেলে একবার ধিক্কার জানালেন! স্পষ্ট বোঝা গেলো না সেটা কাকে! হয়তো নারীকে! যাকে রাণীর মত রাখলেন সে এখন আপনায় দাসের মত ভজে!
সোনা বাবা ডাকতে ডাকতে যে সন্তানদেরকে বড় করে তুললেন, এবার টের পেলেন তার মদ্যপ! বহুরকম আসক্তিতে জড়িয়ে গেছে! এতোদিন টের পাননি কারণ আপনার স্ত্রী এতোদিন টাকা পয়সা দিয়ে তাদেরকে সামলাতে পারতো! ছেলেটা নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে, মেয়েটা কীসব দুঃখে যেন কয়েকবার আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে এসেছে! তাদেরকে কাছে ডাকলে পান না, আপনার কোন কথা শোনে না! আপনার সাথে সন্তানদের সম্পর্ক কেবল টাকার! চায় এবং দেন! আসক্তির রসদ জোগাড় হলেই তারা শান্তশিষ্ট থাকে! দিনে দিনে আপনার ওপর সন্তানদের টর্চার বাড়ছে! একটাও মানুষ হয়নি! আপনি সন্তানদেরকে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান! টাকায় স্ত্রী'র বিকল্প মিললেও তো সন্তানের বিকল্প মেলে না! দুশ্চিন্তায় শরীরের চেয়ে মানসিকতায় আপনি বুড়িয়ে যান!
চাকুরির শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন! যে-কোন এক অফিসের কর্তাশ্রেণির কর্মকর্তা এখন! পারিবারিক হতাশা, বয়সের লোভ, অবসরের হাতছানি কিংবা ক্ষমতা খোওয়ানোর ভয়-এসবের খপ্পরে বড় অঙ্কের অর্থ এদিক-সেদিক করেছেন! এতোদিন যাদের নিয়ে ভাগাভাগি করেছেন তারাই দুদককে জানিয়ে দিয়েছে! মিডিয়া এবং আইন-আদালত খবর দিয়েছে! এবার একটা দুইটা মামলাও হতে পারে! পেনশন আটকে যাবে কিনা, জেলে যেতে হবে কিনা সেই দুশ্চিন্তায় আপনি রোজ পেরেশান থাকেন! বাইরের দুনিয়া নানাভাবে খোঁচা দেয়! দুনিয়ার তাবৎ ব্যাধি আপনার শরীর ভাড়া নিয়েছে! অতঃপর অবসরেও গেলেন এবং পেনশনও পেলেন! এখন আর সংসারের কেউ দাম দেয় না! সেইসব দিনের মত মুঠো ভরে আনতে পারেন না যে! স্ত্রী কথায় কথায় ঝামটি মারে, সন্তানেরা বোঝা ভাবে এবং উত্তরাধিকাররা আপনার সম্পদের ভাগ পাওয়ার আশায় প্রত্যহ আপনার মৃত্যু কামনা করে! আপনার চারপাশে অনেক মানুষ কিন্তু কেউ আপনার নয়! আপনি একা!
এবার বলেন, কেমন সুখে আছেন? কাদের জন্য মানুষকে ঠকালেন? কোন আশায় রাস্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ তবুও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন? সুখে থাকার আশায় তো? কারো দীর্ঘশ্বাসের কারণ হয়ে, কারো ক্ষতি করে, কাউকে ঠকিয়ে কিংবা কারো অভিশাপ নিয়ে কি সুখী হওয়া যায়? যার সাথে এককালে রঙিন স্বপ্ন দেখতেন সেও যদি মনের ছকে আপনার না থাকে, যাদের জন্য এতোকিছু করলেন সেই সন্তান যদি মানুষ না হয় তবে বৈধ-অবৈধ পথে আয়কৃত এই বিত্তবৈভবের কী মূল্য আছে? আপনি তো সুখী হতে পারেননি। আপনি এমন সময়ে বুঝতে পারলেন যে আপনি ব্যর্থ তখন কবর ছাড়া আপনার আর কোন গন্তব্য অবশিষ্ট নাই! আপনি একজন ভয়ংকর পরাজিত মানুষ!
কোন মন্দলোকের সন্তান ভালো হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত পেতে আপনাকে রাজ্য উজাড় করতে হবে। ঘুষখোর, সুদখোর এবং দুর্নীতিবাজদের সন্তানরা নানা ধরণের কমপ্লেক্সিটিতে ভোগে, ঘোরতর অমানুষ হয়-সেসব কী আপনাকে চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিতে হবে? সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন অথচ একটা ছেলে/মেয়ে বখে গেছে-আপনার সব অর্জনের আর সিকি আনা মূল্য নাই! সম্পদের মধ্যে ডুবে থাকেন অথচ তাতে হালাল-হারামের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন, তবে আর আশাবাদী হবেন না! পয়জন যেথায় যেথায় প্রবেশ করেছে সেথায় সেথায় খেসারত দিতেই হবে! তাতে যদি আপনি দানবীর হিসেবে খ্যাত হন, পাঁচশ মসজিদের সভাপতি হন আর পঁচিশবার হজ্জ্ব-ওমরাহও করেন তাতে কোন লাভ নাই! পরের হকের ঋণ রব মাফ করার এখতিয়ার নিজের কাছে রাখেননি! দুনিয়াতেই পাপের প্রায়শ্চিত্তের এক ঝলক প্রকাশ পাবে! সমগ্র বঞ্চিতের ধিক্কারের থুতু আপনার কফিনে আসবে!
অথচ সমাজের সৎ মানুষগুলোকে দেখুন, সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারনে অতি সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন অথচ সন্তানগুলো মানুষের মত মানুষ হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিনশেষে পরম সুখেই আছে! যে পরিবারে সুসন্তান আছে সে পরিবারে প্রশান্তির নেয়ামত নাযিল হয়। হালাল রিযিক ছাড়া সুখের প্রত্যাশা করা নির্বুদ্ধিতা হবে। যে মানুষ অন্যকে ঠকায়নি, রাষ্ট্রের সাথে করা ওয়াদা ভাঙেনি এবং ন্যায়-নীতির পথ ভোলেনি সে সুখের ঠিকানাও হারায়নি। সততার পুরস্কারেই সুখ। নেককার জীবনসঙ্গী, আদর্শ সন্তান-এসব ব্যক্তি মানুষের সততার শ্রেষ্ঠ পুরুস্কার। পরকালের বৃহত্তর পুরস্কারের এক পলক দুনিয়াতেও ছাপ রাখে। ভালো মানুষের থেকে যে আলো উৎকীর্ণ হয় সে আলোতে পরিবার সুশোভিত সুখের আশ্রমে পরিণত হয়। মানসিক প্রশান্তির চেয়ে বড় আত্মতৃপ্তি আর কিছুতে নাই। সেটা সততার হাত ধরে আসে।
শুরুর কথা আবার শেষে বলি! উল্টো করে পড়ুন! সততায় স্বস্তি, অসসতায় শাস্তি!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন